Image description

দেড় দশকের টানা লুটপাট আর অনিয়মে দেশের অর্থনীতি ছিল প্রায় ডুবন্ত অবস্থায়, যা সেখান থেকে এখন খাদের কিনারায় এসে পৌঁছেছে। এমনকি দেশের অর্থনীতি দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা বাংলাদেশ ব্যাংকের। যদিও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, সুদহার, ব্যাংকের ওপর আস্থাহীনতা ও অব্যাহত খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে আর্থিক খাতের শঙ্কা কাটেনি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি বর্তমানে সম্ভাবনা ও সংকটের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আর্থিক খাতকে টেনে তুলতে দরকার সঠিক নেতৃত্ব, সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা আর রাজনৈতিক সদিচ্ছা। এসব সমীকরণের সমন্বয় করা গেলেই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ফের দক্ষিণ এশিয়ার ‘উদীয়মান টাইগারে’ রূপ নেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি দেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা মূল্যায়নে প্রাথমিকভাবে ১২টি সূচকের পর্যালোচনা করতে হয়। সেগুলো হলো- মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্বের হার, বিনিয়োগ হার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি ও আমদানির ভারসাম্য, রাজস্ব আয়, বৈদেশিক ঋণ, বিনিময় হার, রেমিট্যান্স, দারিদ্র্য হার ও মাথাপিছু আয় এবং পুঁজিবাজার সূচক। তবে গত এক বছরে রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য ও বিনিময় হারে বাংলাদেশ বড় সফলতা দেখালেও অন্যান্য সূচকে দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নতি নেই। যে কারণে অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও মূলধারায় ফিরতে পারেনি বলেও মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচক রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী, এর পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। যদিও ওই সময় দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছিল ১৪ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু বছরের ব্যবধানে গত রোববারের হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ৩০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী এর পরিমাণ ২৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দেশের রিজার্ভ বেড়েছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার। শুধু তাই নয়, একই সময়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আগের বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪ বিলিয়ন ডলার, যা পূর্ববর্তী সরকারের সময় ডেফার (স্থগিত বা অপেক্ষমাণ) করে রাখা হয়েছিল।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি ঘটেছে, বিশেষত রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ার কারণে। বাণিজ্য ঘাটতি ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ কমে ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি আয় বেড়ে ৪৩ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি। গত অর্থবছরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থেকেছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার; আর আগের অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন। কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। তবে ঘাটতি থাকলে তা মেটাতে ঋণ নিতে হয়। আর্থিক হিসাবেও উদ্বৃত্ত রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

 
 

এদিকে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি (খেলাপি ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি) আর মূলধন ঘাটতি নতুন নতুন রেকর্ড গড়তে থাকায় দেশের ঋণমান আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে নতুন করে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে।

 

সরকারের গত এক বছরে আরেকটি সফলতা হচ্ছে দেশের মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। আওয়ামী লীগের সময় অব্যাহত অর্থ পাচার ও হুন্ডির কারণে দেশের মুদ্রা বাজারে ছিল বড় ধরনের অস্থিরতা। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর ডলার সংকট দেখা দিলে মুদ্রা বিনিময় হার অস্থির হয়ে ওঠে। এতে ডলারের দর ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকার গত এক বছরে ডলার বাজারে অস্থিরতা কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এতে ডলার দর স্থিতিশীল হলে গত মে মাসে মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও ডলার বাজারে কোনো অস্থিতিশীলতা দেখা যায়নি। উল্টো এখন দর ধরে রাখতে বাজার থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘এক বছরে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে দেশ থেকে টাকা পাচারের সব রাস্তা বন্ধ হওয়ায় রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়সহ কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সফলতা দেখা যাচ্ছে। এজন্য আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে।’

দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায়—গভর্নরের এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘গভর্নর এই অর্থে বলেননি যে, আমাদের অর্থনীতি ডুবতে যাচ্ছে। গভর্নর বলতে চেয়েছেন, ডুবন্ত অর্থনীতি খাদের কিনারায় এসেছে। দ্রুতই আমরা মূলধারায় ফিরব।’

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক বছরে সরকার মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল আকাশচুম্বী। সরকারের কোনো পদক্ষেপই দ্রব্যমূল্য কমাতে পারছিল না। কিন্তু গত বছরের আগস্টে সরকার পতনের পর মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যদিও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। কিন্তু গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ফের বেড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিবিএসের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকেও বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৫০ হাজার, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ২৭ লাখে পৌঁছেছে।

অনেক বিষয়ে সম্ভাবনা থাকলেও দেশের অর্থনীতি বর্তমানে সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে গেছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় বিনিয়োগও এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। বেকারত্ব বাড়ছে, শ্রমবাজারে সংকট চলছে এবং প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। ব্যাংক খাতও সংকটাপন্ন, খেলাপি ঋণ বেড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অর্থনৈতিক পরিবেশের অনিশ্চয়তা বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে।

