বিদেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্য পাড়ি জমানোর পর অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রবাসী বাংলাদেশীরা মারা যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এসব লাশ দূতাবাসের মধ্যস্থতায় দেশে পাঠানো হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে লাশ দেশে আনা হচ্ছে।
এসব মৃত প্রবাসীর লাশ দেশে আসার সাথে সাথে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাশ পরিবহন ও যাতায়াত খরচের জন্য ৩৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে স্বজনদের। পরবর্তীতে তদন্ত করে মৃতের বৈধ ওয়ারিশদের আর্থিক টাকা প্রদান করা হচ্ছে।
গত বছর সৌদি আরব, ওমান, কাতার, মালয়েশিয়া, দুবাই, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে থেকে প্রায় পাঁচ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীর লাশ দেশে আনা হয়েছে। আবার অনেক প্রবাসীর লাশ আইনি জটিলতার কারণে বিদেশের হাসপাতালের মরচুয়ারিতেই মাসের পর মাস পড়ে থাকছে। সেই লাশগুলো দেশে আনতে স্বজনদের দৌড়ঝাঁপের যেন শেষ নেই।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে ২০২৪ সালে দেশে প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীর লাশ আসার পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার পর নানা কারণে মারা গেছেন- এমন ৪ হাজার ৮৩১ জন বাংলাদেশীর লাশ দেশে আনা হয়েছে। এসব লাশ আসার পর বিমানবন্দরে প্রত্যেক লাশের বিপরীতে লাশ পরিবহন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে। সেই হিসাবে ২০২৪ সালে লাশ পরিবহন খাতে ১৬ কোটি ৮৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নিহতের পরিবারকে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অসুস্থ প্রবাসীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসা বাবদ ৭২২ জনকে মোট ৭ কোটি ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে বিদেশে মারা যাওয়া ৪ হাজার ৭৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীর ওয়ারিশদেরকে কল্যাণ বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ৩ লাখ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। সেই হিসেবে ১২১ কোটি ৪৮ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ টাকা দেয়া হয়েছে। অপর দিকে দুই হাজার ৯৪০ জনকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৮৬ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। সবগুলো টাকাই চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কাছে প্রতিদিন বিদেশে সড়ক দুর্ঘটনা, হার্ট অ্যাটাকসহ নানা কারণে মারা যাওয়া প্রবাসীদের লাশ দ্রুত দেশে আনার জন্য স্বজনদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হচ্ছে। এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই লাশ আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে কল্যাণ বোর্ড থেকে নিজ নিজ দেশের দূতাবাস/হাইকমিশনে চিঠি দেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে বাংলাদেশী পরিচয় নিশ্চিত হওয়া এবং মৃত্যুর কারণ জানার পর নিহতের লাশ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। আবার যারা বিদেশে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাদের চিকিৎসায় সহায়তা দেয়ার জন্য প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আবেদন জমা পড়ছে।
তবে বিদেশে মৃত্যুবরণকারী প্রবাসী অনেক বাংলাদেশীর লাশ এখনো আইনি জটিলতার কারণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে কারো কারো লাশ ওই সব দেশেই দূতাবাস থেকে নিহতের স্বজনদের অনুমতি নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।