বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে ৫৫ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে গৃহকর্মী হালিমা আক্তার। দুদিনের রিমান্ডেও ছিল মেয়েটি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে তার বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে। জন্মসনদে বয়স ১৫ বছর হলেও হালিমার বিচারকাজ চলছে প্রাপ্তবয়স্ক ধরে।
শিশু আইন অনুযায়ী, পুলিশি হেফাজতের পরিবর্তে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখার নির্দেশনা থাকলেও নেই রিমান্ডের বিধান। যদিও হালিমার বেলায় মানা হচ্ছে না আইন।
পুলিশের দাবি, হালিমার বয়স ১৮। কিন্তু জন্মসনদ ও বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার খাতায় তার বয়স ১৫ বছর। এছাড়া পুলিশ প্রতিবেদনের সঙ্গে মিল নেই জন্মসনদ ও বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার খাতায় দেয়া বাবা-মায়ের নামেরও।
উভয়পক্ষের দাখিলকৃত নথিপত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে হালিমার বয়স নির্ধারণের আদেশ দিয়েছেন আদালত। কিন্তু প্রতিবেদন দাখিল না করায় কারাগারের চার দেয়ালে হালিমার আরও এক মাস হারিয়ে গেছে।
হালিমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম সবুজ খান বলেন, ‘এফআইআরে মেয়েটির বাবা-মায়ের নাম একরকম, পুলিশ ফরওয়ার্ডিংয়ে অন্যরকম এবং রিমান্ড প্রতিবেদন আরেরকম। বাবা-মায়ের ভিন্ন নাম নিয়ে আদালত বিব্রতবোধ করেন।’
বয়স নিশ্চিত না হয়েই রিমান্ডের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী জোনের ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ তানভীর তুষার বলেন, ‘আপনার কাছে শুনতে হবে কীভাবে রিমান্ড চাইতে হবে। মামরার বাদী নামের পাশে যে বয়স দিয়েছে, আমি সেভাবেই কাজ করবো। আদালত নিশ্চিত হয়ে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন। আমি কী আমার ইচ্ছেমতো রিমান্ড আনতে পেরেছি।’
বয়স নিশ্চিত না হয়েই রিমান্ড আবেদন এবং তা মঞ্জুর করাকে দায়িত্বে গাফিলতি বলে মন্তব্য করেন আইন বিশেষজ্ঞ। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেন, ‘রিমান্ড মঞ্জুরের আগে তার বয়স নিয়ে চিন্তা করা দরকার ছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
শিশু অধিকারকর্মী ওয়াহিদা বানু বলেন, ‘আমরা এমন কিছু যাতে না করি, শিশুটা বড়দের সম্পর্কে একেবারে একটা খারাপ ধারণা নিয়ে থাকবে। সমাজ সম্পর্কে একটা খারা ধারণা নিয়ে থাকবে। মনে করবে এই রাষ্ট্র তো আমাকে সর্বোত্তম যে স্বার্থ, তা রক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থাই করলো না।’
বিচারিক কাজে শিশু সংক্রান্ত প্রশ্ন উঠলে তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
মামলার অভিযোগে থেকে জানা যায়, গত ২৯ মে রাতে মামলার বাদী জমি কেনার করার জন্য ব্যাংক থেকে ৫৫ লাখ টাকা তুলে বাসার বক্স খাটের নিচে লাগেজের ভেতরে রাখেন। গত ৩০ মে সকাল ৯টায় আসামিরা বাদীর বাসায় কাজ করতে আসেন। আসামিরা ঘরের কাজ শেষ করে বাদীকে না জানিয়ে দ্রুত চলে যান। সেদিন জমি কেনার জন্য টাকা বের করতে গেলে টাকাগুলো আর সেখানে পাওয়া যায়নি। এরপর ঘরের আশপাশের সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও টাকাগুলোর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
একপর্যায়ে বাদী জানতে পারেন আসামিরা ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ব্লক-এ, রোড-১৪, বাসা-৩২৭ এর ষষ্ঠ তলার বেডরুমের খাটের নিচে থাকা লাগেজ থেকে নগদ ৫৫ লাখ টাকা চুরি করে। এরপর আত্মগোপন চলে যায়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে সাদিয়া আক্তার সাথী ভাটারা থানায় মামলাটি করেন।