Image description

“২০১০ সালে যখন আমি ডিবি অফিসে রিমান্ডে ছিলাম, তখন আমার মা সারারাত রাস্তায় বসেছিলেন- শুধু এই চিন্তায়, আমাকে টর্চার করা হচ্ছে কিনা”, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে মায়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে এ কথা বলেন আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

 

মঙ্গলবার মা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের স্মরণে বিশ্ববিদ্যায়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এই দোয়া মাহফিল হয়। দোয়া মাহফিলটি আয়োজন করে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’।

 

মাহমুদুর রহমান বলেন, “ডিবি কার্যালয় থেকে যখন আমাকে আগারগাঁওয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন দেখি আমার মা রাস্তার ওপর বসে আছেন- ফজরের নামাজের কিছুটা সময় পর। সারারাত তিনি সেখানেই বসেছিলেন। উদ্বিগ্ন ছিলেন, আমাকে নির্যাতন করা হচ্ছে কিনা। আমি তাঁকে দেখে গাড়ি থেকে হাত নেড়েছিলাম, জানি না তিনি আমাকে দেখতে পেরেছিলেন কিনা।”

তিনি আরও বলেন, “আমি জেলে থাকাকালীন আমার মায়ের বিরুদ্ধেও মামলা দেয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি আমার দেশ পত্রিকার পরিচালক ছিলেন। সেই প্রহসনমূলক মামলার বোঝা নিয়ে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।”

মায়ের সংগ্রামী জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমার মা এদেশে বহু লড়াই করেছেন। তিনি আমাকে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপোষ না করে লড়াই করতে শিখিয়েছেন। সাহস জুগিয়েছেন। আমি পরিবার থেকেই লড়াই করার প্রেরণা পেয়েছি।”

মাহমুদুর রহমান জানান, তাঁর মা ৬০-এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স করেন। মাঝে মাঝেই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসতেন। তিনি বলেন, পবিত্র আশুরার দিনে আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। আপনারা সকলে দোয়া করবেন তিনি যেন জান্নাতবাসী হন।

দোয়া মাহফিলের ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, যদি জুলাই বিপ্লব না হতো, সম্পাদক মাহমুদুর রহমান হয়তো তাঁর মায়ের মুখটিও দেখতে পেতেন না। তাঁকে নিজ হাতে দাফন করতে পারতেন না। জুলাই অভ্যুত্থান মাজলুমদের সমস্ত পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে দিয়েছে।

পরে অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা হয়। এটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুফতি নাজির আহমদ।

এসময় উপস্থিত সকলে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের দীর্ঘায়ূ কামনা করেন।

অনুষ্ঠান শেষে মাহমুদুর রহমান আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, আজ আপনাকের কারণেই আমি আমার মা-কে নিয়ে আয়োজিত এই দোয়া মাহফিলে আপনাদের সঙ্গে থাকতে পেরেছি।”

উল্লেখ্য, গত রোববার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে রাজধানীর মগবাজার ইনসাফ আল বারাকাহ কিডনি হাসপাতালে অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন।

অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম দৈনিক আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।