Image description
 

আওয়ামী লীগের আমলে গুমের ঘটনায় দুই মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

বুধবার (৮ অক্টোবর) এ দুই মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

এদিন আদালতে উপস্থিত হন হাসিনা সরকারের আমলে গুমের শিকার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমান, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক ও মাইকেল চাকমাসহ কয়েকজন। পরে তারা সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী বলেন, বিনা অপরাধে ডিজিএফআই আমাকে প্রায় আট বছর বন্দি করে রেখেছিল। সব জুলুমের বিচার চাই। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, অপরাধী যে হোক, তাকে আইনের মুখোমুখী হতে হবে। সাবেক প্রধামন্ত্রীসহ যারা জড়িত ছিল, তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।

আরেক ভুক্তভোগী মাইকেল চাকমা বলেন, যারা আইন বর্হিভূতভাবে আমাকে সাড়ে ৫ বছর গুম করে রেখে ছিল, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে মামলা দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, ন্যায় বিচার পাবো। আর যেন বাংলাদেশে এ ধরনের জঘন্য ঘটনা না ঘটে। ক্ষমতার যারা কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে তারা যেন এ বিচার দেখে দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করে।

ব্যারিস্টার আরমান বলেন, আমি আটটি বছর অন্ধকার ঘরে বন্দি ছিলাম। তখন মনে হতো সংবিধান, মানবাধিকার, আইনের শাসন এসব কোথায়। গত ১৬ বছর সংবিধানের ধারাগুলো শুধু কাগজের ওপর কালি ছিল। আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, আজ এখানে আমার পরিবারকে নিয়ে এসেছি। একটি বিষয় জানা দরকার, গুম হয়তো আমাদের করা হয়েছে, কিন্তু ভোগান্তি শিকার হয়েছে আমাদের পরিবারগুলো। সাত মাস গুম ছিলাম, কিন্তু বিশ্বাস ছিল একদিন বাংলার মাটিতে এটির বিচার পাবো। অপরাধীরা অনেকে পালিয়ে গেছে, অনেকে দেশে আছে। যারা দেশে আছে, আশা করছি শিগগিরই তাদের আটক করা হবে। পালিয়ে যারা গেছে, তারা যেখানে থাকেন খুঁজে বের করা হবে।

হাসিনুর রহমান বলেন, আমি একা নয়, আমার পুরো পরিবার গুম হয়েছে। যারা গুম হয়েছে শুধু তারা নয়, তাদের পুরো পরিবারও গুম হয়েছে। এটি যে কী কষ্ট, বুঝানো যাবে না। আদালতের উচিৎ, গুমের ঘটনায় জড়িতদের আয়না ঘরে রেখে বিচার করা।

এর আগে একই দিন সকালে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর রেজিস্ট্রারের কাছে গুমের অভিযোগ দাখিল করেন। শেখ হাসিনা ছাড়াও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

দুটি মামলার মধ্যে একটিতে আওয়ামী লীগের আমলে টিএফআই সেলে গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে জেআইসি সেলে আটক, গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিকীসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গুমের অভিযোগে দুটি এবং জুলাই আন্দোলনে গুলি করার অভিযোগে বিজিবির সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একটিসহ মোট তিনটি ফরমাল চার্জ দাখিল হয়। এর মধ্যে টিএফআই সেলে গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচটি ও জেআইসি সেলে আটক, গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।