Image description

খাদ্য অধিদপ্তরের পদোন্নতি-পদায়নে এখন যেসব অনিয়ম-অপকর্ম চলছে এর নজির অতীতে ফ্যাসিস্ট ও লুটেরা আমলেও নেই। সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট বেশকিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে সরকারের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবের আখের গুছিয়ে নেয়ার প্রবণতা ততই বাড়ছে বলে জানা গেছে। আখের গুছিয়ে নেয়ার ধান্দায় উপদেষ্টা এবং সচিব উভয়েই অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বদলি, পদোন্নতি, পদায়নে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সর্বশেষ, গত সপ্তায় আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা পদে পদায়নে অন্ততঃ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বহুল আলোচিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজ চট্টগ্রামের আরসি ফুডকে খুলনায় বদলি করে আবার সেই বদলির আদেশ বাতিল করা হয়েছে দুই কোটি টাকার বিনিময়ে। এই ঘুষ লেনদেনের কথাটি ইতিমধ্যে খাদ্য বিভাগে ব্যাপকভাবে চাউর হয়েছে। এদিকে আরেক শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম খানকে স্ত্রী কর্তৃক দায়েরকৃত দুর্নীতির অভিযোগ, নারী নির্যাতনের অভিযোগ এবং ফৌজদারি মামলার মতো গুরুতর ঘটনাকেও পাশ কাটিয়ে পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও দুটি কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। 
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, জহিরুল ইসলাম খানকে চলতি দায়িত্বে পরিচালক করার বিষয়ে ডিপিসির অবৈধ সিদ্ধান্তটি শুরুতে আটকে দিয়েছিলেন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তাৎক্ষণিক তিনি এও মন্তব্য করেন যে, এত গুরুতর ঘটনাকে আমলে না নিয়ে কীভাবে জহিরকে পরিচালক (চ. দা.) পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিলো ডিপিসি। কিন্তু ওই দিনই এর একটু পরে দেখা গেলো, জহিরের পদোন্নতির প্রস্তাব অনুমোদন করে দিয়েছেন উপদেষ্টা নিজেই। এভাবে এক দিনের মধ্যে কিছুক্ষণের ব্যবধানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মতো ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই অবাক হয়েছেন। এতে দুই কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। 

স্ত্রীর আপন বড় বোনের মেয়ের সঙ্গে জহিরের পরকীয়া কেলেঙ্কারি, স্ত্রীর ওপর নির্যাতন, স্ত্রীর মামলা দায়ের
চট্টগ্রামের আরসি ফুড পদে পদায়নে থাকাকালে স্ত্রী শারমিন আক্তারের আপন বড় বোনের মেয়ে শাহানা আক্তার স্বর্ণার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান জহিরুল ইসলাম। প্রায় তিন বছর ধরে চলে এই পরকীয়া সম্পর্ক। পরবর্তীতে এক পর্যায়ে হাতেনাতে ধরাও পড়ে যান জহির। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর জের হিসেবে শারমিন আক্তারকে শারীরিক নির্যাতন করেন জহিরুল ইসলাম খান। এসব ঘটনা তুলে ধরে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ঢাকার ১৩ নম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন জহিরুল ইসলাম খানের স্ত্রী শারমিন আক্তার। মামলায় মোট চার জনকে আসামী করা হয়। এরমধ্যে এক নম্বর আসামি হলেন জহিরুল ইসলাম খান, ২ নং শাহানা আক্তার স্বর্ণা (বোনের মেয়ে), ৩ নং আসামি সাইদ হাসান শাকিল (আপন বোনের ছেলে) এবং ৪ নং আসামি (আপন বোন) সাইফুন আরা। 

মামলার আরজিতে শারমিন আক্তার তাঁর ওপর চরম শারীরিক নির্যাতনের একাধিক দিনের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণও সংযুক্ত করেন মামলার আরজির সঙ্গে। ৫ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে জহিরুল ইসলামের মারপিট ও নির্যাতনে শারমিন আক্তার অজ্ঞান পড়লে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপরে সর্বশেষ ২৭.১২.২০২৪ তারিখে জহিরের কিল-ঘুষি ও নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। শারমিন আক্তার আরজিতে অভিযোগ করেন, জহিরুল ইসলামের অর্থের লোভে লাভবান হওয়ার আশায় তাঁর আপন বোনের মেয়ে শাহানা আক্তার স্বর্ণা এই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছে।   

