Image description

ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। তবে এ বিষয়ে ঘোষণার আগেই সিলেটে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে গড়ে ১০ জন করে প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। প্রবাসী রয়েছেন ১৭ জন।

রাজনৈতিক দল, সম্ভাব্য প্রার্থী, ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয়টি আসনে এ যাবৎ সম্ভাব্য ৬০ জন মনোনয়নপ্রত্যার্শী তৎপর আছেন। শুধু বিএনপিদলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীই ৩৬ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের পাঁচ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দুই উপদেষ্টা। তিন নারীও বিএনপির মনোনয়ন চান।

ছয় আসনে মাঠে ৬০ জন, বিএনপিরই ৩৬জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিস জেলার সব আসনেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট-১ আসন ছাড়া বাকি পাঁচ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের দুজন করে এবং গণ অধিকার পরিষদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ন্যাপের একজন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন।

মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসন :  সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেট সদর উপজেলা নিয়ে এ আসন।

বলা হয়ে থাকে, ‘সিলেট-১ আসন যার, সরকার তার।’ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীরা এখানে বিজয়ী হন।

২০১৮ সালে এখানে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। এবারও তিনি মনোনয়ন চান।

এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের একাধিকবারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তবে তাঁদের দুজনকে ছাপিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানের নাম জোর আলোচনায় রয়েছে।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দলের জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানকে ও খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর সভাপতি হাফিজ মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশাম হক। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জেলার সদস্যসচিব প্রণব জ্যোতি পালও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

সিলেট-২ : বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা ও বিশ্বনাথ পৌরসভা নিয়ে এই আসনে পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর এ আসনে সবচেয়ে শক্ত অবস্থান ছিল ইলিয়াসপন্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেও জোটগত কারণে শরিক দলকে আসন ছেড়ে দেন লুনা। এখানে তৎপর হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রবাসী নেতা হুমায়ুন কবির। এরই মধ্যে একাধিকবার দেশে এসে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে গেছেন তিনি। গত বুধবার তিনি ফের যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট এসেছেন। গত বৃহস্পতিবার ওসমানীনগর উপজেলায় এবং গত শুক্রবার বিশ্বনাথ উপজেলার সুধীসমাজের সঙ্গে তাঁর মতবিনিময় হয়েছে। এ আসনে জামায়াতে ইসলামী দলের সিলেট জেলার নায়েবে আমির অধ্যাপক আব্দুল হান্নানকে, খেলাফত মজলিস দলের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলীকে এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমির উদ্দিনকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

সিলেট-৩ : দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৩ আসন। এখানে ১০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী সরব আছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর মধ্যে আছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালিক এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা এম এ সালাম।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দলের প্রয়াত নেতা এম এ হকের ছেলে এবং মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম হক আদনান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামালও মাঠে তৎপর। এ আসনে জামায়াতে ইসলামী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদকে, খেলাফত মজলিস দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক দিলোয়ার হোসেনকে এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রেজওয়ানুল হক চৌধুরী রাজুকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এখানে এনসিপির ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ ও বাম জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সিরাজ আহমদ সক্রিয় আছেন।

সিলেট-৪ : জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ৯ জনকে মাঠে তৎপর দেখা গেছে। এর মধ্যে ছয়জনই বিএনপির। তাঁদের দুজন আবার প্রবাসী। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, গোয়াইনঘাটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বারের অ্যাডিশনাল পিপি আল আসলাম মুমিন। দুই প্রবাসী নেতা যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন আহমদ ও আব্দুল হকও আছেন তৎপর। সিলেট-১ আসনে প্রার্থী না হলে এ আসনে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থী হওয়ার জোর গুঞ্জন রয়েছে।

এখানে জামায়াতে ইসলামী জৈন্তাপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, খেলাফত মজলিস দলের কেন্দ্রীয় ওলামাবিষয়ক সম্পাদক মুফতি আলী হাসান উসামা এবং ইসলামী আন্দোলন সাঈদ আহমদকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে।

সিলেট-৫ : জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ১৬ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে ১২ জনই বিএনপির। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও চাকসুর সাবেক নেতা মামুনুর রশীদ মামুন, কানাইঘাটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী, জকিগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের জেলা আহ্বায়ক ইকবাল আহমদ তাপাদার, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের প্রচার সম্পাদক লুত্ফা খানম চৌধুরী স্বপ্না। পাঁচ প্রবাসী নেতাও এখানে তৎপর। এর মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব মরহুম আবুল হারিস চৌধুরীর মেয়ে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ব্যারিস্টার সামিরা তানজিম চৌধুরী, সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ড. অধ্যাপক জাকি মোস্তফা টুটুল ও অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন এবং নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শরীফ আহমদ লস্কর।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামী দলের নায়েবে আমির হাফিজ মাওলানা আনোয়ার হোসাইন খানকে, খেলাফত মজলিস ইমাম মুফতি আবুল হাসানকে ও ইসলামী আন্দোলন রেজাউল করীম আবরারকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া এখানে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক মাঠে তৎপর রয়েছেন।

সিলেট-৬ : বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ১৪ জন প্রার্থী প্রচারণায় আছেন। এর মধ্যে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ৯ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ পাঁচ প্রবাসী নেতা। বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী মনোনয়ন চাইছেন।  এ ছাড়া জাসাসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খান, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হ্যামলেটের সাবেক কাউন্সিলর আ ম অহিদ আহমদ, জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি কমর উদ্দিনের মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার পপি, সাবেক সংসদ সদস্য ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন লেছু মিয়ার মেয়ে সামিরা হোসেন এবং জেলা বিএনপির সহশিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক তামিম ইয়াহিয়া আহমদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, খেলাফত মজলিস দলটির যুক্তরাজ্য দক্ষিণ শাখার সভাপতি মাওলানা সাদিকুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন আজমল হোসেনকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গণ অধিকার পরিষদের প্রবাসী নেতা অ্যাডভোকেট জাহিদুর রহমান ও বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকীও মাঠে তৎপর।