Image description

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক, কলেজ ও প্রশাসন পদে আছেন বর্তমানে অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান। মহাপরিচালকের পরেই পরিচালক, কলেজ ও প্রশাসন পদটিকে শিক্ষা খাতের গুরুত্বপূর্ণ পদ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আর সেই পদেই বহাল হয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের এমন এক কর্মকর্তা, যিনি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে ছাত্র-জনতার দাবির মুখে ওএসডি হয়েছিলেন। এর পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তও শুরু হয়েছিল। ওএসডি থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠিক ওই মুহূর্তেই গত এপ্রিলে তাকে শিক্ষা ক্যাডারের এই শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়- যা তিনি হয়তো কখনো কল্পনাও করেননি, এমনকি তাঁর দল আওয়ামী লীগের আমলেও। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তো তিনি শুধু ওএসডি-ই নয়, আরো বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হবেন, এমন আশংকা করছিলেন। আর তখনই গত ৬ এপ্রিল, ২০২৫ আব্দুল হান্নানকে পরিচালক, কলেজ ও প্রশাসন পদে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 
অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান ছিলেন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে। অধ্যক্ষ পদে থাকাকালে জুলাই, ২০২৪ অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে প্রতিহত করার আওয়ামী কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বলে প্রমাণাদি রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৮ জুলাই, ২০২৪ তারিখে অধ্যক্ষ প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগ সরকার এবং ছাত্রলীগের গুন্ডা বাহিনী নির্যাতন চালাচ্ছিল, তখন অধ্যক্ষ প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে কলেজে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন এবং নিজেকে আওয়ামী লীগের একনিষ্ট কর্মী হিসেবে প্রমাণের জন্য এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এ অনুষ্ঠান করার কোন বাধ্যবাধকতা ছিলো না, সরকারের কাছ থেকেও অফিসিয়াল কোনো নির্দেশ বা নির্দেশনা ছিল না। এ অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা মাউশি’র কোন কর্তাব্যক্তিকে আমন্ত্রণও করা হয়নি। যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিলো, ঠিক তখন তিনি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বস্তুত, অধ্যক্ষ প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান সরকারকে দেখাতে চেয়েছেন তিনি একজন একনিষ্ঠ আওয়ামী লীগার। 
এছাড়া বিগত সময় কলেজটিতে অধ্যক্ষ পদে থাকাকালে বি এম আব্দুল হান্নান অনেক অনিয়ম-অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। এসব অপকর্মের কারণে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বি এম আব্দুল হান্নান আর সেই কলেজে যেতে পারেননি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ভয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। ফলে মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়ে তাকে ওএসডি করে সেই অবস্থায়ই রাখে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বি এম আব্দুল হান্নানের নানা অনিয়ম-অপকর্মের তথ্যসহ মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দাখিল করেন। ছাত্রদের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর ২৮ অক্টোবর, ২০২৪  লিখিতভাবে এই অভিযোগ দাখিল করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৮ জুলাই, ২০২৪ অধ্যক্ষ বি এম আব্দুল হান্নান তৎকালীন মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যে রাজনৈতিক সভার আয়োজন করেছিলেন এ সংক্রান্ত একাধিক ছবিও অভিযোগপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করে মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়। বি এম আব্দুল হান্নান অধ্যক্ষ পদে থাকাকালে বদরে আলম কলেজে অর্থ আত্মসাতসহ যেসব দুর্নীতি-অনিয়ম করেছেন এর বিস্তারিত বিবরণও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা হয় অভিযোগপত্রে। 
