Image description

ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক গুরুতর অসুস্থ। তিনি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ল্যাবএইড হাসপাতাল তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে।

ল্যাবএইড গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. এ এম শামীম প্রথম আলোকে আজ সোমবার সকালে জানান, আহমদ রফিকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তাঁর কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত।

কবি ও বহুমাত্রিক লেখক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক  অসুস্থ অবস্থায় নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরে ভাড়া বাসায় একাই ছিলেন। গতকাল রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনসহ দেশের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়, সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিংবদন্তিসম প্রায় শতাব্দীর সমান বয়সী মানুষটি বিছানায় শায়িত। প্রায় অচেতন। শুকিয়ে গেছে শরীর।থাকার মধ্যে আছে শ্বাসটুকু। কানের কাছে মুখ নিয়ে বেশ কয়েকবার ‘কেমন আছেন?’ জানতে চাইলে ভাষাসৈনিক,  ক্ষীণকণ্ঠে বললেন, ‘খারাপ, খুব খারাপ’।

বেশ কিছুদিন থেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসমাইল সাদী। তিনি জানান, আহমদ রফিকের দেখভাল করেছেন ব্যক্তিগত সহকারী আবুল কালাম।

আহমেদ রফিকের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এসেছিল ২০১৯ সাল থেকেই। সে বছর চোখে অস্ত্রোপচার করলেও অবস্থার বেশি হেরফের হয়নি। ২০২৩ সাল থেকে প্রায় দৃষ্টিহীন।

ভাষাসৈনিক আহমদ রফিকের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা গেল ব্যক্তিগত সহকারী আবুল কালামের কাছ থেকে। কালাম ৩৬ বছর ধরে তাঁর সঙ্গে আছেন। বললেন, ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভাঙার পর থেকেই আহমদ রফিকের অবস্থা বিশেষ ভালো যাচ্ছিল না। এর মধ্যে দৃষ্টি হারানোর পর লেখালেখি বন্ধ হওয়ায় খুবই মানসিক কষ্টে ছিলেন।

আহমদ রফিকের জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাঁর স্ত্রী ইন্তেকাল করেছেন ২০০৬ সালে। তিনি নিঃসন্তান। ঢাকায় তাঁর তেমন কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। নিজের লেখা ও সংগ্রহ করা বিস্তর বই ছাড়া সম্পদ বলতেও কিছু নেই। কবিতা, প্রবন্ধ, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, গবেষণা মিলিয়ে তাঁর লিখিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। সর্বশেষ দুটি বই, সময় প্রকাশন থেকে ভারত-পাকিস্তান বাংলাদেশ কথা, এই সময় পাবলিকেশনস থেকে প্রবন্ধগ্রন্থ শিল্প-সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ সালের অমর একুশের বইমেলায়। রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ হিসেবে আহমদ রফিক দুই বাংলায় অগ্রগণ্য। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পেয়েছেন ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি। দেশে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন এই বহুগুণে গুণান্বিত মানুষটি।

গত মাসের প্রথম দিকে আহমদ রফিকের অবস্থা বেশ খারাপ হয়েছিল। তাঁকে ১২ জুলাই ভর্তি করা হয়েছিল মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ১৯ জুলাই বাসায় নিয়ে আসা হয়। লাঠিতে ভর দিয়ে ঘরের ভেতরেই একটু হাঁটাচলা করতেন। এ মাসের ৭ তারিখ থেকে চলাচলের শক্তি একেবারেই হারিয়ে ফেলেছেন। ব্যক্তিগত সহকারী জানালেন, পায়ের ওপর ভর দিয়ে আর দাঁড়াতে পারেন না। আত্মীয়স্বজনও কেউ নেই। ফলে বাধ্য হয়েই তিনি এই বাসাতেই অবস্থান করছেন। সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তরফে সংস্কৃতি উপদেষ্টা পাঁচ লাখ টাকার সহায়তা দিয়েছিলেন।