Image description

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শক্তিশালী বিচার বিভাগ চায়। বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারের কোনো আপত্তি নেই। আমরা বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় থাকা সমর্থন করি। তবে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের পাওয়ারের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স আমরা চাই।

বুধবার (১৬ জুলাই) বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন। এরপর তিনি সময় আবেদন করলে আদালত ৪ আগস্ট পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

হাইকোর্টের বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে গত ২৩ এপ্রিল রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার শুনানিতে প্রয়াত প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ পাওয়ারের ব্যালেন্সের কথা বলেছেন। পরবর্তী সময়ে শুনানিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরবো।

 

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারকে বিচার বিভাগ অপকর্মের লাইসেন্স দিয়েছিল। সাড়ে চার হাজার মানুষকে বিচার বহির্ভূত হত্যা করেছিল। ৭০০ মানুষকে গুম করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছিল। এমন বিচার বিভাগ আমরা আর চাই না।

এসময় হাইকোর্ট বলেন, আপনারা (সরকার) তাহলে পৃথক সচিবালয় করে দিতে চান? তখন অ্যাটর্নি জেনারেল ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিয়ে বলেন, আমরা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের বিষয়টি হাইলাইটস করতে চাই।

অ্যাটর্নি জেনারেল তার অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত আদালতের কাছে সময় চান। হাইকোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলকে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৪ আগস্ট সময় নির্ধারণ করে আদালত বলেন, আমরা আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এ মামলার শুনানি শেষ করতে চাই।

 

বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরুর দিনে শুনানিতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিদ্যমান থাকার কারণে বিচারকদের ভয় দেখিয়ে কাজ করানো হয়। না শুনলে বান্দরবান বদলি করা হয়।

এর আগে বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি।

বর্তমানে প্রযোজ্য (সংশোধিত) সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে।

কিন্তু ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্বে নিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

বিদ্যমান সংবিধানের অনুযায়ী বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও শৃঙ্খলাবিধির ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব রয়েছে- যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

১৯৭২ সালের সংবিধানে অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়।

পরে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রযুক্ত হবে’ শব্দগুলো যুক্ত করা হয়। আপিল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনী আইন অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধন আইনের মাধ্যমে বর্তমান ১১৬ অনুচ্ছেদে ওই বিধানটি পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হয়।