বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের পর হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহার করে দেশ ছেড়েছেন ফ্যাসিবাদের দোসর ও গণহত্যায় হুকুমদাতাদের অনেকে। কারো চোখে ধুলো দিয়ে নয়, বরং বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কতিপয় ব্যক্তির সহায়তা নিয়েই তারা দেশ ত্যাগ করেছেন। এখনো ফ্যাসিবাদের যেসব দোসর দেশের মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে আছেন তারাও একইভাবে পালিয়ে যেতে পারে বলে তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দা রিপোর্টে। কারণ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম ও এভিয়েশন সিকিউরিটির প্রধান উইং কমান্ডার জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
অবশ্য সরকারের উপরের মহলের নজরে আসার পর নড়েচড়ে বসেছে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। যেখানে বারবার উঠে এসেছে এই দুই কর্মকর্তার নাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা নির্দয়ভাবে মানুষ হত্যা ও হত্যার হুকুম দেয়াসহ নানা অপকর্ম চালাল তারা বিমানবন্দরের মতো একটি নি-িদ্র নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে পালিয়ে গেল কিভাবে। এটিকে আসলে পালানো বলা যায় না, বলতে হয় অনুমতি নিয়ে দেশত্যাগ করা। তা হলে যারা এই অনুমতি দিলেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত বলে দাবি উঠে এসেছে। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামি আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপির এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেই দেশ ত্যাগ করার প্রমাণ পেয়েছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এমন হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরও তারা কিভাবে বিমানবন্দর ব্যবহার করে চলে যেতে পারে। কারণ বিমানবন্দর কোনো কাঁটাতারের বেড়া নয়, যে লাফ দিয়ে সীমানা পার হওয়া যাবে। সেখান দিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ফরমালিটি পার করতে হয়। যারা তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে তারা এই অপরাধের দায় এড়াতে পারে না। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সচিব থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা গ্রেফতারও হয়েছেন। কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকসহ বিগত সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কয়েকজন কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, শুধু আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি নন, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদেরও পালাতে সহযোগিতারা করা হয়েছে, যা এখন অনেকটাই ‘ওপেন সিক্রেট’।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। ২০২৪ সালের মে মাসে এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান উইং কমান্ডার জাহাঙ্গীর হোসেন। ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান এয়ার ভাইস মার্শাল মো: মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। তিনি যোগদানের পর বিমানবন্দরের সার্বিক উন্নয়নে বেশ কিছু কাজ করেছেন। বদলি করেছেন ফ্যাসিবাদের অনুসারী কয়েকজনকে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তা বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক, এভসেকের পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সাবেক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, বিমানবন্দর ব্যবহার করে কিভাবে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি পালিয়ে যায় এটিই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন? অবশ্যই এ ঘটনা নির্বাহী পরিচালক জানতেন। এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না। এ ছাড়াও বিমানবন্দরে যেসব ঘটনা ঘটছে বিশেষ করে প্রবাসী যাত্রীদের মারধর নির্যাতন তাতে সরকারের নানা উদ্যোগকে ম্লান করে দিচ্ছে।