জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ গণভোটে পাস হলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ কমিটিতে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যের সংখ্যা কিছু ক্ষেত্রে সমান হবে; কিছু ক্ষেত্রে সরকারি দলের প্রাধান্য থাকবে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ সদস্যের মাধ্যমে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। এর ফলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা থাকবে না।
এ ছাড়া গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে সংসদ নির্বাচনে পাওয়া ভোটের অনুপাতে (পিআর) সংসদের উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে। সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন করতে হলে ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন লাগবে। সংসদ নির্বাচনে কোনো দল ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট না পেলে উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। ফলে ক্ষমতাসীন দলের জন্য সংবিধান সংশোধন করা কঠিন হবে।
গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি যে সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেছেন, তাতে এসব বিধান রয়েছে। আদেশের মর্যাদা কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিদ্যমান সংবিধানে আদেশ জারির বিধান নেই। তবে সংসদ অধিবেশন না থাকলে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। তবে এমন অধ্যাদেশ জারি করা যাবে না, যা সংবিধানকে পরিবর্তন করে। অধ্যাদেশ আইনের সমতুল্য, যা অধিবেশন শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে সংসদে উত্থাপনের মাধ্যমে পাস করাতে হয়। এই সময়ের মধ্যে উত্থাপন না করলে অধ্যাদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়।
সরকার নির্বাহী ক্ষমতায় প্রজ্ঞাপন, বিধিমালা, নীতিমালা ও প্রবিধান জারি করতে পারে। এগুলোর মর্যাদা আইনের চেয়ে কম। গত ১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সই করা জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিলুপ্ত ঐকমত্য কমিশন সংবিধানের সমতু্ল্য আদেশ জারির সুপারিশ করেছিল। সুপারিশ অনুযায়ী এ আদেশের ওপর গণভোট হবে।
১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেছিলেন। ১৯৭৫ থেকে পরবর্তী দুই বছরে, সামরিক শাসনের সময়ে ১০ বার আদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। এসব আদেশের মাধ্যমে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ১৯৮২ থেকে পরবর্তী চার বছরে সামরিক শাসনের সময়ে আদেশ জারি করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতিরা। সামরিক শাসনে সংবিধান পুরোপুরি বাতিল না হলেও, কিছু অংশ স্থগিত ছিল।
বিদ্যমান সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান নেই। তার পরও গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তা গঠিত হয়েছে ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ে গণভোটের জন্য সরকারের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি আদেশ জারি করেছেন বলে বৃহস্পতিবারের আদেশে বলা হয়েছে। যেসব ধারা অবিলম্বে তথা আদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে জুলাই সনদ সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হবে।
কমবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা
সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বাদে রাষ্ট্রপতিকে সব কাজ করতে হয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে। ফলে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থার কথা বলা হলেও প্রধানমন্ত্রীই থাকেন সর্বেসর্বা। প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমাতে অনেক দিন ধরে আলোচনা ছিল।
অভ্যুত্থানের পর গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোও এ বিষয়ে সুপারিশ করে। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতার কারণেই স্বৈরশাসনের উদ্ভব হয়। বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে হবে।
গত জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার সংস্কার প্রস্তাব কার্যকর করেছে। ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিএনপি সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), ন্যায়পাল, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিয়োগে সাংবিধানিক কমিটি গঠনের প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) দিয়েছে। যদিও সাংবিধানিক কমিটির নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে একমত হয়েছে বিএনপি।
বিদ্যমান আইনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য চার কমিশনার নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের কারণে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের ব্যক্তিরাই নিয়োগ পান নির্বাচন কমিশনে।
জুলাই সনদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের এক বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। কমিটি যাদের নাম প্রস্তাব করবে তাদেরই নিয়োগ দিতে বাধ্য থাকবেন রাষ্ট্রপ্রধান।
পিএসসি ও সিএজিতে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। দুদকের নিয়োগ সার্চ কমিটির মাধ্যমে হলেও তা প্রধানমন্ত্রী নিয়ন্ত্রিত। সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে ন্যায়পালের বিধান থাকলেও এ পদে কখনও নিয়োগ হয়নি। ফলে সরকারের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ক্ষমতাসম্পন্ন পদটি অকার্যকর।
জুলাই সনদ অনুযায়ী পিএসসি, সিএজি, ন্যায়পাল নিয়োগ হবে সাংবিধানিক কমিটির মাধ্যমে। দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করে অনুরূপ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ-সংক্রান্ত আটটি সংস্কার প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বিএনপি ন্যায়পাল ও দুদকের নিয়োগে আইন করার প্রস্তাব দিয়েছে। পিএসসি এবং সিএজির নিয়োগে বিদ্যমান ব্যবস্থা তথা প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায়। বিএনপি বলছে, এসব প্রতিষ্ঠানে সাংবিধানিক কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হলে তা নির্বাহী বিভাগ তথা সরকারকে দুর্বল করবে। জামায়াত, এনসিপিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এসব সংস্কার প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে।
তবে সনদ বাস্তবায়ন আদেশের গণভোটে থাকছে না নোট অব ডিসেন্ট। আদেশে বলা হয়েছে, চার বিষয় নিয়ে একটি প্রশ্নে হবে গণভোট। প্রথম বিষয় হলো, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।’ আদেশ অনুযায়ী, গণভোটে হ্যাঁ জয়ী হলে সনদ অনুযায়ী নিয়োগ কমিটি গঠন করবে আগামী সংসদের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ।
