Image description

বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার লিয়াজোঁ অফিসার হিসাবে আছেন উপসচিব মো. মোবাশশেরুল ইসলাম, যিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের একান্ত সচিব ছিলেন। বিসিএস ২৭তম ব্যাচের এই উপসচিব মো. মোবাশশেরুল ইসলামকে ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলার ডিসি হিসেবে পদায়ন দেয়া হয়েছিল। এসব পদায়নে বড় অংকের অর্থের লেনদেন হয় বলে অভিযোগ উঠে। সচিবালয়ে এ নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বাধ্য হয় ফ্যাসিস্টের দোসর চিহ্নিত কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকজনের ডিসি পদে পদায়নের আদেশ বাতিল করতে। যারমধ্যে মোবাশশেরুল ইসলামও ছিলেন। কিন্তু সেই মোবাশশেরুল ইসলামই এখন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে মহা ক্ষমতাবান কর্মকর্তা হয়ে উঠেছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বিশেষ আশীর্বাদে।

কীভাবে ফ্যাসিস্ট চিহ্নিত এই উপসচিব এতোটা আনুকূল্য পাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা রিজওয়ানার, এ নিয়ে ব্যাপক কানাঘুষা রয়েছে মন্ত্রণালয়ে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপসচিব মো. মোবাশশেরুল ইসলামের মূল পদায়ন হলো পরিকল্পনা-১ অধিশাখায়। কিন্তু তিনি এই পদের পাশাপাশি একই সঙ্গে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে উপদেষ্টার অঘোষিত পিএস (একান্ত সচিব) বলেই জানেন। যদিও উপদেষ্টার একান্ত সচিব হিসেবে অফিসিয়ালি আছেন আবু নঈম মোহাম্মদ মারুফ খান। তিনিও এর আগে আওয়ামী লীগ আমলে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও সাজ্জাদ হোসেনের পিএস এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এটা বহুল আলোচিত আছে যে, উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের পছন্দ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তাদেরই। কিন্তু উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের পিএস মোবাশশেরুল ইসলাম কীভাবে উপদেষ্টার এতোটা আশীর্বাদপুষ্ট বা পছন্দের হলেন তা নিয়ে নানা কথা প্রচারিত আছে।

মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশই বলছেন, আওয়ামী দুর্নীতিবাজ উপমন্ত্রী শামীমের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরসমূহের দুর্নীতি-অপকর্মের সব কায়দা-কানুন মোবাশশেরুল ইসলামের নখদর্পনেই আছে। বলা যায়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত দুর্নীতিতে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞও বটে! এ দিক থেকে তিনি উপদেষ্টার পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে স্থান পেয়েছেন। উপদেষ্টার অতি পছন্দের কারণে ফ্যাসিস্টের দোসর এই উপসচিব পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে রাতারাতি অত্যন্ত ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন। মন্ত্রণালয়ের সবাই, এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তাকে সমীহ করতে বাধ্য হচ্ছেন, বলছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র জানায়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সকল নথি উপসচিব মো. মোবাশশেরুল ইসলামের মাধ্যমে উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হয়। উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সাথে কে সাক্ষাত করার সুযোগ পাবেন বা পাবেন না- এই সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা এখন একমাত্র মো. মোবাশশেরুল ইসলামেরই। আর এ কারণে মোবাশশেরুলের আয়-রোজগারের বড় ধরনের পথও খুলে গেছে। তাকে খুশি না করে বাইরের কেউ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেন না। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অফিসের কাজে সাক্ষাত করতে হলেও অধিকাংশ সময়েই মোবাশশেরুলের অনুমতি নিতে হয়। এ কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে তোয়াজ করতে বাধ্য হন।

উপসচিব হিসেবে সরকার থেকে ৩০ লাখ টাকার ঋণ নিয়ে গাড়ি পেয়েছেন এই কর্মকর্তা এবং প্রতিমাসে ৫০০০০/- টাকা প্রাইভেট গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার থেকে পাচ্ছেন। কিন্তু তারপরও পরিকল্পনা-১ অধিশাখার উপসচিব ও পানি সম্পদ উপদেষ্টার লিয়াজোঁ অফিসার মো. মোবাশশেরুল ইসলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের প্রাডো জিপ গাড়ি, নাম্বার ঢাকা মেট্রো -ব -১৫-৭৭২৮ সার্বক্ষণিকভাবে ব্যবহার করছেন বেআইনীভাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সাল থেকে সচিবালয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ঘাঁটিঁ গেড়ে বসেছেন কট্টর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা উপসচিব (পরিকল্পনা-১) মো. মোবাশশেরুল ইসলাম। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ দপ্তরসমূহের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে রয়েছে মোবাশশেরুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর সেটিকে কাজে লাগিয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের উপদেষ্টাকে ম্যানেজ করে অত্যন্ত ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন। দুর্নীতিবাজ উপসচিব মো. মোবাশশেরুল ইসলাম সারা দেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসগুলোর নিয়ন্ত্রণ করে এর মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজও নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপদেষ্টাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে যুগ্মসচিব দীপান্বিতা সাহাকে আবারও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে এনেছে এই চক্র। কট্টর আওয়ামী মতাদর্শের কর্মকর্তা যুগ্মসচিব দীপান্বিতা সাহাকে গত ৫ আগস্টের পরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছিল। অথচ এখন আবার তাকে একই মন্ত্রণালয়ে আনা হলো। দীপান্বিতা সাহার বীরদর্পে পূর্বের স্থানে ফিরে আসার ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের সবাই অবাক হয়েছে।
শীর্ষনিউজ