Image description
ভালো ফলের পরও হোঁচট খাওয়ার ভয়

প্রশাসনে আবার দুই স্তরের পদোন্নতির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রথমে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এরপর খুলতে পারে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির দ্বার। এর মধ্যে পদোন্নতিযোগ্য সাত শতাধিক কর্মকর্তার চাকরিজীবনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ শুরু করেছে সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।

গত মঙ্গলবারও পদোন্নতির জন্য মন্ত্রিপরিষদসচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে বসে এসএসবি। বৈঠকে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি, প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতিসহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। আরো দু-একবার বৈঠকের পর পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই উপসচিব পদে পদোন্নতি হতে পারে।

এর পরই হবে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিবের পদোন্নতি। তবে নাম প্রকাশ করে দায়িত্বশীলদের কেউ কথা বলতে রাজি নন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, এরই মধ্যে এসএসবির কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ জুলাই বসেছিল বৈঠক।
 
প্রথমে উপসচিব পদে পদোন্নতি হবে। এরপর অতিরিক্ত সচিব পদে হতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের ২১২ পদে কর্মকর্তা আছেন ৩৭০ জন। যুগ্ম সচিবের ৫০২টি পদে রয়েছেন এক হাজার ৩৪ জন।

 
সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদসংখ্যা এক হাজার ৪২০। বিপরীতে কর্মরত আছেন এক হাজার ৪০২ জন। অর্থাৎ প্রতিটি স্তরেই নির্দিষ্ট পদের চেয়ে উল্লেখ করার মতো কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন। ফলে পদ খালি না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আগের পদেই কাজ করে যেতে হবে।

পদোন্নতির বিধিমালা অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পাঁচ বছর চাকরিসহ অন্তত ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলেই উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। সে অনুযায়ী বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন ২০২২ সালের ৩ জুন। এরপর প্রায় তিন বছর হতে চলছে, কিন্তু তাঁদের আজও পদোন্নতি হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০১২ সালের ৩ জুন সরকারি চাকরিতে যোগ দেন বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সেই হিসাবে তাঁদের উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয় ২০২২ সালের ৩ জুন। নানা কারণে এর দুই বছর পর ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি উপসচিব পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গঠিত হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসনসচিবসহ এসএসবিতে বড় পরিবর্তন আসে। নানা কারণেই আর ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ভাগ্যে পদোন্নতির দরজা খোলেনি।

এই ব্যাচে ২৭৭ জন কর্মকর্তা ২০১২ সালে যোগদান করেন। লেফট আউটসহ প্রশাসন ক্যাডারের ৩১৯ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের ২২৩ কর্মকর্তা ডিএস পুলে যোগ দিতে আবেদন করেছেন। এসব কর্মকর্তার প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা-দুর্নীতির বিষয়সহ ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে চাকরিজীবনের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এবং পরিবারের সদস্যসহ নিকটাত্মীয়দের সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্য থেকে অন্তত আড়াই শ কর্মকর্তার পদোন্নতি হতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিতে নিয়মিত হিসেবে ২০তম ব্যাচকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এবারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ২৪৪ কর্মকর্তার পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। সব মিলে পদোন্নতির জন্য প্রায় ৩০০ কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যাচের ৪৩ জন কর্মকর্তা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে বিভিন্ন জেলার ডিসির দায়িত্ব পালন করায় তাঁদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া ১৯৯৯ সালে শেষ হয়। ২০১৯ সালে যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও তাঁদের পদোন্নতি হয়েছে ২০২১ সালে। যুগ্ম সচিব হিসেবে দুই বছর চাকরি করলেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয়। সেই হিসাবে ২০২৩ সালে এই ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয়েছে। যোগ্যতা অর্জনের অন্তত দুই বছর পর তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে।