Image description

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের অংশ হিসেবে নির্মাণাধীন টিএসসি ভবনের দেয়ালে গ্রাফিতি অংকন করা হয়েছে। গ্রাফিতিতে মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে ‘পাথর’ মেরে হত্যা, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার ও শিশু আছিয়া হত্যাকাণ্ডের চিত্রও তুলে ধরা হয়। এ ঘটনায় আপত্তি জানিয়ে ব্যবসায়ীকে হত্যা ও মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার অংশটি নিয়ে গ্রাফিতি থেকে মুছে ফেলা নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গ্রাফিতি থেকে ঘটনা দুটির অংশ মুছে ফেলার নির্দেশনা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ উঠেছে ঘটনা দুটিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান নীতিনির্ধারক শিক্ষক-কর্মকর্তারা।

ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য সরকার বলেন, গ্রাফিতি শিল্প একটি প্রতিবাদের মাধ্যম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও আমাদের ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি আঁকতে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। আর এখন সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পাবে তাই প্রশাসন একটি অংশ মুছে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই। এ ধরনের আচরণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিবে না। এই আচরণ গত ফ্যাসিস্ট প্রশাসনের মতো। এ ঘটনার সাথে যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা জড়িত এবং পূর্বে যারা গ্রাফিতি অংকনে বাঁধা দিয়েছে, তাদের তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে গ্রাফিতি অংকন বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক রায়হানা আক্তার বলেন, জুলাই কেন্দ্রীক গ্রাফিতি অংকনের কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু গ্রাফিতিতে স্পেসিফিক কোনো বিষয় রাখা যাবে কি যাবে না, এমন কোনো নির্দেশনা প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়নি। উপ-কমিটি আলোচনার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক বিষয়বস্তু গ্রাফিতির মাধ্যমে উপস্থাপন করেছে। ৫ আগস্ট উদ্বোধনের দিন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিবের মাধ্যমে মৌখিকভাবে গ্রাফিতি থেকে মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ড এবং মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দুর্ঘটনার অংশটি মুছে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, উপ-কমিটিকে কাজের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিলো। ‘অনুমতি নিতে হবে’, ‘প্রশাসন অনুমতি দিবে’ জানালে দায়িত্ব নিতাম কিনা, সেটা ভাববার বিষয় ছিলো। তাহলে তো আছিয়ার ছবিটাও মুছতে হয়। গত এক বছরে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে! বাদ যায়নি জুলাই শহীদ পিতার কন্যাও, আত্মহননে মুক্তির পথ খুঁজেছে মেয়েটা।

এ বিষয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মো. অলি উল্লাহ বলেন, যেহেতু জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গ্রাফিতি অংকন করা হয়েছে। একারণে জুলাই অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট বিষয়ই গ্রাফিতিতে রাখতে প্রশাসন বলেছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক এবং কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা বলেন, জুলাইয়ের গ্রাফিতি উদ্বোধনের সময় আমি ছিলাম না এবং গ্রাফিতিটা আমি দেখিনি ভালোভাবে। তবে আমাদের গ্রাফিতির মুল বিষয়বস্তু হতে হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে। এর বাইরের কোনো চিত্র সংযুক্ত করা হলে সেটি অপ্রাসঙ্গিক হবে। হয়তো সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই অপ্রাসঙ্গিক চিত্রগুলো মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। 

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানিয়ে রবিবার উপাচার্য বরাবর শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিয়েছে। স্মারকলিপিতে গ্রাফিতি মুছে ফেলার অপচেষ্টা বন্ধ করার পাশাপাশি যারা এই অপচেষ্টায় জড়িত তাদেরকে তদন্ত সাপেক্ষে শান্তির আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এমন বাকস্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।