Image description

পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বাসায় টাকার বান্ডিল পাঠানো সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রুহুল আমিন সিকদার একজন জামায়াত নেতা। ঘুষ কেলেঙ্কারির পর জেলা জামায়া‌তের সাংগঠ‌নিক সদস্যপদ মুলতবি করা হয় এই নেতার। 

এর আগে বিচারকের বাসায় ঘুষ পাঠানোর অভিযোগে আইনজী‌বী স‌মি‌তির সদস্যপদ স্থ‌গিত করা হয় পিপি রুহুল আমিনের। 

জামায়াত নেতা রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে শুধু বিচারকের বাসায় ঘুষ পাঠানোই নয়, আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদের কন্যাকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় আসামিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুতর অভিযোগ।

জানা গেছে, পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র জেলা জজ) নীলুফার শিরিনের বাসায় একটি মামলার তদবিরের জন্য প্রায় ৫০ হাজার টাকার বান্ডিল পাঠান ওই আদালতের পিপি রুহুল আমিন। এর পর বিচারক ‘ঘুষ সাধার’ অভিযোগ এনে ঢাকার বার কাউন্সিলের সচিবের কাছে চিঠি দেন। অভিযোগের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল; আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা আইনজীবী সমিতিতেও দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগে বিচারক নীলুফার শিরিন উল্লেখ করেন, বুধবার সকাল ৯টার দিকে সরকারি কৌঁসুলি রুহুল আমিনের একজন লোক তার বাসার গৃহকর্মীর কাছে একটি লাল ব্যাগ দিয়ে যান। ওই ব্যক্তি ব্যাগটি তাকে (বিচারক) দিতে বলে যান। ব্যাগটি খুলে তিনি দেখতে পান ভেতরে দুটি খাকি রঙের খাম। একটিতে একটি মামলার যাবতীয় কাগজপত্র, অন্য খামে ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডিল। তিনি টাকা গুনে দেখেননি। তবে অনুমানের ভিত্তিতে বোঝা যায়, এতে ৫০ হাজার টাকা আছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, মামলাটির বিষয়ে পিপি আরো দুই দিন আগে থেকে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠান। তবে কোনো উত্তর দেননি বিচারক। ভেবেছিলেন উত্তর না পেলে তিনি (পিপি) থেমে যাবেন। 

এভাবে ঘুষ পাঠানোতে বিচারক মানসিকভাবে অত্যন্ত অপমানিত ও তীব্র রাগবোধ করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।

জেলা বারের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি ও জেলা জজের সরকারি কৌঁসুলিকে প্যাকেটটি দেখিয়েছেন উল্লেখ করে বিচারক আরো লেখেন, এর আগেও পিপি রুহুল আমিন তার কাছে বিভিন্ন সময় আসামিপক্ষের হয়ে তদবির করেছেন। তার মনমতো আদেশ না হলে তিনি আদালতে সাংবাদিক ডেকে আনেন। এ ছাড়া পটুয়াখালীতে আলোচিত জুলাই শহীদের মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায়ও তিনি (পিপি) আসামিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে জানা যায়।

অভিযোগের পর জেলা আইনজীবী সমিতি রুহুল আমিনের সদস্য পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করে তাকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফ মো. সালাহউদ্দীন বলেন, “এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার জরুরি সভা করে রুহুল আমিনের সদস্য পদ সাময়িক স্থগিতের পাশাপাশি তাকে নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বার কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পাঠানো হবে।”

এদিকে একই অভিযোগে জেলা জামায়া‌তের সাংগঠ‌নিক সদস্যপদও মুলতবি করা হয় অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমিনের।

বৃহস্প‌তিবার (২২ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পটুয়াখালী জেলা শাখার সে‌ক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম আল কায়ছারী স্বাক্ষ‌রিত এক প্রেস বিজ্ঞ‌প্তি‌তে বলা হয়, পটুয়াখালী বার সমিতির সদস্য পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভো‌কেট রুহুল আমীনের পেশাগত অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রকাশিত খবরের প্রতি স্থানীয় পৌরসভা ও জেলা সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নজরে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে দায়িত্বশীলরা আনুষ্ঠানিক সভায় বসেন। সভায় বিষয়টি আলোচনা পর্যালোচনা করে অ্যাডভোকেট রুহুল আমিনের সাংগঠনিক সদস্য পদ মূলতবি করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তিন দিনের সময়সীমায় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। প্রতিবেদনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে পিপি রুহুল আমিন সিকদার বিচারককে টাকা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শীর্ষনিউজ