
রংপুর মহানগরীর হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের লাঠি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি ও বাগছাস নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতির বিরুদ্ধে। তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের অস্থায়ী (অ্যাডহক) কমিটির আহ্বায়ক হন।
জানা গেছে, ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি নিজেই একজন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) মহানগর কমিটির আহ্বায়ক। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।
ভুক্তভোগি শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সুত্রে জানা গেছ, স্কুলের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ফেল করেছে। এ খবর পেয়ে স্কুলে যান ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি। শ্রেণিকক্ষে ঢুকে জানতে চান, কে কে ফেল করেছে। অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা যারা ফেল করেছেন তাদের বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটান তিনি। নারী শিক্ষার্থীরাও বাদ যাননি এই পিটুনি থেকে। শিক্ষার্থীদের পেটানোর সময় কোন শিক্ষক বাধা দেননি।
এ ঘটনা শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের জানালে দুদিন পর অভিভাবক ও এলাকাবাসী স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থী পেটানোর ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের কাছে এর জবাব ও বিচার চান। এ নিয়ে মারধরের শিকার দুই শিক্ষার্থীর বড় ভাই নগরীর পরশুরাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ঘটনার বেশ কয়েকদিন হলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তারই পক্ষে কথা বলেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে বলে প্রচার করেন। অন্যদিকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, কোন স্কুলের শিক্ষার্থীকে শারীরিক নিযাতন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ওই স্কুলে যে এমন ঘটনা ঘটেছে তাকে জানানো হয়নি।
ভুক্তভোগি কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুরের দিকে হঠাৎ করে ক্লাস চলাকালীন সময়ে স্কুলে আসেন তিনি। এ সময় বাঁশের লাঠি হাতে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিকক্ষে যান। শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান পরীক্ষার রেজাল্ট। এ সময় ফেল করার কথা বলায় তাদের পেটাতে শুরু করেন। পেটানোর সময় সেখানে শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও তারা কিছু বলেনি।
শিক্ষার্থী আইরিন আক্তার বলেন, আমাকে দুই হাতে মারছেন তিনি। অন্য বান্ধবীদেরকেও মেরেছে। ক্লাসের প্রায় সবাইকে মেরেছেন তিনি। আর যারা সেদিন ক্লাসে অনুপস্থিত তাদের নাম লিখে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আইরিন আক্তারের চাচা ইয়াকুব আলী বলেন, আমরা কখনও শুনিনি সভাপতি শিক্ষার্থীদের মারধর করে। সে সভাপতি হয়ে কেন বাচ্চাদের মারবে। আমার ভাতিজিকে এমনভাবে মেরেছে, তার হাত ফুলে গেছে। পরে ওষুধ নিয়ে খাওয়াইছি তাকে।
রফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনার পর আমরা অভিভাবকেরা স্কুলে গেলে ইমতি প্রথমে ক্ষমা চান। কিন্তু পরক্ষনেই সে ফোন দিয়ে পুলিশের গাড়ি নিয়ে আসে। এতে অভিভাবকরা আরো ক্ষুব্ধ হন। পরে ইমতি লোক মারফত আমাকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেয়। অথচ এত বড় একটা অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে অপরাধীর পক্ষ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, উনি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভালো করে পড়াশোনা ও রেজাল্ট করতে উৎসাহ দিয়েছেন, অন্য কিছু নাই। ভুলবোঝাবুঝির বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের মারধর উনি করতে পারেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ওটা তো পারেন না।
রংপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, যে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। এটি একেবারে নিষিদ্ধ। হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের ঘটনাটি প্রধান শিক্ষক আমাকে জানাননি। আমি খোঁজ নিয়ে ওই বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।
স্কুলের সভাপতি ও বাগছাস নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, একটু রাগারাগি করেছি, শাসন করেছি এই আর কি। কিন্তু এটা নিয়ে ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো কমপ্লেইন নেই। আমি নিজেও এ এলাকার বড় ভাই। একটু শাসন করছি। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছিল। এলাকার কিছু ব্যক্তি ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।