
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ৮টি অঙ্গীকারনামা থাকলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তাই সনদ চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে আবারও আলোচনা শুরু করবে ঐকমত্য কমিশন। জামায়াত-এনসিপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল, জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন চায়। তবে স্থায়ী আইনিভিত্তি দিতে এলএফও, গণপরিষদ নাকি গণভোট এ নিয়ে দলগুলোর ভিন্নমত রয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দুই পর্বের ধারাবাহিক আলোচনায় ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। প্রথম পর্বে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের ৬৪ বিষয়ে ঐকমত্য হয়। দ্বিতীয় পর্বে দলগুলো একমত হয় ১১টি বিষয়ে।
পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ ও রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ ৯টি বিষয়ে দলগুলো আপত্তি জানায়। তবে সিদ্ধান্ত দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।
গত শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, এই সনদ জনগণের সর্বজনীন অভিপ্রায়। এ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বিষয় নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করার কথাও জানায় ঐকমত্য কমিশন।
তবে জুলাই সনদের খসড়ার কিছু বিষয়ে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কিছু কিছু বিষয় অসামঞ্জস্যতা আছে। কিছু বিষয় সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি। এটা হতেই পারে। এগুলো আমরা কারেকশন করে আমাদের মতামত দিয়ে দেব। ২০ আগস্টের মধ্যে মতামত দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এর মধ্যেই দিতে পারবো।’
জামায়াত বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারকেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন হতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘জাতির কাছে উনাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হলে এ সরকারকে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে অবশ্যই এ সরকারের মেয়াদের ভেতর নির্বাচনের পূর্বেই এর আইনি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে। সাংবিধানিক ইস্যু যেগুলো আছে সেগুলো গণভোটে যেতে পারেন। অতীতে তো এমন হয়েছে। তাহলে আমরা দিতে পারবো না কেন? এটা তো নতুন কিছু না।’
গণপরিষদের দাবি জানিয়ে এনসিপি বলছে, জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে সনদ বাতিলের ঝুঁকি থাকবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ফরিদুল বলেন, ‘প্রক্লেমেশনের ওপরে আর কোনোকিছু হয়না। প্রক্লেমেশনের নিচে সংবিধান৷ সংবিধান প্রক্লেমেশনের ওপরে যেতে পারবে না। আবার যেকোনো আইন সংবিধানের ওপরে যেতে পারবে না। তাহলে কোনো আইন করে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করলে কখনোই এটা বলা যাবেনা যে এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। উনাদের এ চিন্তাতে ঘাটতি রয়ে গেছে। আমাদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইনি দিক পর্যালোচনা করে আমরা বলেছি এটা গণপরিষদ করতে হবে। অন্তত সংবিধানের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো।’
এদিকে দেশে এই মুহূর্তে গণভোটের পরিবেশ নেই বলে মনে করে এবি পার্টি।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যরিষ্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘যে প্রসেসের মধ্যে সরকার এক বছর ধরে দেশ চালাচ্ছে এ প্রসেসেই এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আগামী সংসদ এসে এটা রেটিফাই করে দিবে। এবং এ রেটিফিকেশন যে করবে এটার একটা লিগ্যাল স্ট্যাটাস এ সনদে দিতে হবে। লেখা থাকতে হবে যে সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে এগুলো সব পাশ করে ফেলতে হবে। গ্রামে গঞ্জে গিয়ে সাধারণ মানুষকে এগুলা বোঝানো যে উচ্চ কক্ষ থাকবে কি না বা নিম্ন কক্ষ থাকবে কি না, নির্বাচন হবে কি এগুলো প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা করে নাগরিককে বুঝাতে হবে। এ বুঝানোর সময় আমরা এখন পাব কি না?’
খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির উল্লেখ নেই। এর আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ফের আলোচনা শুরু হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘বিভিন্নরকম অপিনিয়ন আসছে। অপিনিয়নগুলো কমিশন এক জায়গায় করছে, কমিশন নিজেরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যখন বসবে তখন এ সমস্ত বিশেষজ্ঞ মতামত কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শেয়ার করবে। দলগুলো এটা নিয়ে আলোচনা করবে। তারপর একটা চূড়ান্ত জায়গায় যাবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলই জনগণের প্রতিনিধি। সুতরাং, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা যখন এক জায়গায় বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন আমাদের কি দ্বিমত করার সুযোগ আছে যে এটাই জনগণের পক্ষে গৃহীত একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত?’
বাস্তবায়নের পদ্ধতি ঠিক হওয়ার পরপরই সব রাজনৈতিক দল সই করার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত রূপ পাবে জুলাই সনদ।