বি এম আব্দুল হান্নানের এসব দুর্নীতি তদন্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে। মাধ্যমিক উচ্চ ও শিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখার উপসচিব শাহিনা পারভীনের স্বাক্ষরে অধিদপ্তরের ডিজি বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিটি পাঠানো হয় ৩ ডিসেম্বর. ২০২৪। এরপরে একই বিষয়ে মন্ত্রণালয় আবারো ২ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বলা হয়, “উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান, অধ্যক্ষ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে (কপি সংযুক্ত)। বিষয়টি একজন উপযুক্ত কর্মকর্তা দ্বারা তদন্তপূর্বক আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন অত্র কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।” মন্ত্রণালয়ের প্রথম চিঠি পাওয়ার পরই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামকে। অধিদপ্তর থেকে কলেজ-১ শাখার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ সফিউল বশর এর স্বাক্ষরে ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ এ চিঠিটি পাঠানো হয়। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বিলম্ব হওয়ায় অধিদপ্তর থেকে পরবর্তীতে ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ টঙ্গী কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর তাগাদাপত্রও দেয়া হয়। তাগাদাপত্রে মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরিভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। 
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশি’র তাগাদার পরিপেক্ষিতে টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেন। তদন্ত কার্যক্রমের শুরুতে তিনি ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (তখন ওএসডি) প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান এবং উক্ত কলেজের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক (বাংলা) মো. শহীদুল ইসলাম বরাবর ৯ মার্চ, ২০২৫ তারিখে একটি চিঠি ইস্যু করেন। চিঠিতে তিনি এই দুজনকে দায়িত্ব দেন (ক) ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের সকল শিক্ষক/ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক (খ) সকল কর্মচারী/ সংশ্লিষ্ট কর্মচারী (গ) অভিযোগকারী মো. আব্দুল হাফিজ, অনার্স ২য় বষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এবং (ঘ) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ১২/০৩/২০২৫ তারিখে সকাল ১০ টায় কলেজে উপস্থিত থেকে তদন্ত কাজে সহযোগিতা করার জন্য। 
জানা যায়, অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও তদন্ত কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত কাজে সহযোগিতা না করে এ সংকট থেকে উত্তরনের জন্য বিভিন্ন মহলে তদবিরের কাজে লেগে যান। এক পর্যায়ে তিনি তদবিরের বড় ধরনের যাদুর কাঠিও পেয়ে যান। তদবিরের ‘যাদুর কাঠি’র জোরে শুধু দুর্নীতির দায় থেকে বাঁচা-ই নয়, শিক্ষা ক্যাডারের শীর্ষ এমন এক পদে বসার সুযোগ পান তিনি, যারফলে তাঁর বিরুদ্ধে আর কেউ তদন্ত করার সাহসই পায়নি। 
বি এম আব্দুল হান্নানের যথাযথ সহযোগিতা ছাড়াই টঙ্গী কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের তদন্ত যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তিনি প্রতিবেদন তৈরি করছিলেন, ঠিক সেই সময়ে আব্দুল হান্নানকে ওএসডি থেকে মাউশির পরিচালক, কলেজ ও প্রশাসন পদে পদায়নের প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপরে তদন্ত কর্মকর্তা প্রফেসর রফিকুল ইসলাম প্রতিবেদন তৈরির কাজ এগিয়ে নেয়ার আর সাহসই পাননি। অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নানের দুর্নীতির তদন্ত এভাবেই আটকে যায়। 
সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজের অনুসন্ধানে সম্প্রতি এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব পদে সিদ্দিক জোবায়ের থাকাকালে তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। এতো ঘটনা কিছুই তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন। এ সংক্রান্ত নথি তলব করবেন বলে শীর্ষকাগজ প্রতিবেদককে জানান তখন। পরবর্তীতে ফোনে তাঁর কাছে আবারো এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, নথিতে এসব ঘটনা কিছুই উল্লেখ নেই। নথি উপস্থাপনকারী কর্মকর্তারা এ বিষয়গুলো তুলে ধরেননি। তদন্ত সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রও নথিতে নেই বলে তিনি জানান। অবশ্য, এর দু’তিন দিন পরেই মাইলস্টোন ঘটনার জের হিসেবে সিদ্দিক জোবায়ের শিক্ষা সচিব পদ থেকে প্রত্যাহার হন। 