Image description

ইউনিসেফ প্রতিনিধির বিবৃতি

বাংলাদেশে এখনো বিপুল সংখ্যক কন্যাশিশুর ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হচ্ছে। অনেকেই মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারছে না এবং ঘরে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এমন বাস্তবতার মধ্যেই গত ১১ অক্টোবর পালিত হলো আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস-২০২৫।

দিবসটি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানাফ্লাওয়ার্স বলেছেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব কন্যাশিশুদের অসাধারণ শক্তি, নেতৃত্ব ও সাহস আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে। শহরের শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের কন্যাশিশুরা প্রতিকূলতার মধ্যেও কথা বলছে, নিজের মত তুলে ধরছে এবং পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

ইউনিসেফের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ‘আমি কন্যাশিশু, আমি পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিই: সংকটে সম্মুখভাগে থাকা কন্যাশিশু’—এ প্রতিপাদ্য নিয়ে ইউনিসেফ এ বছর দিনটি পালন করেছে।

রানাফ্লাওয়ার্স বলেন, কন্যাশিশুরা ভুক্তভোগী নয়, বরং স্বপ্নদ্রষ্টা। তারা এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছে, যেখানে সমতা, নিরাপত্তা ও সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত।

 

তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে কিশোরী কন্যাশিশুরা দারিদ্র্য, সহিংসতা ও বৈষম্যের মতো নানা সংকটে ভুগছে। বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে কন্যাশিশুদের অংশগ্রহণ মাত্র ১০ থেকে ১৭ শতাংশ, যা তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও ডিজিটাল যুগে অংশগ্রহণের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

রানাফ্লাওয়ার্স বলেন, প্রতিটি পরিসংখ্যানের পেছনে আছে একেকটি কিশোরীর অপূর্ণ স্বপ্ন ও হারানো সম্ভাবনা। শিশুবিবাহ, অকাল গর্ভধারণ, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার সীমিত প্রাপ্যতা—এসব চ্যালেঞ্জ অনেক কন্যাশিশুর শৈশব ও জীবনের স্বপ্ন কেড়ে নিচ্ছে।

ইউনিসেফ প্রতিনিধির মতে, মানসিক স্বাস্থ্য এখন কন্যাশিশুদের জন্য এক ‘নীরব সংকট’। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিবাহিত কিশোরীদের ১২ শতাংশ এবং অবিবাহিত কিশোরীদের ৯ শতাংশ মাঝারি মাত্রার বিষণ্নতায় ভুগছে। অনলাইন বুলিং ও নিপীড়ন এ সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলছে।

 

রানাফ্লাওয়ার্স জোর দিয়ে বলেন, আমাদের অবশ্যই কন্যাশিশুদের কথা শুনতে হবে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, কিশোরী দিশা—যে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে এক পরামর্শসভায় সাইবার বুলিং ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত দেয়। দিশা বলেছিল, কন্যাশিশুদের এসব বিষয়ে সচেতন করা ও ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্যপ্রাপ্তি সহজ করা জরুরি।

রানাফ্লাওয়ার্স বলেন, সরকার, সমাজ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর উচিত সহিংসতামুক্ত, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করা; মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং সেবা বাড়ানো এবং আইন বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

কন্যাশিশুদের নেতৃত্ব বিকাশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে আত্মবিশ্বাসী করে তোলা এবং বিকাশের সুযোগ দেওয়া—এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি।

ইউনিসেফের এ প্রতিনিধি আরও বলেন, আসুন, আমরা প্রতিটি কন্যাশিশুর সাহস, স্বপ্ন ও নেতৃত্বের শক্তিকে উদযাপন করি। নিশ্চিত করি, তাদের জীবন নিয়ে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, প্রতিটি টেবিলে যেন তাদের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়।