Image description

দেশের বিচারিক আদালতগুলোয় বর্তমানে দুই হাজার ১৮৫ জন বিচারক বিভিন্ন পদে কর্মরত। এদের মধ্যে এক হাজার ৮৪১ জনই ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে নিয়োগ পান। দেশের বিভিন্ন আদালতের এজলাসে বসে তারাই এখন বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। আওয়ামী সুবিধাভোগী বিচারকদের মাধ্যমে আবারও একটি ‘জুডিশিয়াল ক্যু’র আশঙ্কা করছেন রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী নেতারা।

আইন বিশেষজ্ঞ, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিমত, পলাতক শেখ হাসিনা তার অনুগত বিচার প্রশাসনের ওপর ভর করে সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। ওই সময় বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও বিচক্ষণতা যাচাইয়ের পরিবর্তে দলীয় পরিচয় ও আনুগত্যকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।

আইনজীবীদের অভিযোগ, বিচারকদের কেউ কেউ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছেন। অধস্তন আদালতের বিচারকদের সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টাকে দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবেও দেখছেন তারা। আওয়ামী লীগ আমলের বিচারকদের পদে রেখে বিচার বিভাগের জন্য স্বাধীন সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে গোটা বিচার বিভাগ হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিচার বিভাগের সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টজনরা। অন্যদিকে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার।

যেভাবে নিয়োগ পান ১৮৪১ বিচারক

আইন মন্ত্রণালয় ও বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, দেশের অধস্তন আদালতগুলোয় বর্তমানে বিচারকের সংখ্যা দুই হাজার ১৮৫ জন। এদের মধ্যে এক হাজার ৮৪১ জনই নিয়োগ পেয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ওই সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী বিচারক হিসেবে নিয়োগে পেলেও আওয়ামী লীগের দলীয় লোকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। বিশেষ করে ভাইভা বোর্ডে দলীয় লোককে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশি। মাদরাসার ছাত্র হওয়ার কারণে বাদ দেওয়া হয় অনেককে।

বাংলাদেশ সচিবালয় ও জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের আমলে ১৪টি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেসব নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে এক হাজার ৮৪১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) থেকে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া আলাদা হয়ে যায়। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) আদলে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের (জুডিশিয়াল অফিসার) নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিরা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করেন।

বিভিন্ন আদালতে কর্মরত সিনিয়র জেলা জজ পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, ‘ওয়ান-ইলেভেন’খ্যাত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সরকারের সময় জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজিএস) মাধ্যমে দুই দফায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিচার হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালের শুরুতে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর দলীয় বিবেচনায় বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারে আসার পরপরই তৃতীয় বিজিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩৯৪ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর চতুর্থ বিজিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয় ২১১ জন, পঞ্চম বিজিএসে ১২০ জন, ষষ্ঠ বিজিএসে ১২৫ জন, সপ্তম বিজিএসে ৮০ জন, অষ্টম বিজিএসে ৫৩ জন, নবম বিজিএসে ১০০ জন, দশম বিজিএসে ২০৬ জন, ১১তম বিজিএসে ১৪৩ জন, ১২তম বিজিএসে ১০০ জন, ১৩তম বিজিএসে ১০২ জন, ১৫তম বিজিএসে ১০৩ জন এবং ১৬তম বিজিএসে নিয়োগ দেওয়া হয় ১০৪ জনকে।

পঞ্চম বিজিএসে লিখিত পরীক্ষায় প্রথম ১৫ জনের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সব ধরনের যোগ্যতা থাকার পরও তাকে ভাইভায় বাদ দেওয়া হয়। তার ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। ভাইভা বোর্ডের প্রশ্নের ধরন তুলে ধরে বর্তমানে একটি ব্যাংকে কর্মরত ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি মাদরাসায় কিছুদিন পড়েছি। এটি নিয়ে আমাকে অসংখ্য প্রশ্ন করা হয়েছে। পাকিস্তান ও কাশ্মীরের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে কার সঙ্গে আমার কেমন সম্পর্ক সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম, আমাকে বাদ দেওয়ার জন্য এসব প্রশ্ন করা হচ্ছে।’

লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও পুলিশ ভেরিফিকেশন বা গোয়েন্দা প্রতিবেদনের নামে শত শত প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এমন কয়েকজন নিয়োগ না দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিট আবেদনকারী এক প্রার্থী আমার দেশকে বলেন, ‘আমি লিখিত পরীক্ষায় আশাতীত ভালো করি। ভাইভায় সবগুলো প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিই। তারপরও আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আমাকে ভিন্নমতের নাগরিক হিসেবে দেখানো হয়েছে।’