অর্থনীতির জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে মোট বিনিয়োগ ও মোট দেশজ সঞ্চয়। যার দুটোই কমে গেছে। এবার মোট বিনিয়োগের হার হচ্ছে জিডিপির ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর আগে এর তুলনায় কম বিনিয়োগের অর্থবছর ছিল ২০১৩-১৪ অর্থবছর, ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর মোট দেশজ সঞ্চয় তো কমছে ধারাবাহিকভাবে। অর্থনীতির তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি দেশে মোট দেশজ সঞ্চয় কমে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্থনৈতিক সংকেত, যার প্রভাব বহুমাত্রিক। এর অর্থ হচ্ছে দেশের মানুষ ও প্রতিষ্ঠান যা আয় করছে, তার বেশিরভাগই খরচ করে ফেলছে, সঞ্চয় করছে কম। বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাওয়া হচ্ছে আরেকটি দুশ্চিন্তার সূচক। গত জুনে এ খাতে বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে ব্যক্তি খাত ব্যাংক ঋণ নিচ্ছে কম, বিনিয়োগও করছে কম। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগও কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে।

গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) টাকার অঙ্কে লেনদেন ছিল ১ হাজার ৬০৬ কোটি টাকার বেশি। আর সে সময় বাজার মূলধন ৭ লাখ ৩ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার বেশি ছিল। তবে একপর্যায়ে দৈনিক লেনদেন নেমে যায় ২০০ কোটি টাকার ঘরে। লেনদেন সংকটে বন্ধ হয়ে যায় বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের শাখা অফিস। অবশ্য পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর এবং নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ আসার খবরে আবারও চাঙ্গা হয় পুঁজিবাজার। সাম্প্রতিক সময়ে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দৈনিক লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া বাজার মূলধন ৭ লাখ ১২ হাজার ৬৬১ কোটি টাকার বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য বলছে, দেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, এর পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। তার মধ্যে ২৫৯৫ মিলিয়ন ডলার মূলধন এবং ১৪৯১ মিলিয়ন ডলার ছিল সুদ। আগের বছরের তুলনায় ঋণ পরিশোধে যথাক্রমে ২৯ শতাংশ এবং ১১ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে গত এক দশকে নেওয়া বিশাল অবকাঠামো প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার ঋণের অনুগ্রহকাল শেষ হওয়ার কারণে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ কিছু বড় প্রকল্পের ঋণের কিস্তি এক থেকে দুই বছরের মধ্যে শুরু হবে, ফলে চাপ আরও বাড়বে। নতুন বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতি দেখা গেছে; ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নতুন ঋণচুক্তি হয়েছে ৮,৩২৩ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় কম। তবে বাজেট ঘাটতি পূরণে ৩,৪০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

সংকটে রয়েছে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাও। বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগে বিভক্ত করা ঘিরে এনবিআর কর্মকর্তাদের দীর্ঘ আন্দোলনের কারণে অস্থিরতা শুরু হয়। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সরকারের হস্তক্ষেপে আন্দোলন অনেকটাই দমে যায়। কিন্তু কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্তাদেশ ও অব্যাহত বদলি কার্যক্রম না থামায় এখনো অস্থিরতা চলছে এনবিআরে। এতে দেশের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাত বিশ্লেষক গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, ‘দেশের সাম্প্রতিক অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের বৃদ্ধি কিছুটা স্বস্তি দিলেও গভীর কাঠামোগত দুর্বলতা অর্থনীতিকে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসইভাবে ঘুরে দাঁড়াতে বাধা দিচ্ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রবাসী আয়ের রেকর্ড ও ডলার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ইতিবাচক, তবে বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের হার কমে যাওয়া, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অব্যাহত প্রবণতা উদ্বেগজনক। পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা আনতে নেওয়া কঠোর পদক্ষেপও শুরুতে অস্থিরতা তৈরি করে। একই সঙ্গে বিদেশি ঋণ প্রবাহে ভাটা, ঋণ পরিশোধের চাপ ও এনবিআরের অস্থিরতা রাজস্ব ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। অর্থনীতি বর্তমানে সম্ভাবনা ও সংকটের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এ অবস্থায় সুসংহত নীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছ নেতৃত্ব এবং ব্যাংক ও বিনিয়োগ খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। শুধু রিজার্ভ বা মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নয়—এখন দরকার সময়োপযোগী, বাস্তবভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক রূপকল্প।’

দেশের অর্থনীতি এখনো ভঙ্গুর অবস্থায় থাকলেও আগের তুলনায় কিছুটা অগ্রগতির আশাব্যাঞ্জক তথ্য জানান বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতি এখনো ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। তবে আমরা আগের তুলনায় কিছুটা এগোতে পেরেছি। যদিও সামনে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ এবং নতুন কিছু সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এখন নতুন সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে পারলেই অর্থনীতি দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।’