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন বিরোধী অবস্থান এবং অতীত দুর্নীতির দায়ে নিশ্চিত শাস্তির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে গিয়ে বি এম আব্দুল হান্নান তদবিরের এমন এক যাদুর কাঠি পেয়ে যান যে, ওই যাদুর কাঠির জোরে মন্ত্রণালয়ের নথি থেকে অভিযোগপত্রসহ তদন্ত সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে যায়। অথচ এর আগ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তের জন্য অত্যন্ত সিরিয়াস ছিল মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জরুরিভিত্তিতে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তারমধ্যেই হঠাৎ দেখা গেলো, মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। শাস্তির পরিবর্তে তাঁকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তাঁকে মাউশির পরিচালক কলেজ ও প্রশাসন পদে পদায়নের নির্দেশ এলো। বলা হলো, নথি থেকে দুর্নীতির তদন্ত সংক্রান্ত কাগজগুলো ছিঁড়ে ফেলতে। নেতিবাচক কোনো তথ্য না দিয়ে শুধুমাত্র ইতিবাচক তথ্যে নথি উপস্থাপন করতে। এবং সেটাই করা হলো। জরুরিভিত্তিতে নথিটি উপস্থাপিত ও অনুমোদিত হলো। জিও জারি হলো। 
অবশ্য, অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগপত্র এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টসগুলো ইতিমধ্যে শীর্ষকাগজ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তারই ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। 
অভিযোগপত্রে যা আছে
৮ জুলাই, ২০২৪ তারিখের আ ক ম মোজাম্মেল ও আওয়ামী লীগ নেতাদেরসহ মতবিনিময়ের তথ্য অভিযোগপত্রের শুরুতে তুলে ধরা হয়। অভিযোগপত্রে এরপরে বলা হয়, “প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে থাকাকালে কলেজে ভুয়া মেজরের উত্থান ঘটে। কলেজে ভুয়া মেজর উত্থানের পেছনে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করেন উপাধ্যক্ষ প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান। ওই সময় অধ্যক্ষ ছিলেন প্রফেসর মাসুদা শিকদার। তিনিও ছিলেন দুর্নীতিবাজ। তারও বিচার হওয়া উচিত। উপাধ্যক্ষ প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান শিক্ষকদের মধ্য থেকে একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। এ গ্রুপে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করতেন এ কলেজের শিক্ষক বিল্লাল উদ্দিন, শহীদুল ইসলাম এবং জাহাদুর আলমসহ আরো দুই/এক জন। যা এখনো চলমান রয়েছে। এরা স্থানীয়। এরা সবসময় নিজেদেরকে প্রভাবশালী হিসেবে উপস্থাপন করেন। ঐ সময় কলেজে ভুয়া মেজরের উত্থান ঘটে হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক জাহাদুর আলমের হাত ধরে। জাহাদুর আলমই ভুয়া মেজরকে নিয়ে আসেন তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর মাসুদা শিকদার এর কক্ষে এবং পরিচয় করিয়ে দেন।”
“এ ভুয়া মেজরকে নিয়ে চলে বাংলা বিভাগের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম-এর তেলেসমাতি। বাংলা বিভাগে তাকে আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়াও বাংলা বিভাগের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম এবং ঐ বিভাগের পিয়ন সিদ্দিকুর রহমান তাকে বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ান। এ ভুয়া মেজর অত্র কলেজের বে-সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি সরকারি করে দিবেন বলে বিভাগের পিয়ন সিদ্দিক এর মাধ্যমে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। যারা টাকা দিতে পারেনি, তারা ভুয়া মেজরের কাছে মোটরসাইকেল বন্ধক রাখে। ঐ সময়কার অধ্যক্ষ যখন বুঝতে পারেন যে, লোকটি ভুয়া মেজর, তখন তার নামে থানায় জিডি করা হয়। এছাড়াও ঐ সময়কার অধ্যক্ষ ভুয়া মেজরের বিষয় নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এরপর আদায়কৃত টাকার সিংহভাগ বাংলা বিভাগের পিয়ন সিদ্দিককে ফেরৎ দেয়া হয় এবং মোটরলাইফেল দু’টি উদ্ধার করা হয় সিদ্দিক-এয় বোনের বাড়ি থেকে। কয়েকদিন পর তৎকালীন অধ্যক্ষ তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বাংলা বিভাগের পিয়ন সিদ্দিককে চাকরি থেকে বহিষ্কার করেন। বাংলা বিভাগের পিয়ন সিদ্দিক ঐ সময়ের উপাধ্যক্ষ এবং বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসয় বি এম আব্দুল হান্নান এর অনুগত একজন কর্মচারী। ভুয়া মেজরের যতসব অপকর্ম এগুলো আসলে উপাধ্যক্ষ প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান তাকে দিয়েই সম্পন্ন করান। তাই বর্তমান অধ্যক্ষ পুরুস্কারস্বরূপ সিদ্দিককে গত ০৩/১০/২৪ তারিখে পুনরায় চাকরিতে বহাল করেন। (কপি সংযুক্ত) এ নিয়ে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।”
