Image description

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে ভোক্তার জীবনমান উন্নয়নে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় সরকারি খাতের ব্যয়ে সবচেয়ে কম। ভুটান সরকারও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশের দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করে থাকে। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ ব্যয় ২০ থেকে সাড়ে ২৮ শতাংশ, বাংলাদেশ সরকার জিডিপির মাত্র ১৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে। ত কয়েক বছর ধরেই কমছে এই সরকারি ব্যয়। এর মধ্যে গত বছর সামান্য বাড়লেও চলতি অর্থবছরে তা কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজস্ব আয় কম হচ্ছে বলে ভোক্তার জীবনমান বাড়াতে বেশি অর্থ খরচ করতে পারছে না সরকার।

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন দেশের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকারি খাতের ব্যয় ও রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোক্তার জীবনমান উন্নয়নে সরকারি খাতের ব্যয় না বাড়ায় অবকাঠামোগতভাবে দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণযোগাযোগ, মানবসম্পদেও উন্নয়ন হচ্ছে ধীরগতিতে।

এতে আরো বলা হয়, গত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি খাতের ব্যয় ৪ দশক ধরেই কমছে। দেশগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার যেভাবে বাড়ছে, সে অনুযায়ী ব্যয় বাড়ছে না । ফলে কর্মসংস্থান ও মানুষের আয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি শুধু বেসরকারি খাতের বিকাশের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকায় থাকা বাংলাদেশের অবস্থাও একই। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশসহ অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে দেশ। এর জন্য রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে থাকাকে দায়ী করা হচ্ছে। রাজস্ব আহরণ ও জিডিপির অনুপাতেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। রাজস্ব আয় কম হচ্ছে বলে ভোক্তার জীবনমান বাড়াতে বেশি অর্থ খরচ করতে পারছে না।

আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৪ দশকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সরকারি ব্যয়ে দক্ষতার অবনতি ঘটেছে। যেসব অর্থ ব্যয় হচ্ছে তার একটি বড় অংশ যথাযথ কাজে আসছে না।

তবে বাংলাদেশ ও আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার মতো কিছু দেশে গত এক দশকে সরকারি খরচে দক্ষতা বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে। এ খাতে সরকারি খরচ শুধু উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে বেড়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এ খাতে খরচ জিডিপির তুলনায় বাড়েনি। স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও একই চিত্র।

আইএমএফের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশ ভুটান মোট জিডিপির তুলনায় ২৮ শতাংশ ব্যয় করেছে। ভারতের ব্যয় ছিল জিডিপির ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালের ২৩ শতাংশ ও পাকিস্তানের ২০ শতাংশ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারি ব্যয় মাত্র ১৩ শতাংশ।

প্রতিবেদন থেকে আরো জানা গেছে, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সরকারি ব্যয় ছিল মোট জিডিপির ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ২৩ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১৮ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ২২ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ১৮ শতাংশ, মিসরে ২৪ শতাংশ।

২০২৪ সালে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে মোট জিডিপির সবচেয়ে বেশি সরকারি ব্যয় ছিল জার্মানিতে। দেশটি জিডিপির ৪৮ শতাংশ ব্যয় করেছে। যুক্তরাষ্ট্র করেছে ৩৫ শতাংশ।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় হয়েছিল ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর পর ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ৩ বছর সরকারি ব্যয় ছিল ১৩ শতাংশ। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরও কমে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে ১২ দশমিক ২ শতাংশে দাড়ায়। আলোচ্য সময়ে করোনার সংক্রমণ ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে সরকারের রাজস্ব আয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল। ওই সময়ে সরকার ব্যাপকভাবে ঋণ নিয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। যে কারণে মানুষের কল্যাণে সরকারি খাতের ব্যয় কমেছে। গত অর্থবছরে তা সামান্য বেড়ে আবার ১৩ দশমিক ২ শতাংশে ওঠে। চলতি অর্থবছরে সরকারি ব্যয় আবার কমে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ এই ২ অর্থবছরেও সরকারি ব্যয় খুব একটা বাড়বে না। ওই সময়ে তা ১২ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

শীর্ষনিউজ