Image description

বাংলাদেশ সফররত পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যানের সাথে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ছবি ঘিরে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে নানা আলোচনা দেখা যাচ্ছে।

সাক্ষাতের সময়ের অধ্যাপক ইউনূস পাকস্তানি জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার হাতে একটি স্মারক তুলে দিচ্ছেন, যাতে একটি মানচিত্র দেখা যাচ্ছে - আর সে মানচিত্রে 'ভারতীয় ভূখণ্ডের একটি অংশকে বাংলাদেশের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত করে দেখানো হচ্ছে' বলে দাবি করা হচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।

গত দুই দিনে ইন্ডিয়া টুডেসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পর মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের প্রেস উইং থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবিকে 'সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত' বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

একই সাথে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন দেয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি চিত্রের একটি সংকলন 'দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ' পাকিস্তানের জেনারেলকে উপহার দিয়েছেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই খবরগুলো নিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা আলোচনা দেখা যাচ্ছে।

ইন্ডিয়া টুডে, ইকনোমিকস টাইমস, দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য প্রিন্ট কিংবা আনন্দবাজার পত্রিকার মতো পরিচিত গণমাধ্যমগুলোতে গত দুই দিনে এ নিয়ে নানা খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের তথ্য যাচাই করে বিবৃতি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

ছবির উৎস,CA Press Wing Facts/FACEBOOK

ছবির ক্যাপশান,ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের তথ্য যাচাই করে বিবৃতি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে কী বলা হয়েছে?

ভারতের ইন্ডিয়া টুডে, হিন্দুস্তান টাইম কিংবা আনন্দবাজার পত্রিকা যে খবর প্রকাশ করেছে সেখানে অধ্যাপক ইউনূস পাকিস্তানের জেনারেল মির্জার হাতে উপহারের বইটির ছবিটি ছেপেছে।

সোমবার ২৭শে অক্টোবর ইন্ডিয়া টুডে'তে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন, যেখানে বাংলাদেশের পতাকায় ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

একই দিন আনন্দবাজার পত্রিকাও প্রায় একই রকম একটি খবর প্রকাশ করে।

'বাংলাদেশ কি ফের ভারতীয় ভূখণ্ড নিজেদের দিকে টেনে দেখাতে চাইল? বইয়ের প্রচ্ছদের নকশা ঘিরে বিতর্ক' শিরোনামে প্রকাশিত খবরে আনন্দবাজার পত্রিকা প্রশ্ন তুলেছে- 'ভারতীয় ভূখণ্ডের একটি অংশকে কি নিজেদের দিকে টেনে দেখানোর চেষ্টা করল বাংলাদেশ?

প্রায় একই রকমভাবে অন্য যে সংবাদ মাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করেছে, সেখানে দাবি করা হয় - ওই মানচিত্রের মাধ্যমে আসামসহ ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তবে এ নিয়ে নয়াদিল্লী যে এখনও কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে ওই সংবাদে।

ঘটনাটা যেখান থেকে আলোচনায়

শনিবার বাংলাদেশ সফররত পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

সেসময় তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনাও করেন।

অধ্যাপক ইউনূস এবং জেনারেল মির্জার মধ্যে সাক্ষাতের সময়কার ছবিগুলো পরের দিন অর্থাৎ ২৬শে অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশ করা হয়।

সেখানে মােট চারটি ছবি ছিল।

তার একটি ছবিতে দেখা যায়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পাকিস্তানের জেনারেল মির্জার হাতে একটি উপহারের বই তুলে দিচ্ছেন।

বইটি মূলত: বাংলাদেশে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে এবং সরকার পতনের পর ঢাকার দেওয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি নিয়ে প্রকাশিত 'দ্য আর্ট অফ ট্রায়াম্ফ‍'।

একই সাথে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়- এর আগেও প্রধান উপদেষ্টা 'দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ' জাতিসঙ্ঘ প্রধান, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

ছবির উৎস,Chief Adviser GOB/FACEBOOK

ছবির ক্যাপশান,জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

যা বলছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ভারতীয় গণমাধ্যমে এই খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বিবৃতি দেয় প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইং।

ফেসবুকে 'সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস' পেজ থেকে মূলত: প্রধান উপদেষ্টা কিংবা বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত যেসব খবর প্রেস উইং ভুল বা অসত্য তথ্য বলে মনে করে সেসব খবর বিশ্লেষণ করে বিবৃতি দিয়ে থাকে।

সোমবার রাত ও মঙ্গলবার সকালে 'সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস' ফেসবুক পেজ থেকে দুইটি পোস্ট করে। সেখানে ভারতীয় গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রকাশিত খবরগুলোও বিশ্লেষণ করেছে।

বিবৃতিতে বলেছে- ভারতীয় গণমাধ্যমে ইন্ডিয়া টুডের ওই দাবি 'সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত'।

সেখানে বলা হয়- মূলত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন দেয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় গ্রাফিতি চিত্রের একটি সংকলন 'দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ' পাকিস্তানের জেনারেলকে উপহার দিয়েছেন।

এটি গণঅভ্যুত্থানের উপর রচিত একটি সচিত্র দলিল। এর মধ্যে সংকলিত হয়েছে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ঐতিহাসিক চিত্র। সংকলনটি প্রকাশ করেছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়- 'গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে'।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায় - ওই বইয়ের প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে।

কিন্তু ভারতের উত্তর পুর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা 'সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত'।

বিবৃতিতে বলা হয়- বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।