জহিরের পরকীয়া কেলেঙ্কারি ও নির্যাতনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উপদেষ্টা বরাবর স্ত্রী শারমিন আক্তারের লিখিত অভিযোগ 
আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার পরও জহির উদ্দিন খানের পরকীয়া কেলেঙ্কারিসহ বেপরোয়া কর্মকাণ্ড ঠেকাতে পারছিলেন না শারমিন আক্তার। বরং এতে তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যাচ্ছিল। ফলে বাধ্য হয়ে খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বাধ্য হন শারমিন আক্তার। সচিব বরাবর জমা দেয়া উক্ত অভিযোগপত্রে ‘বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ ছিল, “নারী নির্যাতন ও পরকীয়াজনিত অভিযোগ প্রসঙ্গে।” অভিযোগপত্রে শারমিন আক্তার বলেন, “আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী শারমিন আক্তার (৪৫), পিতা- মৃত লুৎফর রহমান, মাতা- সুফিয়া খাতুন, বর্তমান ঠিকানা- ১২১৭/১/৩, মিরপুর, কাজীপাড়া, আমার স্বামী মো. জহিরুল ইসলাম খান আপনার খাদ্য ভবনে বর্তমানে অতিরিক্ত পরিচালক পদে কর্মরত আছেন। উল্লেখ্য যে, গত ২০২০ইং সালে তার চট্টগ্রামে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে পদোন্নতি হয় এবং সেখানে সে প্রায় আড়াই বছর অবস্থান করে। অবস্থানরত অবস্থায় সে একটি বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে আমি আমার তিন ছেলে মেয়েসহ ২০২১ এর জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অবস্থান করি। অতঃপর আমার বড় মেয়ের তখন মেডিকেলে পরীক্ষা থাকার কারণে এবং ছেলের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আমি ঢাকায় আসি। সে ততদিন চট্টগ্রামে অবস্থান করছিল। দুঃখজনক যে, আমার অগোচরে চট্টগ্রামের ওই বাসায় আমার আপন বোন সাইফুন আরা ও তার মেয়ে সাহানা আক্তার স্বর্ণা কয়েকদিন বেড়ানোর নাম করে অবস্থান করে। এমতাবস্থায় আমার স্বামী মো. জহিরুল ইসলাম খান ও আমার বোনের মেয়ে শাহানা আক্তার স্বর্ণার মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইহা গত তিন বছর ধরে চলতে থাকে। আমার স্বামী রাজশাহী বদলি হবার পর আমাদের অগোচরে আমার বোনের মেয়েসহ বাসা ভাড়া নিয়ে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বজায় রাখে। উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল ২০২৪ সালে আমি ও আমার ছেলে-মেয়ে এ সম্পর্কে জানতে পারি এবং আমরা নানাভাবে তাকে এ ধরনের অবৈধ পরকীয়া সম্পর্ক থেকে বের করে আনার চেষ্টা করি। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সে আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং আমার আপন বোনের মেয়েকে নিয়ে বাসা ভাড়া করে অবস্থান করে। এখন আমার ও আমার ছেলে-মেয়ের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাদের সামাজিকভাবে হেয় করছে। উল্লেখ্য যে, বাসা থেকে বের হওয়ার পর আমাদের কোনরূপ খোঁজ-খবর নেয়নি এবং ভরণপোষণ দেয়নি। যার ফলস্বরূপ আমি আমার ছেলে-মেয়ে বাধ্য হয়ে একাধিকবার খাদ্য ভবনে যাই। সে এখন পরকীয়াজনিত কারণে পরিবারের নামে উল্টো মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। এমতাবস্থায় মহোদয়ের নিকট আবেদন আপনি এর উপযুক্ত প্রতিকার ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য থানায় করা অভিযোগ অত্র সাথে সংযুক্ত করা হল।”

