
ভাবি তানিয়াকে গলা কেটে করে হত্যার ১০ বছর পরে ছয় বছরের শিশু ভাতিজি নাবিল ওরফে তাননুর আক্তারকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন চাচা হাবিব ওরফে হাবিল খান। ঘটনার পর ঘাতক হাবিলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এমন ঘটনা ঘটেছে বরগুনার তালতলী উপজেলার ইদুপাড়া গ্রামে।
জানা গেছে, তালতলী উপজেলার ইদুপাড়া গ্রামের দুলাল খানের মেয়ে তাননুর আক্তার মঙ্গলবার দুপুরে স্কুল থেকে এসে বাড়ির সামনে দোকানে বিস্কুট আনতে যায়। ওই সময় চাচা হাবিল খান (২৭) পেছন দিক থেকে ভাতিজিকে গরান কাঠের লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করেন। এতে শিশুটির মাথার ডান পাশে এবং বাম হাতের কনুইতে গুরুতর জখম হয়। তাৎক্ষণিক বাবা দুলাল খান ও স্বজনেরা শিশুটিকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক রকিবুল ইসলাম তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠান। ওই হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটি মারা যায়। ঘটনার পরপরই চাচা হাবিলকে স্থানীয়রা ধাওয়া করে। হাবিল একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে।
ঘাতক হাবিল খান ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে নিহত শিশুর বাবা বড় ভাই দুলাল খানের প্রথম স্ত্রী তানিয়া বেগমকে গলা কেটে করে হত্যা করেন। ওই মামলায় শিশু আইনে তার ৯ বছর সাজা হয়। সাজা ভোগ শেষে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে জামিনে মুক্তি পান। ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পরে ঘাতক হাবিল বড় ভাই দুলাল খানের দ্বিতীয় স্ত্রী ফাহিমা আক্তারের কন্যা তাননুরকে পিটিয়ে হত্যা করলেন।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ রাত ১০টার দিকে নিহত শিশুর লাশ উদ্ধার করে থানায় রেখেছে। বুধবার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে বলে জানান তালতলী থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজালাল। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা দুলাল খান মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঘাতক হাবিল খানকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী রানা হাওলাদার বলেন, শিশুকন্যা তাননুর দোকানে যাওয়ার পথে পেছন দিক থেকে একটি মোটা লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন হাবিল। ঘটনাস্থলেই মেয়েটি লুটিয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক শিশুটিকে উদ্ধার করে তালতলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বড় ভাই দুলাল খান কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, ‘ও আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। ২০১৫ সালে আমার প্রথম স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করেছে। তখন ওর বয়স ছিল ১৭ বছর। শিশু আইনে ৯ বছর সাজা ভোগ করে ২০২৪ সালের প্রথম দিকে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্তি পাওয়ার দেড় বছরের মাথায় আমার শিশুকন্যাকে পিটিয়ে হত্যা করল। আমার শিশুকন্যা কী অপরাধ করেছিল? আমি ঘাতক হাবিলের ফাঁসি চাই।’
ইউপি সদস্য মো. টুকু শিকদার ও সাবেক ইউপি সদস্য সালাম হাওলাদার বলেন, ‘ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা হাবিলকে ধাওয়া করলে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা আরও বলেন, হাবিল এর আগে তার ভাইয়ের প্রথম স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করেছে।
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, শিশুটির মাথার ডান পাশে এবং বাম হাতের কনুইয়ে গুরুতর জখমের চিহ্ন ছিল। তাৎক্ষণিক শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশালের শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে জানা যায়, শিশুটি বরিশালে নেওয়ার পথেই মারা গেছে।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, ঘাতক হাবিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিশুটির মরদেহ থানায় রাখা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে।
ওসি আরও বলেন, শিশুকে পিটিয়ে হত্যার কারণ এখনো জানা যায়নি। এ ঘটনায় শিশু বাবা দুলাল খান বাদী হয়ে হাবিলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
শীর্ষনিউজ