রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় মার্কিন ডলারের বাজারে । টাকার বিপরীতে বাড়তে থাকে ডলারের দাম , ক্ষয় শুরু হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে । ২০২৪ সালের আগস্টে যখন শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে, সেই মাসে রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে । গণ - অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভের এমন বিপজ্জনক পতন ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেয় । ফলে ১৪ মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে অন্তত ৭ বিলিয়ন ডলার ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন , গত বছরের জুলাই - আগস্টের অভ্যত্থানে সরকার বদলের পর দেশে ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করে । এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিথ্যা ইনভয়েসিং বন্ধ , হুন্ডির মাধ্যমে পাচার রোধ , দক্ষ জনবল পাঠিয়ে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং বিক্রির পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় এবং অধিক বিদেশি ঋণছাড়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয় । এতে ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে রিজার্ভ ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড . জাহিদ হোসেন বলেন , অন্তর্বর্তী সরকার ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে নানা উদ্যোগ নেয় । বাজার মনিটরিং করে আমদানি - রপ্তানি বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণা বন্ধ করে ডলার পাচার ঠেকানো হয় । হুন্ডিতে লেনদেনও কমেছে অনেক । কারিগরি ও ভাষার দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স বেড়েছে । এতে রিজার্ভ বেড়েছে , যা অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে , গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার । সর্বশেষ গতকাল দেশের মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার । যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ( আইএমএফ ) হিসাবে বিপিএম -৬ অনুযায়ী এদিন রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার । আর নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার । সেই হিসাবে মাত্র ১৪ মাসের কম সময়ে রিজার্ভ বেড়েছে ৭ বিলিয়ন ডলার ।
রিজার্ভ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা ড . সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন , ‘ নানামুখী উদ্যোগের ফলে এখন রপ্তানি ভালো । প্রবাসী আয়েও জোয়ার দৃশ্যমান । আইএমএফ , এডিবি ও বিশ্বব্যাংক থেকেও তুলনামূলক বেশি অর্থ পাওয়া গেছে । ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এখন “ডলার নেই” এমন অভিযোগ আসছে না । আমরা যখন বিনিময় হার উন্মুক্ত করি (ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া) , তখন আমাদের অনেক টেনশন ছিল , হঠাৎ কী না কী হয় ! কিন্তু তেমন অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি । বরং বাজার স্থিতিশীল রয়েছে ।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে , চলতি বছরের আগস্টে ডলারের দর ছিল ১২২ টাকা , যা ২০২৪ সালের আগস্টে ছিল ১২০ টাকা । কিন্তু দাম কম থাকলেও গত সরকারের সময় ডলারের জন্য হাহাকার ছিল । ব্যবসায়ীরা ঘোষিত দরে ব্যাংক থেকে চাহিদামতো ডলার কিনতে পারেননি । তখন বিশেষ কৌশলে প্রতি ডলার ১২৮ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হয়েছে । বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথ বাহিনীর সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে ।