Nazmul Ahasan (নাজমুল আহসান)
বিবিসির মহাপরিচালক ও হেড অব নিউজ পদত্যাগ করেছেন। চোখে পড়েছে আপনাদের সকলের, সাংবাদিক ভাইলোগ? কেন করেছে সেটা পড়ে দেখেছেন? না দেখে থাকলে বলি: কারণ টেলিগ্রাফ পত্রিকায় খবর আসে যে, বিবিসির অনেক বছর আগের একটা ডকুমেন্টারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটা কোট মিসলিডিং উপায়ে জোড়াতালি দেয়া হয়েছিল। ব্যাস, এতটুকুই।
বিবিসি প্রতি বছর এমন শ’ খানেক ডকুমেন্টারি ছাপায়, ইফ নট মোর। এদের প্রত্যেকটা লাইন বা বাক্য বিবিসির প্রধান বা বার্তা প্রধান নিশ্চয়ই পড়ে দেখেন না। বা যাচাই করে দেখেন না। অন্য কেউ নিশ্চয়ই করেন। কিন্তু প্রধানের তো করার সুযোগ হয় না। কিন্তু তারপরও এগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠায় তারা পদত্যাগ করেছেন। একটা কোট গরমিলের কারণে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় নাই। তারপরও তারা দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। এগুলো মাথায় রাইখেন।
চিন্তা করে দেখেন! একটা কোট! এরকম হাজার হাজার কোট আপনারা প্রতি ঘণ্টায় মিস্লিড করে ফেসবুক কার্ড আকারে ছাড়েন। প্রতি দিন আপনারা যাচাই-বাছাই না করে থানা প্রতিনিধির পাঠানো বালছাল ছাপায় দেন পত্রিকায় আর টিভি স্টেশনে। কোনটা মানহানি, কোনটা কী, কোনো বোদার করেন না আপনারা। কারেকশনের প্র্যাকটিস নাই। সরাসরি আর্টিকেল রিমুভ করে ফেলেন কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া।
যারা খেটেখুটে রিপোর্ট বের করে, মুহূর্তের মধ্যে ছো মেরে সেটা চুরি করে নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেন। সরকারি সাবসিডিতে নিউজপ্রিন্ট এনে সেটা অন্য জায়গায় প্রফিটে বিক্রি করেন। সার্কুলার ১০ গুণ বাড়িয়ে দেখিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপন মারেন। নিজের অধিকতর প্রাপ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর হক মারেন। মাঝে মাঝে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোর্টকে টাকা দিয়ে এক্সক্লুসিভ বিজ্ঞাপন ছাপানোর কন্ট্রাক্ট করে আসেন।
লোকজনকে বেতন দেন না। এরপর আপনাদের রিপোর্টাররা মিলে সিন্ডিকেট বানায়। এরপর সিন্ডিকেট করে রিপোর্ট ছাড়ে বা রিপোর্ট প্রকাশ বন্ধ রাখে। শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে জ্বালানি, পাঠ্য পুস্তক কোম্পানী, সচিবালয়, আইটি — কোন বিট থেকে আপনারা টাকা না খাওয়া বন্ধ রাখছেন? হয় বিদেশ ভ্রমণ, নয় বিজ্ঞাপন, নয় অ্যাসোসিয়েশনের অফিস নির্মাণ, ইভেন্ট, নয়তো পুলিশের দালালি, তদবির, নতুবা সরাসরি চাঁদাবাজি কিংবা ঘুষ!
আচ্ছা, এথিক্যাল ইস্যু বাদ দিলাম।
কোন বক্তব্য কাউকে অ্যাট্রিবিউট করে লিখতে হয়, সেটা আপনাদের কপিতে বোঝা যায় না: মনে হয় বক্তব্যটা আপনারই। আরে বাদ দেন এতকিছু: আপনারা তো শালার উদ্ধৃতচিহ্ন ব্যবহারেরই ধার ধারেন না। সব প্যারাফ্রেইজ করে দেন নিজের মন মতো। আপনাদের সাংবাদিকরা প্রতিদিন টক শোতে আর ফেসবুকে কোনো না কোনো পক্ষের মুন্ডুপাত করেন। অপিনিয়ন ছাড়া, নিউজরুমে থাকলে যে এসব করা যায় না, সেটার ধার ধারেন না। অনেকে আউটরাইট ফেইক নিউজ নিজে লিখেন, না লিখলে অন্যদেরটা ছড়ান। ম্যাসাকার করতে বলেন সরকারকে, নয়তো ডিনায়ালে থাকেন। ক্যু করতে উস্কানি দেন। অসৎভাবে কমেন্টারি লিখেন। কোনটা ফেইক নিউজ, কোনটা মিসইনফর্মেশন, কোনটা গাঁজাখুরি গল্প — এগুলোর পার্থক্য নির্ণয় করার মতো ন্যূনতম ক্রিটিক্যাল থিংকিং-এর সামর্থ্যটা পর্যন্ত নাই।
সেই আপনিই আবার ফেসবুকে পশ্চিমা মিডিয়ার মুন্ডুপাত করবেন! ভাবখানা এমন যে আপনার থেকেই দুনিয়ার তাবৎ সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা শিখতে হবে।
***
বিবিসির কান্ডে ফেরত যাই।
এই ঘটনায় সরাসরি হোয়াইট হাউজের প্রেস পোডিয়াম থেকে বিবিসিকে বলা হয়েছে “এক শ’ ভাগ ফেইক নিউজ”। ব্রিটেনে একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।
তারপরও সেখানে অন্যান্য সাংবাদিকরা ট্রাইবাল আচরণ করে বলে নাই যে, রাষ্ট্রীয় বা সরকারি নিপীড়ন চলতেছে বিবিসিতে। বরং বিবিসির এই খবরটা এসেছে টেলিগ্রাফে, আরেকটা পত্রিকায়। আর আপনারা সিন্ডিকেট করে একে অপরজনের ব্যাপারে কিছু লিখেন না।
এগুলো খেয়াল রাইখেন কিন্তু। স্বাধীনতা আপনি ততক্ষনই ডিজার্ভ করেন, যতক্ষণ আপনি দায়িত্বশীল আচরণ করেন। সরকারও একটা পার্টি। সরকারের সঙ্গেও আপনাকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। আপনি সাংবাদিক হয়ে ম্যাসাকারের সাফাই গাইবেন, সেটা স্বাধীনতা না। এগুলোর জন্য উন্নত দেশেও জেলে যাইতে না হলেও, চাকরি তো বটেই, আপনার যেকোনো ধরনের জীবিকা অর্জনকেই অসম্ভব করে দেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। স্বাধের বাংলাদেশেই খালি আপনাদের অ্যাবসিলিউট স্বাধীনতা দরকার। কোনো জবাবদিহিতা নাই, স্বচ্ছতা নাই, কোনো রিস্ক নেয়ার দরকার নাই; নিজের ইচ্ছা মতো যা মনে আসে, তা উগরে দিতে পারতে হবে। এই এক অদ্ভুত কালচার এই দেশে তৈরি করা হয়েছে।
