Image description
 

ধেয়ে আসছে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ‘ঈশান’। শনিবার (২ আগস্ট) বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) ফেসবুক পেজে এমন তথ্য জানায়। টানা ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের অধিকাংশ নদীর পানি বাড়ছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় কিছু নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে ১০ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে এ তথ্য জানানো হয়। 

 

পূর্বাভাস বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে ঢাকা ও রংপুর বিভাগে মাঝারি থেকে ভারি এবং সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে। সেইসঙ্গে দেশের উজানে ভারতের মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে। দেশের রাজশাহী, রংপুর বিভাগসমূহে ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে আগামী দুইদিন এবং সিলেট ময়মনসিংহ বিভাগসমূহে ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশে আগামী তিনদিন ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

এ অবস্থায় রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী দুদিন নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী একদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী দুইদিনে তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এবং গাইবান্ধা জেলার সংলগ্ন উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।

 

এ ছাড়া সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিপোয়াইন, সোমেশ্বরী, জিঞ্জিরাম, ভুলাই ও কংস নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে যাদুকাটা নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেয়েছে এবং লুবাছড়া ও ঝালুখালি নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। উক্ত নদীসমূহের পানি সমতল আগামী তিনদিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এ সময়ে উক্ত নদীসমূহের পানি সমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলার উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়,  সিলেট বিভাগের মনু, ধলাই ও খোয়াই নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেয়েছে। আগামী একদিন নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও পরবর্তী দুইদিন বৃদ্ধি পেতে পারে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগামী তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মহানন্দা, করতোয়া, আপার আত্রাই, যমুনেশ্বরি, পুনর্ভবা, ঘাঘট ও টাঙ্গন নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগামী দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং পরবর্তী একদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, মুহুরী, সেলোনিয়া ও রহমতখালি খাল নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে গোমতী নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেয়েছে এবং নোয়াখালী খাল নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আগামী তিনদিন নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।

এ ছাড়া গঙ্গা ও পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগামী পাঁচদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগামী তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুইদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

বিডব্লিউওটির ফেসবুক পোস্টে আরও বলা হয়েছে, ‘ঈশান’ বৃষ্টিবলয়টি দেশের উত্তর অঞ্চলের জেলাগুলোতে বেশি প্রভাব ফেলবে ও দেশের উজানে বৃষ্টির ফলে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অতি বন্যা প্রবণ নিচু এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

এটি একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ বৃষ্টিবলয়। এ বৃষ্টিবলয়ে দেশের প্রায় সব এলাকায় যথেষ্ট বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে এবং এ বৃষ্টিবলয়ের কারণে দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকায় কম-বেশি বৃষ্টি হতে পারে।

এটি চলতি বছরের ১০ম বৃষ্টিবলয় ও ৬ষ্ঠ মৌসুমী বৃষ্টিবলয়, যা রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ হয়ে দেশে প্রবেশ করবে ও ৯ আগস্ট রংপুর হয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে।

এ বৃষ্টিবলয় সর্বাধিক সক্রিয় থাকবে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে। বেশ সক্রিয় থাকবে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগে। মাঝারি সক্রিয় থাকবে বরিশাল ও খুলনা বিভাগে।

বিডব্লিউওটি জানিয়েছে, বৃষ্টিবলয় সর্বাধিক সক্রিয় থাকবে ৪ থেকে ৮ আগস্ট। দেশের ৪০-৬০ ভাগ এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ‍বৃষ্টি হবে। (উত্তরাঞ্চলে বেশি)

বজ্রপাত: অপেক্ষাকৃত বেশি 

বন্যা: রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অতি বন্যা প্রবণ নিচু এলাকায় বন্যা হতে পারে। 

এ বৃষ্টিবলয়ে দেশের ওপর বড় কোনো ঝড়ের আশঙ্কা নেই তবে দমকা হাওয়া থাকতে পারে বৃষ্টিবাহী এলাকায়। 

সাগর: বেশিরভাগ সময়েই সাগর নিরাপদ থাকতে পারে। 

পাহাড় ধস: এসময় চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকাতে পাহাড় ধসের বেশ আশঙ্কা রয়েছে।

বৃষ্টিবলয় ‘ঈশান’ চলাকালীন সময়ে দেশের আকাশ অধিকাংশ এলাকায় আংশিক থেকে মূলত মেঘলা থাকতে পারে। অধিক সক্রিয় এলাকায় মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে।

বৃষ্টিবলয় ঈশান চলাকালীন সময়ে দেশের আবহাওয়া উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় আরামদায়ক থাকতে পারে, তবে বৃষ্টি বিরতির সময় অল্প কিছুটা ভ্যাপসা গরম পড়তে পারে কিছু কিছু এলাকায়। দক্ষিণাঞ্চলে ভ্যাপসা গরম অনুভূতি থাকতে পারে। ‘ঈশান’ চলাকালীন সময়ে বেশি সক্রিয় স্থানে রোদের উপস্থিতি তেমন পাওয়া যাবে না।