
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার চৌকনন্দী গ্রামের বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ (২৬)। ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। পড়তেন নয়াটলা এইউএন মডেল কামিল মাদরাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষে। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেলস অফিসার হিসেবে।
রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তবুও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অংশ নেন গত বছরের ৪ আগস্ট ঢাকার কাওরান বাজারের ছাত্র-আন্দোলনে। সেই এক বিকেলের আন্দোলনই বদলে দেয় তার জীবন। পুলিশের ছোড়া একটি গুলিতে চিরতরে হারান দু’চোখের আলো।
গভীর হতাশা আর অন্ধকার নেমে আসে শুধু তার নয়, গোটা পরিবারেই। আন্দোলনে দৃষ্টি হারানো অন্যরা কেউ কেউ পেয়েছেন বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ। কিন্তু সাব্বিরের ভাগ্যে তা জোটেনি।
সেই দিনের স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে।
সাব্বির বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের ডাকে আন্দোলনে যাইনি। দেশের ভালোবাসা থেকেই অংশ নিয়েছিলাম ছাত্রদের আন্দোলনে। ৪ আগস্ট বিকেলে আমরা সোনারগাঁ মোড়ে অবস্থান নিই। হঠাৎ ওয়াসা ভবনের দিক থেকে ছোঁড়া গুলি আমার ডান চোখ দিয়ে ঢুকে বাম চোখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এক গুলিতেই দু’চোখ শেষ।
তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সহযোদ্ধারা প্রথমে পিজি হাসপাতালে, পরে নিউরোসায়েন্স, ঢাকা মেডিক্যাল, চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ঘুরিয়ে সিএমএইচ-এ ভর্তি করেন। দীর্ঘ এক মাস চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা জানান, রেটিনা, কর্নিয়া, ভিশন শেষ। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
এই ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যেও নতুন জীবনের আশায় বুক বাঁধছেন সাব্বির।
তিনি জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করেছি। বাবা, মা, স্ত্রী, তিন ভাই ও দুই বোন নিয়ে আমাদের সংসার। সরকারিভাবে ৬ লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছি, যা ইতোমধ্যে চিকিৎসা ও পরিবারের কাজে ব্যয় হয়ে গেছে। জুলাই যোদ্ধা হিসেবে (কেস আইডি ২৮৭৩২, গেজেট নম্বর ১৯৩) সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছি, কিন্তু আমাদের প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা।
পরিবারের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তিনি চান তার স্ত্রী ও ভাইয়ের জন্য কর্মসংস্থান হোক। বলেন, ‘আমার স্ত্রী নুরুন্নাহার বিনতে ফাজিল ১ম বর্ষে, আর ভাই আবিদুর রহমান ওসামা দাওরা হাদিসে পড়ে। ওদের কাজের ব্যবস্থা হলে পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’
আত্মবিশ্বাস আর আশাকে সঙ্গী করে সাব্বির এখন নিজেকে গড়ে তুলতে চাচ্ছেন নতুনভাবে। মিরপুরের বিটিসিবি-তে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার শিক্ষক রাসেল স্যার আমাকে সাহস দিয়েছেন। আমি এখনো হতাশ হইনি। নতুন কিছু শিখছি, স্বাবলম্বী হতে চাই।’
তবে সবচেয়ে বড় স্বপ্ন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া। জনকন্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি, সরকার উদ্যোগ নিয়ে আমাদের জুলাই আন্দোলনে দৃষ্টি হারানোদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করাবে। আমি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। আলো ফিরে পেতে চাই।