“অধ্যক্ষ প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জয়েন করার পর কলেজের বন্ধকৃত শহীদ তাজউদ্দিন ছাত্র হোস্টেল খুলে দেয়ার পরিবর্তে হোস্টেলটি ক্লাস ঘর বানানোর পরিকল্পনা করেন। তিনি প্রচার করেন এ কাজে তাকে সহায়তা করবেন তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। ছাত্রদের দাবি সত্ত্বেও তিনি হোস্টেল খুলেন-নি। আমরা সাধারণ ছাত্ররা হোস্টেলে থাকতে পারছিনা। বন্ধের আগে হোস্টেল নিয়ন্ত্রণ করতো ছাত্রলীগ নেতা রবিন সরদার, জীবন সরদার, এ.টি.এস এবং সাদেক গং। রবিন ও জীবন সরদার গংদের বিচার না করে হোস্টেল বন্ধ করে দেওয়া এটা কোন ধরনের বিচার? রবিন ও জীবন সরদার, এ.টি.এস হৃদয় এবং সাদেক গংদের কুকীর্তি সম্পর্কে যমুনা টিভিতে লাইভ দেখানো হয়েছে। এসব ছাত্রদের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন কোন পদক্ষেপ দেয়নি। উল্টো হোস্টেল বদ্ধ করে দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের শাস্তি দিচ্ছে। এটা কতটা যুক্তিসংগত? বর্তমান অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ স্যার সাধারণ ছাত্রদের সাথে অবিচার করছেন। সবকিছুই চলছে গোলমালে। দেখার কেউ নেই। এ যেন হিরক রাজার দেশ। রবিন ও জীবন সরদার, এ.টি.এস হৃদয় এবং সাদেক গংদের পৃষ্ঠপোষকতা করতো হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক জাহাদুর আলম এবং পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক আবুল কাশেম। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই কলেজে চাকুরি করছে। যার ফলে তাদের প্রভাব অনেকাংশে অন্যদের চেয়ে বেশি। এ দুইজন শিক্ষক বর্তমান অধ্যক্ষের আস্থাভাজন ব্যক্তি।”
“অধ্যক্ষ প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান এবং উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শওকত আলী এক অভিনব পন্থায় দুর্নীতি করে চলছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা কমিটির কাছ থেকে তারা দু’জন টাকা নেন অনেক বেশি পরিমাণে। কিন্তু অধ্যক্ষের নামে ভাউচার হয় মাত্র ১০,০০০/- এবং উপাধ্যক্ষের নামে ভাউচার হয় মাত্র ৫,০০০/- টাকার। হিসাব মিলানোর জন্য অতিরিক্ত অর্থ কমিটির সদস্য ও অফিসের নামে ব্যয় দেখিয়ে ভাউচার করিয়ে নেন। অর্থাৎ অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ বেশি টাকা নেন কিন্তু ভাউচারে স্বাক্ষর করেন ১০,০০০/- এবং ৫,০০০/- টাকা। অপরদিকে কমিটির সদস্যগণ ও অফিস নিয়মমাফিক টাকা নেন কিন্তু ভাউচারে স্বাক্ষর করেন অনেক বেশি পরিমাণ অর্থের অংকে। এ বাড়তি টাকা কমিটির সদস্যগণ ও অফিসের কর্মচারীগণ গ্রহণ করেন না, অথচ ভুয়া ভাউচারে স্বাক্ষর করতে হয়। বাড়তি টাকা অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ট্রেজারিতে জমা না দিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারিদের নামে ভুয়া ভাউচার করে তারা দুইজনই আতাসাৎ করছেন। এ নিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারিদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।”
“কলেজ চলাকালীন সময়ে কলেজের দক্ষিণ অংশে চলে কোচিং বাণিজ্যের মহাউৎসব। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। যে সব শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত তাদের মধ্যে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে পরিচিত, জাহাদুর আলম (হিসাববিজ্ঞান), ননী গোপাল শাহা (গণিত), এরশাদুল হক (অর্থনীতি) এবং আবুল কাসেম (পদার্থ বিজ্ঞান) সহ আরো অনেকেই। এ কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন ধরে কলেজ নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকগণ, আর জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জাহাদুর আলম (হিসাববিজ্ঞান) প্রত্যেক অধ্যক্ষের আমলে একজন প্রভাবশালী শিক্ষক হিসেবে কলেজে বিচরণ করে আসছেন। কারণ তিনি দুই নম্বরী ভাউচার তৈরিতে ওস্তাদ। এজন্য সকল অধ্যক্ষ তাকে সাথে রাখেন। তিনি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি: এ অধ্যক্ষও প্রায় ৯০% কাজের সাথে তাকে জড়িত করে রেখেছেন: তার দুই নম্বরী ভাউচার তৈরির কলাকৌশলের জন্য।”
উল্লেখ্য, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ এর অধ্যক্ষ প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান পূর্বে এই কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর থেকে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে বদলি হন। আবার সেই আওয়ামী লীগ শাসনামলেই প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নান সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে বদলী হয়ে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর এ উপাধ্যক্ষ পদে আসীন হন। এখানে থাকাকালেই ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি পান। তিনি একজন খাঁটি আওয়ামী লীগার বলেই বারবার পছন্দের পদে পোস্টিং এবং পদোন্নতি নিতে পেয়েছেন। কারণ, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গোয়েন্দা রিপোটের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে পোস্টিং দেয়া হতো।