
প্রকল্প মানেই দুর্নীতি। প্রকল্প গ্রহণ মানেই শত শত কোটি টাকা লুটপাট। ভারত পালিয়ে যাওয়া হাসিনা রেজিমে এর ব্যতিক্রম দেখা যায় নি কোনোটিতে। আর প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ সরিয়ে নেয়া কিংবা তোষাখানায় ডাকাতির সব হিস্যা যেতো হাসিনা পরিবারে। পরিবারের সদস্য কিংবা শেখ পরিবারঘনিষ্ট কারো হাত ছাড়া এমন লুন্ঠন সম্ভবই হতো না। সরকারি ‘কেনাকাটা’র ছলে অর্থ লুটের পরিকল্পনাটি হতো পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকৃত খরচের কয়েকগুণ বেশি বাড়িয়ে ধরা হতো প্রকল্প ব্যয়। পাস হওয়া সেই ‘প্রকল্প’ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ব্যয় বাড়ানো হতো আরো কয়েকগুণ। এভাবে প্রতিটি ‘উন্নয়ন প্রকল্প’কে হাসিনা এবং তার মাফিয়াচক্রের সদস্যরা হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। এমনই একটি সরকারি কেনাকাটা বা প্রকল্পের নাম ‘মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ’ প্রকল্প বা ‘এমআরপি’। যা পরবর্তীতে ‘ডি-লারু কেলেঙ্কারি’ হিসেবে পরিচিত পায়।
অনুসন্ধানের তথ্য মতে, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলার কথা বলে ২০১০ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রকল্প হাতে নেয় শেখ হাসিনার সরকার। প্রকল্পটি ৮০ কোটি টাকার মধ্যেই সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু অর্থ লোপাটের লক্ষ্যে কয়েক দফায় প্রকল্পটির খরচ নিয়ে ঠেকানো হয় প্রায় ১১শ’ কোটি টাকায়। যা থেকে লোপাট করা হয় ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে যে অর্থ লুটপাট হয়েছে সেটির প্রমাণ মেলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত নি¤œ মানের পাসপোর্ট বই থেকে।
রেকর্ডপত্র বলছে, ২০১০ সালে গৃহিত প্রকল্পের আওতায় পাসপোর্ট বই কেনার জন্য ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার আহ্বান করে বহির্গমণ ও পাসপোর্ট অধিদফতর। টেন্ডার সম্পন্ন করার পর ২০১৩ সালে পাসপোর্ট বুক সরবরাহকারী ইংল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ডি-লারু’র সঙ্গে চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী ২০১৫ সালে আড়াই কোটি পাসপোর্টের মধ্যে প্রথম দফা মাত্র দেড় কোটি পাসপোর্ট বই পাসপোর্ট অধিদফতরকে বুঝিয়ে দেয় ডি-লারু। পরিকল্পনা, ক্রয় কমিটি গঠন, টেন্ডার আহ্বান, কারিগরি কমিটি, মূল্যায়ন কমিটি, রিসিভ কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কেনাকাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বহির্গমণ ও পাসপোর্ট অধিদফতরের তৎকালিন অতিরিক্ত মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম,পরিচালক সিরাজউদ্দীন, মো: ফজলুল হক, পরিচালক সেলিনা বানু, এটিএম আবু আসাদ, এসএম নজরুল ইসলাম, মুহাম্মদ শিহাবউদ্দিন খান, মাজহারুল ইসলাম, নাদিরা আক্তার ও রোজী খন্দকার। তাদের সংশ্লিষ্টতায় কেনা হয় এম.আর.পি. পাসপোর্ট বই। প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীর অনুগত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাসুদ রেজোয়ান। প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাটের নিখুঁত এই সাফল্যে (?)র পুরষ্কারস্বরূপ পরবর্তীতে মাসুদ রেজওয়ানকে করা হয় পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক।
এমআরপি পাসপোর্ট প্রকল্পের দুর্নীতি ধরা পড়ে যখন প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত পাসপোর্ট বইগুলো কোয়ালিটি ঠিক আছে কি না সেটি যাচাইয়ে পাঠানো হয়। প্রাথমিক পরীক্ষায়ই পাসপোর্ট বইগুলো নি¤œমানের বলে ধরা পড়ে। কারণ, বইগুলো ছাপানোর সময় প্রতিদিন ২ থেকে ৩শ’ বই নষ্ট হয়ে যায়। টেন্ডারের শর্ত ছিলো পাসপোর্ট বইয়ে ৫২টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে। বাস্তবে দেখা গেলো, নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে মাত্র ৩২টি। গুরুত্বপূর্ণ ২০টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যই কম দেয় ডি-লারু।
নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য কম দেয়া বইগুলো পাসপোর্ট অধিদফতরকে গছানোর জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রথম দফায়ই পাসপোর্টের তৎকালিন মহাপরিচালক, প্রকল্প পরিচালক, টেকনিক্যাল কমিটি, একসেপ্টেন্স কমিটিকে ৩৫ কোটি টাকা ঘুষ দেয়। টেন্ডারে কেনা হয় তিন ক্যাটাগরির পাসপোর্ট বই। সাধারণ পাসপোর্ট , অফিসিয়াল পাসপোর্ট এবং ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট । বইগুলোতে যথাযথ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য না থাকার কারণে সহজেই জাল হয় হাজার হাজার পাসপোর্ট। এ মওকায় হাজার হাজার অফিসিয়াল পাসপোর্ট জাল হয়। সাধারণ মানুষের হাতে চলে যায় কয়েক হাজার অফিসিয়াল পাসপোর্ট। অফিসিয়াল পাসপোর্ট সাধারণ মানুষের হাতে চলে যাওয়ার ঘটনায় তখন বেশ কয়েকটি মামলাও হয়। এ নিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের পরষ্পর চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে বিষয়টি গণমাধ্যমে চলে আসে। দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়টি অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু কিছু দূর যেতেই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। বেড়িয়ে আসে দুর্নীতির সঙ্গে হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর সংশ্লিষ্টতা।
এম.আর.পি.পাসপোর্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো: মাসুদ রেজওয়ান। কয়েক দফা পিডির মেয়াদ বাড়িয়ে মাসুদ রেজওয়ানকে রাখা হয় এমআরপি প্রকল্পে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় মাসুদ রেজওয়ানকে মহাপরিচালক (ডিজি) করে পাসপোর্টেই বহাল রাখেন তারিক সিদ্দিকী। আর এই তারিক সিদ্দিকীর নির্দেশেই দুদকের তৎকালিন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বিরাট এই দুর্নীতির অনুসন্ধান ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে তারিক সিদ্দিকীরই ইশারায় মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশনও বিষয়টি চেপে যান। ‘ডি-লারু কেলেঙ্কারি’খ্যাত আলোচিত এই দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করেন যথাক্রমে: ফরিদ আহম্মেদ পাটোয়ারি, কাজী শফিকুল আলম, মো: শফিউল্যাহ, শাহীন আরা মমতাজ, আবু বকর সিদ্দিকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। এসব কর্মকর্তাদের সবাই এখন অবসরে। বর্তমানে অনুসন্ধানটি কি অবস্থায় রয়েছে সেটি দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান, অনুসন্ধান-১,অনুসন্ধান-২, মানিলন্ডারিংসহ কয়েক শাখায় খোঁজ নিয়েও হদিস মিলছে না। এ বিষয়ে সংস্থাটির মুুখপাত্র ও মহাপরিচালক মো: আকতার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেন নি।