গত ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ইং তখনকার অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত এ অভিযোগ দাখিল করেন তাঁরই স্ত্রী স্বয়ং শারমিন আক্তার। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী স্ত্রীর এ ধরনের অভিযোগকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়ে থাকে। এ ধরনের ফৌজদারি মামলার কপিসহ অভিযোগ দায়ের করলে ফৌজদারি মামলার কারণে সংশ্লিষ্ট সরকারি চাকরিজীবীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলার কারণে অটোম্যাটিক্যালি সাসপেণ্ড, তদন্ত এবং দোষী সাব্যস্ত হলে বিভাগীয় মামলাও হতে পারে। তাতে ভিন্ন ভিন্ন আইনে ফেলে ভিন্ন ভিন্ন দণ্ড দেয়ার নিয়ম রয়েছে। 

দুর্নীতিবাজ সচিব মাসুদুল আলম এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় পরবর্তীতে শারমিন আক্তার তাঁর স্বামী জহিরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেন একই বিষয়ে। কারণ, দুর্নীতিবাজ সচিব মাসুদুল হাসানের প্রশ্রয় পেয়ে ইতিমধ্যে শারমিনকে তালাকও দিয়েছেন জহিরুল। উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগে তিনি জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি পদে থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ অর্থ উপার্জনের তথ্যও তুলে ধরেন। অভিযোগপত্রে শারমিন আক্তার লিখেন, “মো. জহিরুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত পরিচালক, প্রশাসন বিভাগ, খাদ্য অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন। তিনি আমাকে অনেকবার নির্যাতন করেছেন। তিনি দুর্নীতির অন্যতম হোতা। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর মেয়ের জামাই আবু নাসের বেগ ও মেয়ে তৃনার সহযোগিতায় দুর্নীতির এক স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। টাকার গরমে তিনি আমার বড় বোনের মেয়েকে বিবাহ করেন। বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন, কোটি টাকার ফার্নিচার দিয়েছেন, একটি গাড়ীও কিনে দিয়েছেন। আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী থাকাকালে দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন। যে কারণে তাকে আগস্টের পর পরই রাজশাহী থেকে প্রত্যাহার করে খাদ্য ভবনে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। অবৈধ টাকার গরমে আমাকে মারধোর, নির্যাতন এবং এখন তালাকও দিয়েছেন। এক্ষণে, তার দুর্নীতি, অনাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসাবে তার ভূমিকা ও স্ত্রীকে নির্যাতনের বিষয় তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অনুরোধ করা হলো।”

স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড করা তো হয়ই-নি, অন্য কোনো ব্যবস্থাও নেননি মন্ত্রণালয়ের সচিব বা উপদেষ্টা
নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের ফৌজদারি মামলার কপিসহ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে সাসপেন্ড করার কথা। এবং এরসঙ্গে তদন্ত কমিটি গঠন করারও নিয়ম রয়েছে। তদন্তে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু জহিরুল ইসলাম খানের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সাসপেন্ডও করা হয়নি। 

নীতিমালা অনুযায়ী খাদ্য বিভাগের ডিসি ফুড থেকে উপরের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগ-বদলিসহ সার্বিক কার্যক্রম মন্ত্রণালয়েরই এখতিয়ার। একই সঙ্গে জহিরুল ইসলামের দুর্নীতির অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনোই ব্যবস্থা না নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কৌশলে দুর্নীতিবাজ জহিরুল ইসলামকে বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য শারমিন আক্তারের লিখিত অভিযোগ ও মামলার কপি অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দেয়। অধিদপ্তরের যেহেতু এই পর্যায়ের কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করার এখতিয়ার নেই তাই তারাও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জামাল হোসেনকে নামেমাত্র তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। জামাল হোসেন এবং জহিরুল ইসলাম ঘুষ-দুর্নীতির ভাগবাটোয়ারায় একই সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবেই পরিচিত। মাত্র কিছুদিন আগে জামাল হোসেন ছিলেন পরিচালক (প্রশাসন) এবং একই সময়ে জহিরুল ইসলাম খান ছিলেন অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) পদে। একই সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়ায় জামাল হোসেন তদন্তের পদক্ষেপ না নিয়ে জহিরুল ইসলামকে বাঁচিয়ে দেন। 