বিজিএসে সদস্য হিসেবে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এমন একজন সাবেক সচিব আমার দেশকে বলেন, ‘আমরা ভাইভায় এমন কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী পাই, যাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। অথচ পরে নামের বিপরীতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ঘরে তাদের বিষয়ে মন্তব্য দেখে খুবই হতাশ ও মর্মাহত হই। ক্ষমতাসীনদের প্রতি আনুগত্য কিংবা ভিন্নমত পোষণের কারণ দেখিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এভাবে বাদ দেওয়াটা জাতির জন্য বড়ই দুর্ভাগ্যের, যা এখন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।’

নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এম এ মতিন আমার দেশকে বলেন, ‘অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগের যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। চূড়ান্ত নিয়োগের আগে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের যে অপশন রাখা হয়েছে, সেখানে স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন।’

তালিকা প্রকাশের দাবি সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতির

সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে যেসব বিচারক ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের তালিকা প্রকাশের দাবি করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দেশের যত সংকট তার মূলে রয়েছে বিচার বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা খেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে বিচারপতি খায়রুল হক বিচার বিভাগকে জাতিগোষ্ঠীর বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। অধস্তন আদালতের বিচারকরা সে ধারাবাহিকতাই রক্ষা করে গেছেন।

আমার দেশকে ব্যারিস্টার খোকন আরো বলেন, সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যেসব বিচারক নিয়োগ দিয়েছে, সম্পূর্ণ দলীয় পরিচয় যাচাই-বাছাই করেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এর প্রমাণ আদালতে তাদের বিচারিক কার্যক্রম। আদালতে আমাদের নেতাকর্মীদের কোনো কারণ ছাড়াই রিমান্ডে পাঠিয়ে ও জামিন না দিয়ে ওই বিচারকরা শেখ হাসিনার ইচ্ছা পূরণ করেন। এখন আবার ওই বিচারকরাই গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জামিন দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

ফের জুডিশিয়াল ক্যুর আশঙ্কা

গত বছরের ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। ১১ আগস্ট শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান বিচারপতি মো. ওবায়দুল হাসান ফুল কোর্ট রেফারেন্স মিটিং ডাকেন। ওই সময় হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে বিচারপতি ছিলেন ৯০ জন। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের সব বিচারপতিকে নিয়ে আয়োজিত সাপ্তাহিক ছুটির দিনের ওই ফুল কোর্ট রেফারেন্স মিটিংয়ের প্রতি সারা দেশের বিচারকদেরও দৃষ্টি ছিল।

সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের শপথ গ্রহণের দুদিন আগে সচিবালয়ে কর্মরত ঊর্ধ্বতন আমলারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুবুর রহমানের দপ্তরে জড়ো হয়ে তাকে শপথ অনুষ্ঠানে না যেতে চাপ দেন। একই সঙ্গে তারা নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা না করারও সিদ্ধান্ত নেন।

সূত্র জানিয়েছে, প্রধান বিচারপতির ফুল কোর্ট রেফারেন্স মিটিং আহ্বান ও ঊর্ধ্বতন আমলাদের জড়ো হওয়ার ঘটনা শুক্রবার কয়েকজন উপদেষ্টার দৃষ্টিতে আনা হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সচিবালয়ে এসে আইন মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে বসে কার্যক্রম শুরু করেন। বিচক্ষণতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি সেদিনের ‘জুডিশিয়াল ক্যু ও চিহ্নিত আমলাদের ষড়যন্ত্র’ মোকাবিলা করেন। পরদিন রোববার সব উপদেষ্টা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বুঝে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

বিচারকদের সংগঠন জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে, বিগত সরকার বিচার বিভাগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। ওই সময় অনেকেরই আওয়ামী লীগের প্রতি একটি দায়বদ্ধতা তৈরি হতে পারে।

তবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, আওয়ামী লীগের ‍সুবিধাভোগী বিচারকরা বিভিন্ন প্রোগ্রামের নামে মাঝে মাঝে একত্র হন। তাদের একত্র হওয়াটা দেশ ও জাতির জন্য অশনিসংকেত। বিচার বিভাগকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের কবল থেকে উদ্ধার না করে পৃথক সচিবালয় হলে এরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।

খোকন বলেন, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রয়োজন। তার আগে বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগের কবল থেকে মুক্ত করে সম্পূর্ণ স্বাধীন করা জরুরি।

আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ বিচারকদের মাধ্যমে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’র আশঙ্কার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, বিগত সরকার বিচার বিভাগকে কী ন্যক্কারজনকভাবে বিরোধী দল ও মতের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে, সেটা গোটা দেশবাসী জানে। শেখ হাসিনার পতনের পর তারাই দেশে একটি পাল্টা ‘ক্যু’ করার অপচেষ্টা করে, যেটা ছাত্র-জনতা ও আইনীজীরা কঠোরভাবে মোকাবিলা করে। সামনে এমন কোনো ঘটনা যাতে আর ঘটাতে না পারে, সেদিকে অন্তর্বর্তী সরকারসহ আমাদের সবারই নজর রাখতে হবে। কারণ অধস্তন আদালতে এখনো তাদের সব বিচারক বহাল রয়েছে।

রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আমরা চাই দলবাজ বিচারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হোক। তবে মেধাবী ও ন্যায়পরায়ণ বিচারক, তারা যে আমলেই নিয়োগ পান, এমন বিচারকরা যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হন, সেটা নিশ্চিত করার জন্যও সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে।’

বিচার বিভাগকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার দাবি বিএনপির

উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘উচ্চ ও নিম্ন আদালতে ফ্যাসিস্টদের বহাল রেখে যতই আমরা স্বাধীন বিচারব্যবস্থা করি না কেন, এর সুবিধাভোগী তারাই হবে। আমাদের পরিষ্কার বক্তব্যÑফ্যাসিস্টমুক্ত হতে হবে উচ্চ ও নিম্ন আদালত। তারপর স্বাধীন বিচারব্যবস্থা সত্যিকারার্থে কার্যকর হবে।’

সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের নবম দিনের আলোচনা শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ বিচার বিভাগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিকসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে তারা অবৈধভাবে সাজা দিয়েছেন। সেই ফ্যাসিস্টদের যেন আমরা রক্ষা না করি। আমরা চাই উচ্চ ও নিম্ন আদালতে যাতে ফ্যাসিস্টের দোসররা না থাকে।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে বদলি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, এটা যথেষ্ট নয়। তাদের অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট করে শুধু চাকরি গেলে হবে না, অপরাধের জন্য তাদের বিচারও করতে হবে। যদি আমরা সেটি নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে সত্যিকারার্থে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কার্যকর হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এদের মাধ্যমে যদি বিচারব্যবস্থা কার্যকর হয়, যতই আমরা কড়া আইন করি, এটার অপব্যবহার তারা করবেই এবং এখনই করছে। জেলাপর্যায় থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্তÑসব আদালত থেকে আওয়ামী অপরাধীদের জামিন হয়ে যাচ্ছে।’

আ.লীগের বিচারকরা গণতন্ত্র উদ্ধারের পথে বাধা

দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আওয়ামী লীগ আমলের বিচারকরা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পতনের দিন পর্যন্ত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে চরমভাবে দলীয়করণের ক্ষেত্রে সব ধরনের নগ্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এ বিচারালয় দিয়ে তিনি তৎকালীন বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছেন। ওই সময় বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার পরিবর্তে দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দেন শেখ হাসিনা। নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের নামে শত শত প্রার্থীকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

আওয়ামী বিচারকরা বিচারাঙ্গনে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেনÑএমন অভিযোগও আনেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এই আইনজীবী। তিনি বলেন, এসব বিচারকের অনেকেই বিগত সরকারের সময় জামিনযোগ্য ধারায় দায়ের হওয়া মামলায়ও বিএনপিসহ ভিন্নমতের নাগরিকদের জামিন দেননি। অথচ এখন তাদের কেউ কেউ গণহত্যাসহ গুরুতর মামলায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন। এটি দেশের গণতন্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অশনিসংকেত বলেই দেশবাসী মনে করে।

যা বলছে ও ভাবছে সরকার

সুবিচার নিশ্চিতের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীন দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আগে যে সরকার ছিল, সেটা একটি ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল। তারা কোনো নিয়মনীতি মানত না। তারা একজন প্রধান বিচারপতিকে গলাধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দিয়েছিল।’

বিচার বিভাগের জন্য স্বাধীন সচিবালয় গঠন প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি দেশের জন্য অনেক বড় পরিবর্তন। এজন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজন। আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটি সম্পন্ন করতে কাজ করছি।’