দুদকের একাধিক সূত্র জানায়, এমআরপি পাসপোর্ট প্রকল্পের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক বেশ কিছু রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছিলো। এর মধ্যে একটি ছিলো গুণগত মান পরীক্ষা প্রতিবেদন। মান পরীক্ষার জন্য ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর সংস্থাটি সায়েন্স ল্যাটবরেটরির ‘ডিজিগনেটেড রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্ট’ সার্ভিস সেকশনকে (এমএসএস) তিন ধরণের পাসপোর্টের নমুনা কপি পাঠানো হয়। পরীক্ষা শেষে ওই বছর ১৪ ডিসেম্বর এমএসএস সেকশন প্রতিবেদন পাঠায়। ডিআরআইসিএম’ কে পাসপোর্টের ১৪৭টি স্পেসিফিকেশন যাচাই করার জন্য নমুনা দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির মেজারমেন্ট সার্ভিস সেন্টার (এমএসএস) টেন্ডারে উল্লেখিত স্পেসিফিকেশন যাচাই করে। নমুনা পাসপোর্টগুলো হচ্ছে, সাধারণ পাসপোর্ট (নং-বিএম-০৫৯১০০১), অফিসিয়াল পাসপোর্ট (নং-বিএমজি-০০২৩০০১) এবং একটি ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট (নং-০০০৭) । এমএসএস’র পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়ম, টেন্ডারে উল্লেখিত স্পেফিকেশন এবং ডি-লারু সরবরাহকৃত এমআরপি পাসপোর্ট বইয়ে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
পাসপোর্ট অধিদফতরের টেন্ডার স্পেসিফিকেশনে বলা হয়েছিলো, এমআরপি পাসপোর্ট বইয়ের পেছনের কভার পৃষ্ঠার সিকিউরিটি ফাইবার হবে ৭০ থেকে ৭৫টি। এমএসএস পরীক্ষায় সিকিউরিটি ফাইবার মিলেছে ২৫ থেকে ৩০টি । অর্থাৎ স্পেসিফিকেশনের অর্ধেকের কম ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পাসপোর্ট বই।
টেন্ডারে ‘ভিসা পেজ’র ১৯ নম্বর স্পেসিফিকেশনে বলা হয়েছে, এমআরপি বইয়ে ‘রেইন বো প্রিন্টিং’ থাকতে হবে। এমএসএস’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘নন-কমপ্লায়েন্ট’। অর্থাৎ বইতে কোনো রেইন বো প্রিন্টিং নেই। ২১ নম্বর স্পেসিফিকেশনে বলা হয়েছিলো, পাসপোর্ট বুকে ‘ইন্টিগ্রেটেড পেজ নম্বর’ থাকতে হবে। যা ইউভি লাইটে দেখা যাবে। কিন্তু ডি-লারুর দেয়া স্যাম্পলে ‘ইন্টিগ্রেটেড পেজ নম্বর’ দেখালেও সরবরাহকৃত বইগুলোতে সেটি পাওয়া যায়নি। এ কারণে সহজেই এমআরপি পাসপোর্ট জাল করা সম্ভব হয়েছে। এমএসএস’র রিপোর্টে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘নন-কমপ্লায়েন্ট’।
২৬ নম্বর স্পেসিফিকেশনে বলা হয়েছে, প্রতি পৃষ্ঠায় ৬০ থেকে ৬৫টি ‘সিকিউরিটি ফাইবার’ থাকতে হবে, যা ইউভি লাইটে দেখা যাবে । কিন্তু ডি-লারু স্যাম্পল বইতেই সাধারণ পাসপোর্টে ২৫ থেকে ৩০টি সিকিউরিটি ফাইবার রয়েছে-মর্মে বলা হয়। কিন্তু সরবরাহ করা বইয়ে পাওয়া গেছে ২০ থেকে ২৫টি ফাইবার। অফিসিয়াল পাসপোর্টের স্যাম্পলে দেয়া হয় ২৫ থেকে ৩৫টি ফাইবার। সরবরাহ করা পাসপোর্ট বইতে মিলেছে ২৫ থেকে ৪০ টি করে ফাইবার। ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট বইয়ের স্যাম্পলে ছিলো ২৫ থেকে ৩৫টি ফাইবার। কিন্তু এমএসএস রিপোর্টে পাওয়া গেছে ২৫ থেকে ৪০টি ফাইবার। অর্থাৎ গড়ে ৪০টি ফাইবার কম দিয়ে বই সরবরাহ করা হয়েছে। পাসপোর্টের টেন্ডার স্পেসিফিকেশনের ৪০ নম্বরে (বায়োডাটা পেজ) রেইনবো প্রিন্ট থাকার কথা বলা হয়েছে। যা ইউভি লাইটে দেখা যাবে। কিন্তু ডি-লারু স্যাম্পলেই এটি দেয়নি। সরবরাহকৃত বইয়েও এটির অস্তিত্ব মেলেনি। এমএসএস রিপোর্টে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নন-কমপ্লায়েন্ট’।
