
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) সামনে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্তত ২৩টি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। শুক্রবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যা ও রাতে তারা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এ বিক্ষোভ করেন। এসব বিক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
জানা যায়, গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) জনসমক্ষে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে বুক ও মাথা থেঁতলে দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে হত্যাকাণ্ডে যাদের দেখা যায়, তাদের মধ্যে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী শনাক্ত হয়েছে। ফলে এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিএনপির ব্যাপক সমালোচনা চলছে। অনেকে এ ঘটনাকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সময়ের ঘটনাগুলোর সঙ্গে তুলনা করছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহীদ রফিক-জব্বার হল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর দিয়ে কয়েকটি সড়ক ঘুরে আবার বটতলায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় ।
মিছিলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা—'যুবদল খুন করে, ইন্টেরিম কি করে'; 'যুবদল খুন করে, তারেখ কি করে'; 'বিএনপির অনেক গুণ, নয় মাসে দেড়শো খুন'; 'যেই হাত খুন করে, সেই হাত ভেঙে দাও'; 'যুবদলের অনেক গুন, পাথর মেরে মানুষ খুন'; 'যেই হাত চাঁদা তোলে, সেই হাত ভেঙে দাও'; 'চাঁদা তোলে পল্টনে, চলে যায় লন্ডনে' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম সচিব আহসান লাবিবের সঞ্চালনায় বক্তারা বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহসান ইমাম।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সালাম হল বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। পরে মালেক হল, খাদিজা হল, জুলাই স্মৃতি হল প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে মিছিলটি শেষ হয়। প্রতিবাদ জানাতে মেয়ে শিক্ষার্থীরাও হল থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা "আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ ; যুবদলের চাঁদাবাজরা, হুঁশিয়ার সাবধান; যুদলের সন্ত্রাস, রুখে দেবে ছাত্রসমাজ ; বিএনপির সন্ত্রাসের, হুঁশিয়ার সাবধান; আমার ভাই মরলো কেন? তারেক রহমান জবাদ দে; মিটফোর্ডে খুন কেন? তারেক রহমান জবাব দে; সারা দেশে সন্ত্রাস কেন? বিএনপি জবাদ দে; জালোরে জালো আগুন জ্বালো" ইত্যাদি স্লোগান দেন।
তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা
রাত ১১টার দিকে মাদ্রাসার প্রধান ফটক থেকে শুরু হওয়া মিছিলে কয়েক হাজার সাধারণ শিক্ষার্থী অংশ নেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘চাঁদাবাজদের ঠিকানা এই বাংলায় হবেনা ’, ‘বিএনপির অনেক গুন নয় মাসে দেড় শত খুন’, ‘যুবদলের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’—ইত্যাদি স্লোগানে মিছিলটি হোসেন মার্কেট এলাকা প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ফিরে আসে। এ সময় প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরুদ্ধ থাকায় রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। জনদুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরানণ হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে শিক্ষার্থী বলেন, 'এদেশে আর কোনো চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসী দলকে আমরা আর ক্ষমতায় দেখতে চাই না।'সমিছিলে শিক্ষার্থীরা 'ওয়ান টু থ্রি ফোর, চাদাবাজ নো মোর; চাঁদাবাজের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও; চাঁদাবাজের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না; যুবদলের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
ঢাকা কলেজ
রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা কলেজের হল পাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। এরপর সাইন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত মোড় হয়ে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সময় শিক্ষার্থীরা “দশ মাসে দেড়স খুন, বিএনপির অনেক গুন, আমার ভাই খুন কেন, বিএনপি জবাব চাই, আমরা ভাই খুন কেন, তারেক রহমান জবাব দে, খুনিদের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে, পাথর দিয়ে মানুষ মারে, মধ্যযুগীয় বর্বরতা, চলবে না চলবে না, খুনিদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
