
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রীকে হাত বেঁধে মারধর করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য। উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে পাঁচ দিন আগে ওই ঘটনা ঘটে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে প্রবাসীর স্ত্রীকে নির্যাতনের পরদিন গত শুক্রবার ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে স্থানীয়ভাবে সালিস বসে। সেখানে প্রবাসীর সঙ্গে ওই নারীর ‘বিবাহবিচ্ছেদ’ ঘটানো হয় এবং আরেক পুরুষের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়।
ওই ইউপি সদস্যের নাম বজলুর রহমান। তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউপির সদস্য। সালিসে নির্যাতনের শিকার নারীকে বিল্লাল হোসেন (৪২) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিল্লালের প্রথম স্ত্রীর চার মেয়ে। আর নির্যাতনের শিকার ওই নারীর দুই ছেলে। এর মধ্যে ছোট ছেলের বয়স তিন বছর।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, দুই হাত বেঁধে ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন ইউপি সদস্য বজলুর রহমান। লাঠির আঘাতে ওই নারী চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। একপর্যায়ের ওই গৃহবধূর চুল ধরে টানাহেঁচড়াও করা হয়। এ ছাড়া তাঁকে বিভিন্নভাবে গালমন্দ করা হয়। এ সময় অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে আটক হওয়া ওই ব্যক্তি পাশেই বসে ছিলেন।
স্থানীয় অন্তত পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে ১৬ অক্টোবর দিবাগত রাত একটার দিকে ওই প্রবাসীর ঘরে তাঁর স্ত্রী ও বিল্লাল হোসেনকে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। এরপর বিল্লালকে স্থানীয় লোকজন মারধর করে আটকে রাখেন। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে ইউপি সদস্য বজলুর রহমান ওই প্রবাসীর স্ত্রীর হাত বেঁধে পেটাতে শুরু করেন। পরদিন এ ঘটনায় গ্রামবাসীকে নিয়ে সালিস বৈঠক বসান ইউপি সদস্য।
সালিসে ওই নারীকে প্রথমে প্রবাসীর সঙ্গে ‘বিবাহবিচ্ছেদ’ ঘটানো হয়। পরে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে আটক হওয়া বিল্লালের সঙ্গে তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
এ সম্পর্কে গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউপি সদস্য বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নারী সম্পর্কে আমার ভাতিজার স্ত্রী। প্রায় আট বছর ধরে তাঁদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক চলছিল। গত বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে গ্রামের লোকজন তাঁদের হাতেনাতে আটক করেন। রাত দেড়টার দিকে আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে চরম উত্তেজনা দেখতে পাই। এরই মধ্যে গ্রামের লোকজন আটক হওয়া বিল্লালকে গণধোলাই দেন। আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর কেউ কেউ বলতে থাকেন, নারী-পুরুষ দুজনই অপরাধ করেছে, তাহলে একজনকে কেন মারা হয়েছে। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে আমি ভাতিজার স্ত্রীকে একটি চিকন লাঠি দিয়ে চার থেকে পাঁচটি আঘাত করেছি। তখন আমার প্রতিপক্ষের কেউ একজন এই ঘটনার ভিডিও করে। আজ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বজলুর রহমান আরও বলেন, ‘ওই ঘটনার পরদিন শুক্রবার সকালে গ্রামের প্রায় ৩০০ মানুষ সালিসে বসে। পরে সকলের সিদ্ধান্তে ওই নারীর স্বামীর সিদ্ধান্তে তাঁদের বিচ্ছেদ করানো হয়। এরপর পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে যার সঙ্গে ওই নারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে নির্যাতনের শিকার ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ গতকাল রাতে বলেন, ‘ঘটনাটি কয়েক দিন আগের। আজ (গতকাল) রাতে বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী নারী বা তাঁর পক্ষে কেউ এ ঘটনায় অভিযোগ করতে রাজি হচ্ছেন না। এরপরও পুলিশ ঘটনায় জড়িত বর্তমান মেম্বার বজলুর রহমানকে আটকের চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’