
অনলাইনে উড়োজাহাজের টিকিট কাটার বড় প্লাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ শত শত কোটি টাকা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিষ্ঠানটিতে বহু এজেন্সি শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছে এজেন্সিগুলো।
বাংলাদেশে ২০১৭ সালের মার্চে কার্যক্রম শুরু করে ফ্লাইট এক্সপার্ট। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ট্যুর প্যাকেজ এবং ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মতো নানা ধরনের সেবা দিত তারা। বিশেষ করে সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্লাইট টিকিট বুক করার সহজ সুবিধার কারণে এটি গ্রাহকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পায়, যেখানে বিভিন্ন এজেন্সির শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে।
এজেন্সিগুলো জানায়, শুক্রবার রাত থেকেই ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও তাদের সর্বশেষ পোস্ট ছিল হজ নিয়ে। সেই পোস্টে ২০২৬ সালের হজের রেজিস্ট্রেশন শুরু জানিয়ে হজ প্যাকেজের মূল্য ছাড়া হয়েছে।
হলিডে ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ নামে এক ফেসবুক গ্রুপে একজন লিখেছেন, ফ্লাইট এক্সপার্ট থেকে যারা টিকিট করেছেন কিন্তু এখনো ফ্লাই করেননি, তারা একটু টিকিটের বর্তমান স্ট্যাটাস চেক করুন। আমি বারবার বলি, দাম কম না খুঁজে মান বা সার্ভিস ভালো খোঁজেন। ফ্লাইট এক্সপার্টের সব সেবা বন্ধ।
এদিকে ফ্লাইট এক্সপার্টের সিওও সালমান তাদের অফিসের অভ্যন্তরীণ একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখেছেন, সাঈদ, হোসাইন ও সাকিব তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করে গত বৃহস্পতিবারের মিটিংয়ে সব দোষ তার (সালমান) ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ছিল এবং সালমানকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। গতকাল সকালে তারা কোম্পানির টাকা তুলে নিয়েছেন এবং তা নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন। এর ফলস্বরূপ কোম্পানিটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তার দিকে আসা হুমকি এবং দোষারোপের কারণে নিজেকে রক্ষার জন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন। এ পরিস্থিতির জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে চলে যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই তার ছিল না।
জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ফ্লাইট এক্সপার্টের শত শত কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি। বিষয়টি প্রয়োজন অনুযায়ী অনুসন্ধান করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে গতকাল রাতে রাজধানীর মতিঝিলে ফ্লাইট এক্সপার্টের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ সেখানে ভিড় করেছেন। তাদের অনেকেই বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও টিকিট বিক্রেতা এজেন্সির প্রতিনিধি, যারা নিজেদের কেনা টিকিটগুলো কী হবে, তা জানতে চান। কিন্তু কার্যালয়ে গিয়ে অধিকাংশই হতাশ।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফ্লাইট এক্সপার্ট নিজেরা সরাসরি উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে টিকিট না নিয়ে দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করত। এখন ওই দুটি এজেন্সি নিজেদের কেনা টিকিটগুলো রিফান্ড (ফেরত) করে অর্থ তুলে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।