রাত সাড়ে ৯ টায় যবিপ্রবির 'জুলাই বিপ্লব মঞ্চ'র উদ্যোগে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে এ বিক্ষোভনমিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান এর মধ্য দিয়ে আমাদের স্বপ্ন ছিল আমরা অন্যায়, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দমন-নিপীড়ন ও অপরাজনীতি মুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ব। এই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করার জন্য একটা গোষ্টি তৎপরতা চালাচ্ছে। কুমিল্লা ও ভোলায় যুবদল দ্বারা ধর্ষণ হয়েছে। মধ্যযুগীয় কায়দায় ৪৮ ঘণ্টা আগে যুবদলের সন্ত্রাসী দ্বারা এ নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এখানে অপরাধীর বিরুদ্ধে এসেছি। অপরাধীরা একটা দলের ট্যাগ নিয়ে এই কাজ করেছে। সেজন্য এর দায় দলটা এড়াতে পারে না। আমরা অপরাধীদের এমন শাস্তি চাই, যাতে পরবর্তীতে সেই শাস্তি একটা নিদর্শন হয়ে থাকে। এছাড়া একটা বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বার বার এতো কিছু হওয়ার পরেও কেনো সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না? পুলিশ ধরে আনছে আবার কিছুক্ষণ পর ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে! সেজন্য বুঝায় যায়, জনবহুল এলাকাতেও আমরা নিরাপদ না।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
রাত ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিজয় ২৪ হল হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে গ্রাউন্ড ফ্লোরে গিয়ে শেষ হয়। এসময় ঢাকা কুয়াকাটা মহাসড়কে ১০ মিনিট সড়ক অবস্থান করে স্লোগান দেয় তারা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তারা বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি, যেখানে প্রকাশ্যে এভাবে একজন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে। আমরা নৃশংসতা সহ্য করার জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান করি নাই। যথাযথ বিচার না হলে এ ধরনের বর্বরতা বারবার ঘটবে উল্লেখ করে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানান তারা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়, "মিটফোর্ডে খুন কেন? তারেক রহমান জবাব দে", "ভোলায় ধর্ষণ কেন? তারেক রহমান জবাব দে", "যুবদলের অনেক গুণ, পাথর মেরে মানুষ খুন", "আমার সোনার বাংলায়, সন্ত্রাসীদের ঠাঁই নাই" সহ আরও নানা প্রতিবাদী স্লোগান।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
রাত সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়৷ এসময় শিক্ষার্থীরা 'টু জিরো টু ফোর , চাঁদাবাজি নো মোর', 'আমার ভাই কবরে, খুনি কেনো বাহিরে', 'চাঁদাবাজের ঠিকানা,এই বাংলায় হবে না','বিচার বিচার বিচার চাই, সোহাগ হত্যার বিচার চাই' সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় তারা 'আমার সোনার বাংলায় খুনিদের ঠাঁই নাই, ইনকিলাব জিন্দাবাদ', 'এক দুই তিন চার, চাঁদাবাজ দেশ ছাড়', 'চাঁদাবাজের ঠিকানা, এই বাংলা হবে না', 'জনে জনে মানুষ মরে, ইন্টেরিম কী করে', 'লীগ গেছে যেই পথে, দল যাবে সেই পথে’'-সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়ামোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডায়না চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। মিছিলে শিক্ষার্থীরা ওয়ান টু থ্রি ফোর, চাদাবাজ নো মোর; বিএনপি যুবদল, তুই খুনি তুই খুনি; দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেব রক্ত; রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়; চব্বিশের বাংলায় চাঁদাবাজের ঠাই নাই; আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে; চাঁদাবাজের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও; চাঁদাবাজের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না ইত্যাদি স্লোগান দেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
রাত সাড়ে ১০টায় বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্রোহী হল থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন হল এবং উপাচার্য বাসভবন সহ পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, ইন্টেরিয়ম কী করে’ ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ সহ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এছাড়াও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ইডেন কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।