Image description

ছেলে ফয়সাল আহমেদ শান্তকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানোর স্বপ্ন ছিল বলে জানিয়েছেন শহীদের মা কহিনুর আক্তার। বলেছেন, স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় অ্যাওয়ার্ড নিয়ে আসবে, আমি সেরা মা হব। কিন্তু আল্লাহ আমাকে শহীদের মা হিসেবে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর চীন-মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদের (স.) প্রতি দরুদ পাঠ করে শহীদ জননী বলেন, ‘আজ দুর্বার নেতৃত্বে গড়ি স্বপ্নের ক্যাম্পাস শীর্ষক কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচিত প্রতিনিধি সংবর্ধনা-২০২৫ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আমি যেমন গর্বিত, তেমনি গভীরভাবে আবেগ আপ্লুত। এই শিরোনামটি শুনলে আমার ছেলে ফয়সাল আহমেদ শান্তর কথা মনে পড়ে যায়। শান্ত স্বপ্ন দেখত এমন এক দেশ ও সমাজের, যেখানে মতের ভিন্নতা থাকবে, কিন্তু শত্রুতা নয়। যেখানে নেতৃত্ব মানে হবে সেবা, সাহস আর সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো। সে একটি সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখত। সে চেয়েছিল এদেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হোক। প্রতিটি যুবকের মেধা ও শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন হোক। সে বিশ্বাস করত একজন সত্যিকারের তরুণ নেতা তার দেশের মানুষের পাশে থাকবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে আর ন্যায়ের জন্য কথা বলবে। সেই বিশ্বাসে জুলাই বিপ্লবে সে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছে, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম ভয় নয়- স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে।’

কহিনুর আক্তার বলেন, ‘আজ তোমাদের এই নবনির্বাচিত নেতৃত্ব দেখে আমি মনে করি শান্তর স্বপ্ন ব্যর্থ যায়নি। তোমরাই সেই দুর্বার নেতৃত্ব, যারা ন্যায়, ভালোবাসা ও মানবিকতার ভিত্তিতে স্বপ্নের সমাজ ও ক্যাম্পাস গড়ে তুলবে। আমার সন্তানকে আমি হারিয়েছি, কিন্তু তার আদর্শ আজও বেঁচে আছে তোমাদের হৃদয়ে, তোমাদের কাজের ভিতরে। আল্লাহ যেন তোমাদের সঠিক পথে রাখেন, সাহস ও প্রজ্ঞা দান করেন এই দোয়া করি। আর আমার ছেলের আত্মা যেন শান্তি পায়, এই ভেবে যে দেশের তরুণরা এখনো জেগে আছে। স্বপ্ন দেখে এগিয়ে যাই। তোমরা আমার শান্তমনির জন্য দোয়া করো, আল্লাহ যেন তার শাহাদাত কবুল করে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করেন।’

শান্তকে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় পাঠানোর ইচ্ছা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান শান্তমনিকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য আমি বিদেশে পাঠাবো লেখাপড়া করার জন্য। লেখাপড়া শিখে সে বড় একটা অ্যাওয়ার্ড নিয়ে আসবে। আমি সেখানে সেরা মা হব। আল্লাহ তায়ালা আমার সেই স্বপ্ন এভাবে পূরণ করবে আমি তো কল্পনাও করি নাই। আল্লাহ তায়ালা আমাকে একজন শহীদের মা হিসেবে এত বড় অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। আল্লাহর ফয়সালায় চূড়ান্ত ফয়সালা। আমরা তার ফয়সালায় শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ। এটা ভেবে মনকে এখন সান্ত্বনা দিই। হয়তো তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমি আর উপযুক্ত ছিলাম না। আল্লাহ তায়ালা তার জিম্মায় নিয়ে গেছেন।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহীদের মা বলেন, ‘আগে অনেক স্বপ্ন ছিল আমার একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার। এখন আর একটা মুহূর্তও আমার আর বাঁচতে চায় না। আবারও সবার কাছে শান্ত মনির জন্য দোয়া চেয়ে বিদায় নিচ্ছি। সবাই শান্ত মনির জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তার শাহাদাত কবুল করে।’

ফয়সাল আহমেদ শান্ত চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ শাখা শিবিরের স্কুল পশ্চিম ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। তিনি নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজে অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যয়ন করছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের সূচনালগ্নে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিকেলে নগরের মুরাদপুর এলাকায় ছাত্রলীগের হামলায় গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।