Image description

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগ বাড়ছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, দুই দেশ নিজেদের ঐতিহাসিক শত্রুতা পিছনে রেখে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে।

চলতি জানুয়ারিতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসানের মধ্যে রাওয়ালপিন্ডিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা জোরদার এবং পারস্পরিক সম্পর্ককে বহিরাগত প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়।

উল্লেখ্য,১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেই সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্ররা গণহত্যা চালায়, যা দুই দেশের মধ্যে গভীর বিভেদ সৃষ্টি করে।মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। এই ঐতিহাসিক ক্ষত আরো গভীর হয়েছিল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনকালে। কিন্তু ২০২৪ সালে গণবিক্ষোভের কারণে হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং হাসিনা সরকারের প্রতি ভারতের দীর্ঘমেয়াদি সমর্থন দুই দেশের রাজনৈতিক গতিপথ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ চেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্ধুত্বের বৃদ্ধি একটি নতুন কূটনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ গত মাসে মিসরের রাজধানী কায়রোতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে তারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে একত্রে আলোচনা করেছিলেন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকগুলো সম্পর্কের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের কাছে হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে। হাসিনা তার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিক্ষোভ দমনের জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, ভারত অভিযোগ করেছে যে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন বাড়ছে। তবে ঢাকার পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

 

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির মাধ্যমে পাকিস্তানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠতে পারে।

 

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। যদিও ভৌগোলিক এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতা বাংলাদেশকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিতে বাধ্য করবে, তবুও এই সম্পর্ক উন্নয়ন দুই দেশের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।