Image description

বাংলাদেশের লাখো মুসলমানের জীবনের অন্যতম বড় স্বপ্ন পবিত্র হজ পালন। প্রতিবছর হজের খরচ বাড়তে বাড়তে যখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন ২০২৬ সালের প্যাকেজ ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তির বার্তা এসেছে।

রোববার বিকেল ৫টায় অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সচিবালয়ে হজ এজেন্সি মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী বছরের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

উড়োজাহাজ ভাড়া কমানোর জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা দফায় দফায় বৈঠক করে ভাড়া নির্ধারণ করেছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সর্বনিম্ন হজ প্যাকেজ এবার ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১১ হাজার টাকা কম। উড়োজাহাজ ভাড়াও কমছে ১৩ হাজার টাকার মতো। তবে একই সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে বাড়তি স্বাস্থ্যবিমার খরচ। ফলে প্রশ্ন উঠছে—এবারের প্যাকেজ আসলেই কি সাধারণ হাজিদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনছে, নাকি নতুন বোঝার জন্ম দিচ্ছে?

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী বছর স্বাস্থ্যবিমা বাবদ ১৫০ সৌদি রিয়াল দিতে হবে, যেখানে এ বছর ছিল মাত্র ২১ রিয়াল। অর্থাৎ, প্রায় সাতগুণ বৃদ্ধি। যদিও এটি হাজিদের নিরাপত্তা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তার জন্য জরুরি, তবুও খরচের হিসাবে এটি বাড়তি চাপ। একদিকে উড়োজাহাজ ভাড়া কমেছে, অন্যদিকে বিমার খরচ বাড়ায় সাশ্রয়ের অঙ্ক আসলে কতটা দাঁড়াবে—তা নিয়ে হাজিদের মধ্যে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

আগামী বছরের জন্য তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হচ্ছে—

প্রথম প্যাকেজ: মসজিদুল হারাম থেকে ৭০০ মিটারের মধ্যে, মূল্য ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

দ্বিতীয় প্যাকেজ: হারাম থেকে ১.৭ কিমি দূরে, মূল্য ৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

তৃতীয় প্যাকেজ (সর্বনিম্ন): আজিজিয়া এলাকায় অবস্থান, মূল্য ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

প্রথম দুটি প্যাকেজ বাস্তবে সীমিত সংখ্যক হাজির নাগালের মধ্যে থাকবে, কারণ দাম তুলনামূলক বেশি। অধিকাংশ হাজির জন্য কার্যত তৃতীয় প্যাকেজই হবে একমাত্র ভরসা।

নিবন্ধন ও কোটার চিত্র:
আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। ইতিমধ্যেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯৫৪ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১১৩৫ জন প্রাক্-প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।

আগ্রহীদের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হবে, যেখানে জমা দিতে হবে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এত বড় অঙ্ক একসঙ্গে জোগাড় করা গ্রামীণ ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।

উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়ে বিতর্ক:
হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) অভিযোগ—গত সরকারের সময় অযৌক্তিকভাবে ভাড়া নির্ধারণের কারণে হজের খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। এবার নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনার ফলে ভাড়া কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে। তবে অনেকের মতে, সৌদি আরবের সাথে চুক্তি ও এয়ারলাইন্স পরিচালনার খরচের যৌক্তিক ব্যাখ্যা না থাকলে ভাড়া আবারও অযৌক্তিকভাবে বাড়তে পারে।

বাংলাদেশে প্রতিবছর লাখো মানুষ হজে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু খরচ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলো স্বপ্ন দেখেও আর তা পূরণ করতে পারেন না। সর্বনিম্ন ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকার প্যাকেজকেও অনেকের কাছে অপ্রাপ্তিযোগ্য মনে হয়। শহরের কিছু পরিবারের জন্য হয়তো এটি সহনীয়, কিন্তু গ্রামীণ শ্রমজীবী হাজিদের জন্য এখনো এটি বিশাল অঙ্ক।

২০২৬ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণায় খরচ কমার খবর অনেকের মুখে হাসি ফোটালেও, বাস্তবে এটি কতটা মানুষের সাধ্যের মধ্যে আসবে তা নিয়ে বিতর্ক থাকছেই। বিমার খরচ বৃদ্ধি ও আবাসনের ভিন্নতার কারণে অনেক হাজিকেই বাজেটের বাইরে যেতে হবে।