Image description

যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ ৪ জনের নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই টাকা আসামিরা মেশিনে গণনা করে ব্যাগে ভরে নেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কেশবপুর আমলী আদালতে এ মামলা করেন কেশবপুরের শহীদ লে. মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মশিয়ার রহমান। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আঞ্জুমান আরা বেগম অভিযোগটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-(পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী তাহমিদ আকাশ।

মামলার অপর তিন আসামি হলেন— কেশবপুর শহরের হাসপাতাল পূর্বপাশের সাহাপাড়ার রোডের আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে আলমগীর সিদ্দিক টিটো, আলমগীর সিদ্দিক টিটোর স্ত্রী শামিমা পারভীন রুমা ও কেশবপুর উপজেলার মাগুরখালি গ্রামের সোবহান গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এক নম্বর আসামি শাহীন চাকলাদার যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক। ২ নম্বর আসামি শাহীন চাকলাদারের এপিএস আলমগীর সিদ্দিক টিটো ছিলেন। টিটোর স্ত্রী ৩ নম্বর আসামি শামীমা পারভীন রুমা ও ৪ নম্বর আসামি প্রধান আসামির সহযোগী ছিলেন।

মামলার বাদী মশিয়ার রহমান কেশবপুরের শহীদ লে. মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাবস্থায় আসামি আলমগীর সিদ্দিক টিটোর সঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে কলেজের স্নাতক ও বিএমটি শাখার এমপিও, কৃষি ডিপ্লোমা শাখার শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও ছাড় করিয়ে দিতে পারবেন বলে প্রস্তাব দেন। এ সময় আসামির ওই কাজের বিনিময়ে বাদীর কাছ থেকে কলেজের জন্য ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ও  স্কুলের জন্য ২০ লাখ টাকাসহ মোট ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন। 

আসামি শাহীন চাকলাদার কাজটি দ্রুত করে দেবেন বলে ঘোষণা দিলে আলমীগর সিদ্দিক টিটো ও রবিউল ইসলাম স্কুল কলেজের উন্নয়নে করে নেওয়ার জন্য বাদীকে বুঝাতে থাকেন। আসামি আলমগীর সিদ্দিক টিটো শাখাগুলোর এমপিও কাজ করে নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে শাহীন চাকলাদারকে দেওয়ার জন্য বাদীকে প্ররোচিত করেন। 

আসামি শাহীন চাকলাদার প্রবঞ্চনা করে বাদীকে বিশ্বাস করান, যে আসামি শাহীন চাকলাদার মন্ত্রণালয় থেকে স্কুল ও কলেজের এমপিও করিয়ে আনতে পারবেন। আসামিদের কথায় রাজি হয়ে টাকা দিলে স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা লাভবান হবেন।

বাদী আসামিদের কথায় রাজি হয়ে ২০২০ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৩০ আগস্টের মধ্যে কেশবপুর হাসপাতালের পূর্বপাশে আসামি আলমগীর সিদ্দিক টিটো ও শামীমা পারভীন রুমার বাসায় বসে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আসামি শাহীন চাকলাদার ও রবিউল ইসলাম নগদ ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, নগদ ৩০ লাখ টাকা ও নগদ ২০ লাখ টাকাসহ মোট ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। 

আসামি আলমগীর সিদ্দিক টিটো, শামীমা পারভীন রুমা ও রবিউল ইসলাম মেশিন দিয়ে টাকা গুণে ব্যাগে ভরে আসামি শাহীন চাকলাদারকে দেন। তিনি সেই টাকা গ্রহণ করেন। ২০২১-২০২২ সালের মধ্যে মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের স্নাতক ও জিয়াউর রহমান স্কুলের এমপিও ছাড় করানো, কৃষি ডিপ্লোমার শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও করাতে পারেননি। এমপিওভুক্তির জন্য আসামিদের তাগিদ দিলে তালবাহানা করতে থাকেন। 

এক পর্যায়ে এমপিওর কোনো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে বাদীকে জানিয়ে দেয় আসামিরা। পরে বাদী খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন আসামিরা এমপিও ছাড় করানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে কোনো টাকা দেন নাই। তারা ওই টাকা নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। ওই সময় আসামিদের সঙ্গে বাদীর দুরত্ব তৈরি হলে রাজনৈতিক হয়রানি ও হামলা, মামলার শিকার হওয়ার ভয়ে বাদী এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
শীর্ষনিউজ