সাজিদের প্রাণবন্ত মুখাবয়ব ফুটে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের দেয়ালে। রঙ আর তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে তার সাহস আর প্রতিবাদ। কিন্তু এই দৃশ্য যেন আরও গভীর করে তুলল এক মায়ের শোক।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে জবি শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের সামনে হাজির হলেন সাজিদের মা-বাবা। দেয়ালে আঁকা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্ত চুপ হয়ে গেলেন তারা। হঠাৎ করেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন মা। তার বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠল আশপাশের পরিবেশ। তিনি বলছিলেন, আমার ছেলে! আমার সাজিদ! বলে চিৎকার করে কান্না আর অঝোরে ঝরছে চোখের পানি।
সেই দিনটা আজও ভুলতে পারেননি শহীদ সাজিদের মা। গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা চলাকালে মিরপুরে যে ঘটনাটি তার পৃথিবী তছনছ করে দিয়েছিল, তা এখনও তাকে তাড়া করে ফেরে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণবন্ত শিক্ষার্থী মো. ইকরামুল হক সাজিদ, যিনি তার স্বপ্ন পূরণের পথে ছিলেন, সেদিন একটি গুলিতে হারিয়ে গেলেন চিরতরে।
সাজিদের বাবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন। তার চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়লেও কোনো শব্দ করলেন না। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন গ্রাফিটির দিকে। যেন সেই ছবির মধ্যেই খুঁজে ফিরছেন ছেলেকে।
গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা চলাকালে মিরপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী মো. ইকরামুল হক সাজিদ। মাথার পেছন দিয়ে ঢুকে চোখের পেছনে আটকে যায় গুলি। দীর্ঘ আটদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১৪ আগস্ট তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে তার নামে গ্রাফিতি তৈরি করেছেন কয়েকজন তরুণ শিল্পী। তারা জানান, সাজিদ শুধু একজন শিক্ষার্থী নয়, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। আমরা চেয়েছি তার স্মৃতি অমলিন রাখতে।
এক সহপাঠী বলেন, সাজিদ ছিল আমাদের প্রেরণা। তার মতো সাহসী মানুষকে আমরা ভুলতে পারি না। এই গ্রাফিটি আমাদের প্রতিদিন মনে করিয়ে দেবে তার ত্যাগের কথা।
গ্রাফিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক পথচারী আবেগঘন কণ্ঠে বললেন, এই ছবি শুধু সাজিদের নয়, এটি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিটি সংগ্রামী কণ্ঠস্বরের প্রতীক।
উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবন রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।