Image description
ঢাকা-সিলেট রুট

ঢাকা-সিলেট রুটে সড়ক পথ বেহাল। রেল ও আকাশপথে টিকিট সংকট। বাড়তি ভাড়া। সবমিলিয়ে এক অরাজক অবস্থা। আন্দোলনে মানুষ। দ্রুতই  সমাধান চান তারা। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনো আশ্বাস এখনো মেলেনি। সিলেটের ডিসি মো. সারওয়ার আলম সিলেটবাসীর দাবির সঙ্গে একমত। দুরবস্থার সাক্ষী তিনি নিজেও। চেষ্টা চালাচ্ছেন সবকিছু ঠিক করার। কিন্তু পারছেন কতোটুকু? ক’দিন আগে শহরতলীর মোগলাবাজারে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসক নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তার কাছে অভিযোগ আসে ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেনের টিকিট মেলে না। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সকালে তিনি নিজে যান রেলওয়ে স্টেশনে। টিকিটের চিত্র দেখে তিনিও হতাশ হন। তার মধ্যে যে প্রশ্নের উদয় হয়- টিকিট যায় কই? ঝটিকা অভিযান শেষে তিনি কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এ সময় বলেন- অনলাইনে ২ মিনিটের মধ্যে টিকিট শেষ, এটাতো কোনো সিস্টেম হতে পারে না। বলেন- এরপর আমরা দেখবো যে, এই সিস্টেম থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যায়। ম্যানুয়ালি যখন টিকিট বিক্রি হতো তখন কিছু লোক কাউন্টার থেকে কিনে কালোবাজারি করতো। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে টিকিট কিনে কালোবাজারি করছে। সিন্ডিকেট করতেছে, তারা অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট করে মুহূর্তের মধ্যে টিকিট নিয়ে নিচ্ছে। 

ডিসি বলেন, সমস্যাটা হচ্ছে অনলাইনে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে ট্রেনের টিকিট কাটা যাচ্ছে। আজকের সকালবেলার যে ট্রেনটা ছিল সেটির টিকিট কিন্তু কাউন্টার থেকে মাত্র ১টা কাটা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ২০০টা টিকিট কাটা হয়েছে। এখন আমরা এটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, এই সমস্যাটা কোন কোন জায়গা থেকে হচ্ছে। অনলাইনে টিকিট আসামাত্র যে দ্রুত শেষ হয়ে যাবে সেটি তো কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। অথচ যাত্রীরা ঠিকমতো টিকিট পাচ্ছেন না। এই সমস্যাটা কোন জায়গায় সৃষ্টি হচ্ছে সেটি আমরা বের করবো। আমরা এই প্রক্রিয়ায় যেতে চেষ্টা করবো- এনআইডি ছাড়া যাতে কিছুতেই ট্রেনের টিকিট কেনা-বেচা করা না যায়। তখন দেখা যাবে টিকিট কালোবাজারি অনেক কমে গেছে। 

আমাদের প্রথম দেখার বিষয় হচ্ছে যে, এখানকার স্থানীয় কেউ জড়িত কিনা। রেলওয়ের স্টাফ যদি কেউ জড়িত থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে ডিসি বলেন- আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে, রেলওয়ের জায়গায় কিছু অসাধু মানুষ স্থাপনা করে নিয়েছে। সেগুলো উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর সিলেট রুটে স্পেশাল কোনো ট্রেন চালু করা যায় কিনা, এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে কাজ চলায় দুর্ভোগে রয়েছেন যাত্রীরা। এ কারণে এখন সবাই রেলপথে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম যেতে চান। এজন্য ট্রেনের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। এ কারণে দ্রুত ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে যেতে পারে। তারা বলেন- সিলেট থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেল লাইনের কয়েকটি স্থানে ট্রেন ধীর গতিতে যায়। এটি লাইনের কারণেই হচ্ছে। এসব জায়গায় যাতে ট্রেন দুর্ঘটনার মুখে না পড়ে সেজন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের অবগত করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা মনোযোগ সহকারে দেখছেন বলে জানান তিনি। গতকাল কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- ঢাকা-সিলেট রেলপথ ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা- চট্টগ্রাম রেলপথে এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী চলাচল করেন। টিকিট না পেয়ে সিটে বসা যাত্রীর সংখ্যার মতো যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে করে ট্রেনের সিটে বসা যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। পাশাপাশি অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেন পথে জার্নি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। তারা বলেন- ঢাকা থেকে সিলেট আসার পথে ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে যাত্রী থাকে বেশি। এসব যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই টিকিট না কেটে জোরপূর্বক ট্রেনে যাতায়াত করেন। তাদের কাছে ট্রেনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অসহায় হয়ে পড়েন। এ সংক্রান্ত অপ্রীতিকর ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার রয়েছেন।