Image description
নতুন নেতৃত্বে কারা

একেই বলে নেতা। যার একটা আহ্বান অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। গত বৃহস্পতিবার বিএনপির বিশাল র‌্যালি সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার বক্তব্যে গণতন্ত্রের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাতে মুখ দেখাদেখি বন্ধ না হয় সেই লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

সময়োপযোগী এ বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা গেল নিজ দল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিএনপির দুর্গ বলে খ্যাত রাজশাহীতে নিজ দলের মধ্যে বিভাজন বেশ ক’বছর ধরে চলে আসছে। বিশেষ করে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ। বিভাজনের কারণে কেউ কাউকে মানেনা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হয়েছে দু’ধারায়। ২০২১ সালে নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলে বিরোধের মাত্রা আরো বাড়ে। কমিটি নিয়ে রাজপথে চলে আন্দোলন। বিভক্তির কারনে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। প্রানহানির ঘটনাও ঘটেছে। কেন্দ্র থেকে নেতারা এসে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করে সফল হতে পারেননি। এরমধ্যে ঘোষণা হয়েছে আগামী রোববার নগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। আহ্বায়ক কমিটি সম্মেলন করতে ব্যস্ত। নগরজুড়ে সাজ সাজ রব। ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠ সংলগ্ন চত্বরে হবে সম্মেলন। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্মেলনকে সামনে রেখে হঠাৎ করে বদলে গেল বিরোধমান বিএনপি। তারেক রাহমানের সেই আহ্বান মুখ দেখাদেখি যেন বন্ধ না হয়। জাতীয় পর্যায়ের বক্তব্য হলেও রাজশাহী বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রভাব পড়ে। সবাই যেন রাতারাতি এক হয়ে গেল। যার প্রমাণ মেলে সম্মেলন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মালোপাড়াস্থ বিএনপি কার্যলয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে। দু’পক্ষের নেতারা এক টেবিলে বসে বক্তব্য রাখছেন। বর্তমান আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সচিব মো. নজরুল হুদা, ওয়ালিউল হক রানা, আসলাম সরকার। অন্যপক্ষে বিএনপি মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দীর্ঘদিন পালনকারী বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুর্নবাসন বিষয়ক সহ সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল হক মিলন, সাবেক ছাত্র নেতা রাজপথে সোচ্চার ছিলেন আবুল কালাম আজাদ সুইট, সাবেক কাউন্সিলর আনসার আলী, মনিরুজ্জামান শরিফ প্রমুখ।

সাংবাদিক সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শফিকুল হক মিলন। বেশ ক’বছর পর মুখ দেখাদেখি বন্ধ নেতাদের পাশপাশি হাসিখুশি ভাবে বসে থাকতে দেখে। এরা সবাই ব্যস্ত সময় পর করছেন সম্মেলন ঘিরে। নিজেদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও তারা দলের স্বার্থে এক। তাদের কথা অতিতের সব বিভেদ ভুলে আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ।

নেতাদের এমন সহ অবস্থান দেখে তৃনমূলের নেতাকর্মীরা ভিষণ খুশি। এখন মুখে মুখে ঘুরপাক খাচ্ছে এক প্রশ্ন কে কে হচ্ছেন নগর বিএনপির কান্ডারী। নির্বাচন হবে নাকি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে সবার আমলনামা আছে। তিনি বিচার বিশ্লেষণ করে কমিটি ঘোষণা দিতে পারেন। আয়োজকদের একজন বলেন আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন করার। সবকিছু নির্ভর করছে ভারপ্রাপ্ত চেয়রারম্যান তারেক রহমানের উপর।

বিএনপি ঘারানার বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী নেতারা বলছেন সামনে জাতীয় নির্বাচন। এদিকে লক্ষ্যরেখে আর বিভাজন নয়। প্রবীণ নবীনরা আসুক নেতৃত্বে। প্রবীণের অভিজ্ঞতা আর যুক্তি-আর তরুণের শক্তি মিলে হবে সৃষ্টি। তাছাড়া রাজশাহী নগর বিএনপির কমিটির প্রভাব পরে পুরো জেলাজুড়ে। অতীতে সংসদীয় ছয়টি আসনের নেতৃত্বে দিয়েছে মূলত নগর বিএনপি। দেশ এখন ক্রান্তিকাল পার করছে। নির্বাচনের মাস ঘোষণা হয়েছে। এর আগেই জেলা কমিটিও গঠন করা প্রয়োজন। রাজশাহী অঞ্চল যুগ যুগ ধরে বিএনপির দুর্জয় ঘাটি। আওয়ামী লীগ বার বার পরাজিত হয়েছে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির কাছে। যার প্রতিশোধ নিতে ফ্যাসিস্ট সরকারের পনের বছরে বিএনপির উপর সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে। এখন সময় বিভেদ নয় দল গোছানোর। বিগত দিনে যারা আন্দোলন সংগ্রামে নির্যাতন সয়েছে, জেল জুলুমসহ নানা অত্যাচার। ঐসব ত্যাগী স্বচ্ছ ইমেজের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হবে এটাই প্রত্যাশা।