আটকে দেয়া পদোন্নতি কত টাকার বিনিময়ে ছাড়লেন উপদেষ্টা?
এসব ঘটনার মধ্যেই দেখা গেলো, সাসপেন্ডসহ নানা রকমের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পরিবর্তে জহিরুল ইসলাম খানকে অপকর্মের পুরষ্কার হিসেবে মন্ত্রণালয় উল্টো তাকে পরিচালক (চ. দা) পদে পদোন্নতি দিয়েছে। গত ৩ আগস্ট জহিরুল ইসলামকে এই পদোন্নতি দেয়া হয়। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, সচিব মো. মাসুদুল হাসানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত ডিপিসি বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য নথি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের নিকট আসলে তিনি “এ ধরনের গুরুতর অভিযোগের পর কীভাবে তাকে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিলো ডিপিসি” মন্তব্য উল্লেখ করে নথিটি ফেরতে দেন। এতে জহিরের পদোন্নতি আটকে যায়। কিন্তু ওইদিনই কিছুক্ষণ পরে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার নথিটি পুনরায় হাতে হাতে তলব করে এনে জহিরের পদোন্নতি অনুমোদন করেন। উপদেষ্টার এমন দ্বিমুখী আচরণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হতবাক হন। কেউ কেউ এমনও মন্তব্য করেন, আটকে দেয়া পদোন্নতি কত টাকার বিনিময়ে ছাড়লেন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার? 

দুর্নীতিবাজ কায়ছার আলীর তেলেসমাতি- একদিকে প্রধান উপদেষ্টার ভাগ্নে পরিচয়, অন্যদিকে ২ কোটি টাকা
খাদ্য অধিদপ্তরের অত্যন্ত আলোচিত একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এস এম কায়ছার আলী। চট্টগ্রামের আরসি ফুড পদে তাঁর দুই বছর পূর্ণ হয়েছে গত মার্চ মাসে। খাদ্য বিভাগের বদলি-পদায়নের নীতিমালা অনুযায়ী দুই বছর পূর্ণ হওয়ায় তখনই তাকে অন্যত্র বদলি করার কথা। কিন্তু বড় অংকের ঘুষের বিনিময়ে তিনি সেই পদেই বহাল থেকে যান। গণমাধ্যমে এ নিয়ে লেখালেখি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে গত ১৭ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে কায়ছার আলীকে খুলনার আরসি ফুড পদে বদলি করা হয়। এতে কায়ছার আলী অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তিনি চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে রাজি নন। মন্ত্রণালয়কে ম্যানেজ করতে অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যাপকহারে বদলি বাণিজ্যে নেমে পড়েন। দুই দিনে মাঠ পর্যায়ের প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তাকে তিনি বদলি ও পদায়ন করেন। সংগ্রহ করেন দুই কোটি টাকারও বেশি। এই টাকা তিনি মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা এবং সচিবকে দেন বলে চাউর হয়েছে। মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এটাই জানেন। বদলি হওয়ার মাত্র দুই দিনের মাথায় সেই বদলির আদেশ বাতিল করেন মন্ত্রণালয়েরই একই কর্মকর্তা, উপসচিব জয়নাল মোল্লা। দুই কোটি টাকার বিনিময়ে বদলির আদেশটি বাতিল হয়েছে, এটা এখন সংশ্লিষ্ট অনেকেরই জানা। 

কিন্তু কায়ছার আলী মুখে বলছেন অন্য কথা। তিনি নাকি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাগিনা। ড. ইউনূস তাঁর বদলির আদেশ বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়কে বলেছেন! আর এ কারণেই নাকি মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়েছে আদেশটি বাতিল করতে। উল্লেখ্য, এই কায়ছার আলী ছিলেন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট লুটেরা মন্ত্রী সাধন-কামরুল উভয়েরই অত্যন্ত প্রিয়ভাজন। এবং তাদের অবৈধ অর্থ আয়েরও অন্যতম একটি উৎস ছিলেন তিনি। আর এখনকার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এবং সচিব মাসুদুল হাসানেরও প্রিয়ভাজন একই কারণে!
শীর্ষনিউজ