ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট এখনো দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাজেট না থাকায় সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না ডাকসু ও হল সংসদের নেতারা। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে ফি আদায় করা হয়, তার হিসাব কোথায়?
২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন হওয়ার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাজেট পাস নিয়ে প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থেরও কোনো বিস্তারিত হিসাব প্রশাসনের কাছে নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদের জন্য শিক্ষার্থীরা যে অর্থ প্রদান করে, সেই পরিমাণ বাজেট বর্তমানে পাচ্ছে না ডাকসু। চলতি বাজেটে ডাকসুর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৩০ লাখ টাকা এবং হল সংসদ নির্বাচন ও অভিষেক বাবদ ৫৪ লাখ টাকা।
তবে হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতি বছর অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত মোট পাঁচটি ব্যাচ থেকে শিক্ষার্থীরা ৩৬ লাখ ৬ হাজার টাকা জমা দেয়। যার অর্ধেক অর্থ যায় হল সংসদের জন্য এবং বাকি অর্ধেক ডাকসুর জন্য।
সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপর ২০২৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মোট ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা দিয়েছে ডাকসু ও হল সংসদের নামে। নিয়ম অনুযায়ী এর অর্ধেক অর্থাৎ ১ কোটি ৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা ডাকসুর হিসাবের খাতে এবং বাকি অর্ধেক হল সংসদের হিসাবে জমা হওয়ার কথা।
কিন্তু চলতি বাজেটে ডাকসুর জন্য বরাদ্দ মাত্র ৩০ লাখ এবং হল সংসদ নির্বাচন ও অভিষেক বাবদ ৫৪ লাখ টাকা। ফলে বাকি অর্থের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষার্থী ও নেতৃবৃন্দের মধ্যে।
ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ জানান, বাজেট না থাকার কারণে আমরা আমাদের কাজ গুলো সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে পারছি না। গত দেড় মাস ধরে আমরা যত আয়োজন করেছি তা বিভিন্ন স্পন্সরের মাধ্যমে করেছি।
তিনি বলেন, ডাকসুর একাউন্টে কোনো টাকা নেই এবং এখন পর্যন্ত একাউন্টে কোনো টাকা আসেনি। প্রতিবছর ডাকসুর জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে যে পরিমান টাকা উঠে এবং ১৯৯০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ডাকসু কত টাকা আয় হয়েছে এবং ২০১৯ সালের ডাকসুতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তার হিসাব চেয়ে প্রশাসন বরাবর আমরা চিঠি দিয়েছি কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ডাকসুর বাজেট পাস হওয়ার তো কিছু নেই। বিষয়টি হলো প্রতিবছর ডাকসুর জন্য একটি নির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকে। এবছর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট পাস হয়, তখন ডাকসু কার্যক্রমে ছিল না।
২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু ও হল সংসদের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে, সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডাকসু ও হল সংসদ বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা হয়েছে—সে বিষয়ে আমার কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। আমরা বর্তমানে ডাকসুর টাকা কোথায়, কীভাবে খরচ হয়েছে এবং মোট কত টাকা আছে—তার একটি স্টেটমেন্ট তৈরি করছি। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যেই স্টেটমেন্টটি প্রস্তুত হবে।’
ডাকসু ও হল সংসদের টাকার হিসাব তৈরি হওয়ার পর সেই টাকা ডাকসুর অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “টাকা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিয়মটা কী, তা আমরা খতিয়ে দেখব।”
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন যা ১৯৯০ সালের পর প্রথম নির্বাচন ছিল। ওই বছর ডাকসুর দ্বিতীয় কার্যনির্বাহী সভায় ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বাজেট পাস করা হয়।