
সবুজ পাহাড় আর সমতলে ঘেরা খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার প্রকৃতি ধ্বংসে মেতেছে মাটি ও বালুখেকোরা । প্রকাশ্যে তারা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মৎস্য হেরিটেজ হালদার শাখা - প্রশাখা ও কৃষিজমি থেকে বালু উত্তোলন এবং যত্রতত্র টিলা ভূমি কাটছে । জেল - জরিমানা করা সত্ত্বেও পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংসকারী চক্রটি থামছে না । স্থানীয় প্রশাসন বলছে , পাহাড় কাটা কিংবা অবৈধ বালু উত্তোলনের তথ্য পেলেই অভিযান চালানো হয় ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে , হালদার চরের মানুষেরা জমিতে চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে বালু ব্যবসায় মেতে উঠছে । জমিতে ফসল উৎপাদন না করে বালু উত্তোলনে জমি ইজারা দিয়ে অর্থ গুনছে । উপজেলার তুলাবিল এলাকায় ফসলি জমি বালু উত্তোলনে লিজ দেওয়া এক কৃষক নাম প্রকাশ না করে বলেন , ‘ খালের পাশের জমিতে ধান বা সবজি ভালো হয় না বিধায় বালু উত্তোলনকারীকে জমি লিজ দিয়েছি ।
ভাঙ্গামুড়ার আবদুল্লাহ বলেন , এলাকায় বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পরিচয় দেওয়া কর্মীরা যুগের পর যুগ তাঁদের সুবিধামতো সময়ে বালুর ব্যবসা করে আজ অনেকে কোটিপতি । তাঁরা অন্যের খুঁত ( দোষ ) খুঁজতে জানলেও নিজের বেলায় কানা । শহরে বালু নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাকচালক বাচা মিয়া জানান , চট্টগ্রাম শহরে হালদা খালের বালুর চাহিদা বেশি ।
দিকে গত ৩০ জুলাই থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তিনটি নিয়মিত মামলাসহ ১৩ টি মামলায় ৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন । কিন্তু এতেও থামেনি বালু উত্তোলন কিংবা পাহাড় কাটা ।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার উপজেলার তিনটহরী ইউনিয়নের ডলুর রফিকের দোকান এলাকায় মো . দেলোয়ার হোসেন নামের এক ভূমি ব্যবসায়ী সন্ধ্যার পর মাটি কেটে একটি পাহাড় নিশ্চিহ্ন করেছেন । তাঁর বক্তব্য জানতে চাইলে অকপটে বলেন , ‘ ঢালু জায়গা বিক্রি করতে চাইলে ক্রেতারা দাম কম বলে , তাই একটু সমান করে বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়ার আশায় মাটি কাটছিলাম ! মাটি কাটার বিষয়ে আইনের বাধ্যবাধকতা আমার জানা নেই । ”
পরিবেশ সংগঠক আবু দাউদ বলেন , বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটার ফলে ভূমিক্ষয় , নদীর গতিপথ পরিবর্তন , জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হয় । এ ছাড়া পাহাড় ধসে প্রাণহানি ও বনাঞ্চল ধ্বংসের ঝুঁকি বাড়ে । প্রশাসনের উচিত কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া । পরিবেশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি । উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া বলেন , দুর্গম এলাকায় পাহাড় কাটা কিংবা ইজারাবহির্ভূত বালু উত্তোলনের তথ্য পেলে কালক্ষেপণ না করে অভিযান পরিচালনা করা হয় । গত বৃহস্পতিবার রাতে পাহাড় কাটার বিষয়ে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গেলেও উপস্থিতি টের পেয়ে মেশিন সরিয়ে ফেলে । তবে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পাহাড়ের মালিক এবং একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম জানা গেছে । তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে ।