Image description

ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের নিজকুঞ্জরা গ্রামে ফেসবুকে মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মহিপাল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাহাত উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে এ হামলায় অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। 

রবিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে নিজকুঞ্জরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন-জাহিদুল ইসলাম সামীম, ইমরান হোসেন, আরমান হাসান, রাফি, আরাফাত ও অনিক।আহতরা সকলে নিজকুঞ্জরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে আহতরা তাদের এক বন্ধুর জন্মদিন অনুষ্ঠানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দিলে সেখানে ছাত্রদল নেতা রাহাতের ছোট ভাই নিজকুঞ্জরা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহাদ হোসেন আপত্তিকর মন্তব্য করেন। রোববার দুপুরে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করলে ফাহাদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে ফাহাদ তার বড় ভাই রাহাতকে ফোনকলে বিষয়টি জানান। একপর্যায়ে রাহাত তার সহযোগীদের নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ছুরি, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায়ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে ঘটনার পর সন্ধ্যায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা ও উভয়পক্ষের অভিভাবকরা বৈঠক করেন। সেখানে প্রত্যেক আহতকে ১০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা খরচ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং থানায় অভিযোগ না দেওয়ার শর্তে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সভায় উপস্থিত এক অভিভাবক বলেন, সভায় আমাদের বলা হয়েছে এটি যেহেতু বিদ্যালয়ের ভেতরের বিষয় তাই যেন কোনো মামলা না করি। সভায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পুলিশ, বিএনপি নেতা ও ছাগলনাইয়া উপজেলা ছাত্রদল নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মামলা না করে ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা বাবদ ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে তারা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী সামীম বলেন, আমরা শুধু জানতে চেয়েছিলাম কেন ফেসবুক কমেন্টে বাজে মন্তব্য করেছিল। এর মধ্যে বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যাওয়ার পর রাহাত ও ফাহাদসহ কয়েকজন ছুরি-চাপাতি নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। সেখান থেকে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে বারৈয়ারহাট কমফোর্ট হাসপাতালে ও পরে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, বিদ্যালয়ের ভেতরে সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষার্থীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটনাটি ঘটে। উভয়পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে পুলিশ কর্মকর্তা এসে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন। ফাহাদের বিষয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্ত নেবেন। ভুক্তভোগীদের টাকা দেওয়ার শর্তে মীমাংসার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসব অবগত নয় বলে মন্তব্য করেন।
 
অভিযুক্ত মহিপাল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাহাত উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি সমাধান হয়েছে। ঘোপাল তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক উপস্থিত থেকে মীমাংসা করে দিয়েছেন। তারা সবাই ছোট ছেলে। নিজেদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও মনোমালিন্য হয়েছে, অন্য কিছুনা। আমার নেতৃত্বে কোনো কিছু হয়নি, আমি একাই বিদ্যালয়ে গিয়েছি। 

ফেনী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন বলেন, ঘটনাটি এখনো অবগত হইনি। তবে এমন কিছু ঘটলে অবশ্যই সাংগঠনিক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঘোপাল তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লুৎফুল কবির বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া মীমাংসার চেষ্টার বিষয়টি আমার জানা নেই। শিক্ষকরা যদি এমন কিছু করে তাহলে সেটি তাদের নিজস্ব বিষয়।