Image description

সারা দেশে ছোঁয়াচে বা ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।  কোনো পরিবারে একজনের জ্বর হলে ছড়িয়ে পড়ছে অন্যদের শরীরেও। শিশু থেকে বয়স্ক সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, মৌসুমি এ জ্বরের জন্য দায়ী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস।

প্রতিবছর এ সময় জ্বরে আক্রান্ত হয় মানুষ। ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, থুতু ও সর্দির মাধ্যমে একজন থেকে জীবাণু আরেকজনের মধ্যে ছড়ায়।

কয়েক দিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও চেম্বারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার থেকে পাঁচ দিনের জ্বর নিয়ে আসছে রোগীরা। একজনের জ্বর হলে পরিবারের অন্যরাও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।

 
মৌসুমি জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও টাইফয়েড নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসছে। তবে বেশির ভাগ আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ ভাইরাস ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বরে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চার হাজারের বেশি জ্বরের রোগী আসে। প্রতি কর্মদিবসে রোগী আসে  ছয় শর বেশি।

যা সাধারণ সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা আরো এক হাজার বেড়ে প্রায় পাঁচ হাজার হয়। প্রতিদিন রোগী আসছে আট শর বেশি। যা সাধারণ সময়ের প্রায় তিন গুণ।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগের দৈনন্দিন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কয়েক দিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশি এবং শরীর ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

 
বহির্বিভাগে সাধারণ সময়ে একজন চিকিৎসক গড়ে ৪০ জন রোগী দেখলেও এখন তাঁদের রোগী দেখতে হচ্ছে ৭০-৮০ জন।

ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মেহেদী হাসান বলেন, এক মাস ধরে ভাইরাল জ্বরের রোগী বেশি পাচ্ছি। পরিবারের একজন সদস্য প্রথমে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাড়ির অন্যরাও একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছে। উপসর্গগুলো প্রায় একই শরীর-ব্যথা, গলা খুসখুসে ব্যথা, মাঝারি জ্বর, মাথা ভার ভার লাগা এবং কিছু ক্ষেত্রে হালকা কাশি।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজিস্ট ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন বলেন, একজন জ্বরে আক্রান্ত হলে দেখা যাচ্ছে পরিবারের অন্য সদস্যরাও জ্বরে ভুগছেন। এসব রোগীর মধ্যে ১০ শতাংশ ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে। ধারণা করা হয়, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরো বেশি। তবে নমুনায় শনাক্ত হার কম। এ ছাড়া চিকুনগুনিয়া ও টাইফয়েডের উপসর্গ নিয়েও অনেক রোগী আসছে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, মৌসুমি এ জ্বরের জন্য দায়ী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। এটি করোনাভাইরাসের মতো। সাধারণত ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, থুতুু ও সর্দির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায়।

তিনি বলেন, ভাইরাল এ জ্বর এক বাসায় ঢুকলে একে একে সবাই আক্রান্ত হচ্ছে।  ভাইরাসটি খুব ত্রুত ছড়ায়। ক্লাসিক্যাল জ্বর থেকে এবারের জ্বরে লক্ষণ কিছুটা ভিন্ন। শরীর ব্যথা, সর্দি-কাশি, মাথা ব্যথা, শরীরে র‌্যাশ থাকছে। অনেক রোগী ভাইরাল জ্বর থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এটা ভিন্ন কোনো ভাইরাস কি না দেখা দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে তা হচ্ছে না। 

চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকুনগুনিয়ার চেয়ে গায়ে ব্যথা কম হয়। চিকুনগুনিয়ায় হাড়ের সন্ধিতে ও মাংসের পেশিতে অনেক ব্যথা হয়ে থাকে। গায়ে দ্রুত র‌্যাশ চলে আসে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পাতলা পায়খানা হওয়া, পেট ব্যথা—এগুলো একটু বেশি দেখা যাচ্ছে।  করোনা রোগীদের জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট —এসব উপসর্গ ছিল। এখন কভিড রোগীরাও জ্বরের সঙ্গে গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, মাথা ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে আসছে।