নিয়োগ কমিটিতে কারা থাকবেন
সনদে বলা হয়েছে, ন্যায়পাল নিয়োগ হবে সাত সদস্যের কমিটির মাধ্যমে। এর মধ্যে দুই সদস্য হবেন সরকারি দলের– স্পিকার ও সংসদ নেতা। স্পিকার হবেন কমিটির সভাপতি। তিন সদস্য হবেন বিরোধী দলের– ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা ও দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি। কমিটির অন্য দুই সদস্য হবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি মনোনীত একজন করে প্রতিনিধি। রাষ্ট্রপতি সরকারি দলের হলে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীদের সমতা থাকবে কমিটিতে।
সনদে বলা হয়েছে, পিএসসিতে নিয়োগ হবে সাত সদস্যের কমিটির মাধ্যমে। এর মধ্যে দুই সদস্য হবেন সরকারি দলের– স্পিকার ও সংসদের চিফ হুইপ। স্পিকার হবেন কমিটির সভাপতি। তিনজন সদস্য হবেন বিরোধী দলের– ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি। কমিটির অন্য দুই সদস্য হবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং শিক্ষা অথবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি।
সনদ অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদে এমপির সংখ্যানুপাতে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে বণ্টন হবে। জনপ্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো কমিটির সভাপতি পদ সরকারি দল যদি বিরোধী দলকে দেয়, তবে পিএসসির নিয়োগ কমিটিতে বিরোধী দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। নয়তো সরকারি দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে।
সনদে বলা হয়েছে, সিএজি নিয়োগ হবে সাত সদস্যের কমিটির মাধ্যমে। এর মধ্যে দুই সদস্য হবেন সরকারি দলের– সংসদ উপনেতা ও চিফ হুইপ। দুই সদস্য হবেন বিরোধী দলের– ডেপুটি স্পিকার ও বিরোধীদলীয় উপনেতা। ডেপুটি স্পিকার হবেন কমিটির সভাপতি। বাকি তিন সদস্য হবেন– জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সরকারি হিসাব-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। সনদ অনুযায়ী সরকারি হিসাব-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ পাবে বিরোধী দল। ফলে এ কমিটিতে চার সদস্য হবেন সরকারি দলের এবং তিনজন বিরোধী দলের।
সনদে বলা হয়েছে, দুদকে নিয়োগ হবে সাত সদস্যের কমিটির মাধ্যমে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। বাকি পাঁচজন নিরপেক্ষ– আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি, হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি, সিএজি ও পিএসসি চেয়ারম্যান এবং প্রধান বিচারপতি মনোনীত একজন। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হবেন কমিটির সভাপতি।
সংবিধান সংশোধন কঠিন হবে
পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনেও নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে বিএনপির। কিন্তু জামায়াতসহ অন্যান্য দলের দাবি ছিল– উচ্চকক্ষে পিআর হতে হবে। সনদ বাস্তবায়ন আদেশে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট উপেক্ষা করা হয়েছে। গণভোটের বিষয়বস্তু সম্পর্কে এতে বলা হয়েছে, আগামী সংসদ হবে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদেস্যের উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। আদেশের ১৩(২) ধারায় বলা হয়েছে, সংস্কার বাস্তবায়নের ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠন সম্পন্ন হবে।
অতীতে নির্বাচনে ৪০ থেকে ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকারি দলের সংসদে দুই শতাধিক বা দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাওয়ার নজির রয়েছে, যা সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দেয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ক্ষমতা প্রয়োগ করে দলগুলো ইচ্ছামাফিক সংবিধান সংশোধন করায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটগুলোর উদ্ভব। যেমন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪৮ শতাংশ ভোটের মাধ্যমে সংসদে ২৩২ আসন পায়। এর জোরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে, যা পরে স্বৈরশাসনের পথ খোলে।
এ অভিজ্ঞতায় সনদে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো সংসদ নির্বাচনে যত শতাংশ ভোট পাবে, উচ্চকক্ষে তত শতাংশ আসন পাবে। সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের ৫১ সদস্যের সমর্থন লাগবে। ফলে ভবিষ্যতে কোনো সরকারি দল নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে বা উচ্চকক্ষে অন্য দলের সমর্থন না পেলে সংবিধান সংশোধন করতে পারবে না।
তবে উচ্চকক্ষ সরকারের কাজে বাধা তৈরি করতে পারবে না। সরকার গঠিত হবে সরাসরি নির্বাচিত নিম্নকক্ষের সদস্যদের (এমপি) ভোটে। নিম্নকক্ষ বর্তমান পদ্ধতিতেই বাজেট প্রণয়ন এবং তা অনুমোদন করবে। তা উচ্চকক্ষে যাবে না। অর্থবিলেও উচ্চকক্ষের অনুমোদন লাগবে না। নিম্নকক্ষে পাস হওয়া অন্যান্য আইনের বিল উচ্চকক্ষ দুই মাসের মধ্যে অনুমোদন দেবে। নইলে পাস বলে গণ্য হবে। উচ্চকক্ষ আইন প্রণয়ন করতে পারবে না। তবে আইন করার জন্য নিম্নকক্ষকে প্রস্তাব করতে পারবে। শুধু সংবিধান সংশোধন বিলে উচ্চকক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
আরও যেখানে কমছে ক্ষমতা
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে আস্থা ভোট এবং বাজেট ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে দলীয় এমপিদের ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কিছুটা কমবে। সনদে বলা হয়েছে, কেউ জীবনে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না। বিএনপিসহ প্রায় সব দল এই দুই সংস্কারে একমত।
সনদে প্রস্তাব করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান পদে থাকতে পারবেন না। এই প্রস্তাবে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। তবে প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। আদেশের ঘ অনুযায়ী এটিসহ ১০টি সংস্কার প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা যাবে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর দলীয় প্রধান হওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।
সনদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়াই রাষ্ট্রপতি চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর এবং এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে নিয়োগ দিতে পারবেন। এটি বাস্তবায়নও রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ওপর ছাড়া হয়েছে গণভোটে।