
সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের কেউ কেউ সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন। তাদের কার্যক্রমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এমন গুরুতর অভিযোগ তুলেছে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া দলগুলো। বিশেষ করে জামায়াত এবং এনসিপি’র পক্ষ থেকে এই অভিযোগ উঠায় তোলপাড় চলছে। কিছু কিছু উপদেষ্টা সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন, এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য দেয়ার পর থেকে নানা আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। নাহিদ নিজেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।
নাহিদ বলেছেন, উপদেষ্টাদের কারা সেফ এক্সিট খুঁজছেন তাদের নামও প্রয়োজনে প্রকাশ করে দেবেন। তার এই বক্তব্য প্রচারের পর সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সর্বশেষ জামায়াত নেতা ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের উপদেষ্টাদের নিয়ে বিস্ফোরক বক্তব্য দিয়েছেন। গতকাল তিনি বলেছেন, সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তারা নীলনকশার নির্বাচনের চেষ্টা করছে, তাদের নাম আছে, তাদের কণ্ঠ রেকর্ড আছে। তারা মিটিংয়ে কী আলোচনা করেন তার খবরও আমাদের কাছে আছে। তিনি বলেন, আমরা সময় দিচ্ছি সংশোধন হওয়ার। সংশোধন না হলে তাদের নাম জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিবো। ওদিকে বিএনপি’র সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও কয়েকজন উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রধান দলগুলোর এমন মন্তব্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপদেষ্টাদের কারা কি ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁছছেন অনেকে। যদিও এ পর্যন্ত দলগুলোর পক্ষ থেকে কোনো উপদেষ্টার নাম বলা হয়নি। গতকাল জামায়াত নেতা তাহের অবশ্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছের কয়েকজনের দিকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ তোলেন।
অনেকে বলছেন, অভিযোগ তোলা দলগুলোই সরকার গঠনে ভূমিকা রেখেছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার পরিচালনায় তারা সহায়তা করছে। এই অবস্থায় তারাই আবার সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।
গত ৪ঠা অক্টোবর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন। পরে এক প্রতিক্রিয়ায় উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বক্তব্যের স্বপক্ষে নাহিদ ইসলামকে তথ্য প্রমাণ তুলে ধরার আহ্বান জানান। নাহিদ ইসলামের মন্তব্যের সূত্র ধরে প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, কিছু উপদেষ্টার মাঝে আমরা এই আচরণ দেখতে পাচ্ছি যে, তারা এখন কোনোভাবে দায়সারা দায়িত্বটা পালন করে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে এক্সিট নিতে পারলেই হলো। দেশে থাকুন আর দেশের বাইরে থাকুন; এই দায়সারা দায়িত্ব নেয়ার জন্য অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি সরকার কাজ করতে পারে না।
ওদিকে সোমবার অনুষ্ঠিত বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও কয়েকজন উপদেষ্টার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা এবং কার্যক্রমে ‘সরকারের নিরপেক্ষতা’ ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মত দেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল-পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন বলেও অভিযোগ করা হয় বৈঠকে।