টেন্ডারের ৪৪ নম্বরের চাহিদা অনুযায়ী পাসপোর্ট বইতে ৮৫ থেকে ৯০টি সিকিউরিটি ফাইবার থাকতে হবে। সাধারণ এবং অফিসিয়াল পাসপোর্টের স্যাম্পলে এটি আছে ৩৫ থেকে ৪০টি। ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্টে আছে ৩৫ থেকে ৪০টি। টেন্ডারের ৪৫ নম্বর স্পেসিফিকেশনে রয়েছে সেকেন্ডারি পোট্রেট (ঘোস্ট ইমেজ), যা ইউভি লাইটে দেখা যাবে। সরবরাহ করা কোনোপ্রকার পাসপোর্ট বইতেই এটির অস্তিত্ব নেই। এমএসএস’র রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘নন-কমপ্লায়েন্ট’।
টেন্ডারের ৪৬ নম্বর স্পেসিফিকেশনে রয়েছে ইউভি পাসপোর্ট নম্বর। এটি ডি-লারুর স্যাম্পলে নেই, সরবরাহও করেনি। পাসপোর্ট টেন্ডারের ১৩ নম্বর স্পেসিফিকেশনে বলা হয়েছে, বইয়ের শুধুমাত্র ফ্রন্ট কভার হবে ১৩ মাইক্রনের সোনালি ফয়েল এমবোসিং। পুরুত্ব হবে ৩৫০ মাইক্রন। এমএসএস’র রিপোর্ট বলছে ‘নট-পারফর্মড’। অর্থাৎ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী গোল্ডেন এমবোসিং দেয়া হয়নি। ডাটা পেজ ব্যতিত পেজের ডিজাইন সংক্রান্ত ৩৭ নম্বর স্পেসিফিকেশনে আছে রেইনবো প্রিন্টিং, এন্টি স্ক্যান প্যাটার্ন (স্টার টাইপ)। বইটি যাতে স্ক্যানিং করা না যায় সেই লক্ষ্যে এন্টি স্ক্যান প্যাটার্ন রাখা হলেও সরবরাহ করা ডি-লারুর কোনো রকম পাসপোর্টেই এটি নেই। ফলে বর্তমান এমআরপি পাসপোর্ট বইগুলো সহজেই স্ক্যান করে জাল করা সম্ভব। ৩৮ নম্বর ‘প্ল্যানচিস্ট’ সম্পর্কে এমএসএস’র রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘নন-কমপ্লায়েন্ট’। টেন্ডারে ‘হাই সিকিউরিটি পেপার’ ৩৯(১) নম্বর স্পেসিফিকেশনে বলা হয়েছে, ইউভি লাইটের স্পর্শকাতর তন্তু, অদৃশ্য হলুদ, নীল এবং লাল কালি। ফাইবারের দৈর্ঘ্য হবে ৩/৩.৫ মিলিমিটার। ফাইবারের পুরুত্ব হবে ২০/২৫ ডেসিটেক্স। ওজন হবে ৯৮ গ্রাম। সাধারণ পাসপোর্টের স্যাম্পলে রয়েছে ৯৯.২ গ্রাম, সরবরাহ করা হয় ৯৬.৬ গ্রাম। অফিসিয়াল পাসপোর্টের স্যাম্পলে ৯৮.৮ গ্রাম সরবরাহে ৯৯.২ গ্রাম এবং ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্টের স্যাম্পলে ১০০.২ গ্রাম এবং সরবরাহে ৯৫.৯ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এখানে চিকন ফাইবার দিয়ে পেজের পুুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে।
৪০ নম্বর স্পেসিফিকেশনে ইনার কভার পেজ ৫০ শতাংশ কটন এবং ৫০ সেলুলজ দেয়ার কথা থাকলেও সেটি দেয়া হয়নি। এমএসএস’র প্রতিবেদনে বলা হয় ‘নট পারফর্মড’। এর ফলে বইগুলো তাপামাত্রার তারতম্য ঘটলেই টিউবের মতো বেঁকে যাচ্ছে। ৭৩ নম্বর স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পেজ নম্বরে ইন্টিগ্রেটেড ব্যাকগ্রাউন্ড থাকার কথা। কিন্তু ডি-লারু সাধারণ পাসপোর্টের স্যাম্পলেই এটি দেয়নি। সরবরাহকৃত সাধারণ পাসপোর্টেও এটি নেই। উচ্চতর পরীক্ষায় এরকম অসংখ্য বিচ্যুতি পাওয়া যায় সরবরাহকৃত এমআরপি পাসপোর্টে। কিন্তু তারেক সিদ্দিকীর ইশারায় এম.আর,পি পাসপোর্টের দুর্নীতি অনুসন্ধান পর্যায়ে ‘গুম’ করে দেয়া হয়। আর এভাবেই অনুদঘাটিত থেকে যায়, হাসিনার মাফিয়াচক্রের সদস্য তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, তার ঘনিষ্ট সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম.আর.পি’র পিডি (পরবর্তীতে পাসপোর্টের ডিজি) মাসুদ রেজওয়ান এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা। অধরা থেকে যায় বৃহৎ এই কেনাকাটা সংশ্লিষ্ট সকল দুর্নীতিবাজ। বৃহৎ এই দুর্নীতির নাটের গুরু মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে সদর্পে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকীর দলদাস মাসুদ রেজওয়ান। এখন তিনি ‘আর. গ্লোবাল সল্যুশন’ নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্নধার বলে জানা গেছে।