Image description

পরিবহনের তীব্র হর্নের শব্দ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে রাস্তায় আটকে থাকা- রাজধানী ঢাকার চিরচারিত রূপ যেন এটাই। পবিত্র আশুরার ছুটিতে এই যান্ত্রিক নগরীকে রোববার দেখা যায় অন্য রকম এক রূপে। রাজধানীর অধিকাংশ জায়গার রাস্তা প্রায় ফাঁকা, নেই যানজট। খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারছেন ঘর থেকে বের হওয়া মানুষেরা।

রোববার (৬ জুলাই) রামপুরা, বাড্ডা, কাকরাইল, মতিঝিল, গুলিস্তান, রাজারবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, তেজগাঁও, মিরপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, ধানমণ্ডি, কলাবাগান প্রতিটি এলাকার রাস্তাই যানজটমুক্ত দেখা গেছে। তবে দুপুরের দিকে কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মাগেট পর্যন্ত রাস্তায় কিছুটা যানজট দেখা যায়। এছাড়া তাজিয়া মিছিল উপলক্ষে পুরান ঢাকার কিছু অঞ্চলে যান চলাচল কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ছিল।

রাজধানীর প্রতিটি এলাকাতেই রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা বেশ কম দেখা গেছে। তবে রিকশা, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ভাড়ায় চালিত অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল চলাচল স্বাভাবিক দেখা গেছে। গণপরিবহন কম থাকলেও যাত্রীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। খুব সহজেই গণপরিবহনে উঠতে পারছেন তারা।

মিরপুর-১০ নম্বরে দায়িত্ব পালন করা এক ট্রাফিক পুলিশ বলেন, ঢাকার রাস্তা এমন ফাঁকা খুব একটা দেখা যায় না। আজ আশুরার ছুটি। গতকাল ও পরশুদিন (শনি ও শুক্রবার) ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। সব মিলিয়ে টানা ৩ দিনের ছুটিতে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি গেছেন। ঢাকার রাস্তা প্রায় ফাঁকা থাকার এটি একটি কারণ। এছাড়া ছুটির দিন হওয়ার কারণে অনেকেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সবকিছু মিলেই যানজটমুক্ত ঢাকা দেখা যাচ্ছে।

 

তিনি বলেন, মিরপুর-১০ গোলচত্ত্বরে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। পরিবহনের চাপ সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। আজ পরিবহনের চাপ নেই বললেই চলে। ফলে ট্রাফিক সামলাতে কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না। কোনো গাাড়িই সিগন্যালে তেমন আটকে থাকছে না। গাড়ির চাপ কম থাকলে আমাদের দায়িত্ব পালন করাও অনেক সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এমন সুবিধা সব সময় পাওয়া যায় না, বছরে দুই-চারবার এমন দৃশ্য দেখা যায়।

‘৭ বছর ধরে ঢাকায় আছি, এমন ফাঁকা রাস্তা কখনো পাইনি’

মতিঝিল থেকে ১৫ মিনিটে বাড্ডায় আসা মো. ফারুক আলম বলেন, মতিঝিল থেকে বাড্ডায় আসতে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়। এই রুটে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত বলে কোনো কথা নেই। যানজটই এই রুটের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু আজ সেই যানজট নেই। রাস্তা একেবারেই ফাঁকা। মাত্র ১৫ মিনিটে মতিঝিল থেকে বাড্ডা চলে এসেছি।

 

মিরপুর থেকে মোটরসাইকেলে রামপুরা আসা মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, মিরপুর-১৪ থেকে রামপুরা এসেছি। রাস্তায় কোথাও কোনো সিগন্যালে পড়তে হয়নি। একটানে মিরপুর থেকে রামপুরা চলে এসেছি। ৭ বছর ধরে ঢাকায় থাকছি। এমন ফাঁকা রাস্তা আমি আগে কখনো পাইনি। সবসময় ঢাকার রাস্তা মানেই যনজট। মাঝেমধ্যে এমন যানজট সৃষ্টি হয় যে, মন-মেজাজ বিগড়ে যায়।

তিনি বলেন, আর যেভাবে মিরপুর থেকে রামপুরা আসলাম, ঢাকার রস্তা যদি সবসময় এমন ফাঁকা থাকতো তাহলে কত মজাই না হতো! কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আজকের দিন পার হলেই আবার সেই পুরোনো যানজটের মধ্যে ফিরে যেতে হবে। যানজটে আটকে রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হবে।

খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সুযোগ মেলায় অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন। মোহাম্মদপুর থেকে পরিবার নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা আসাদুর রহমান বলেন, ঢাকার রস্তা আজ খুবই ফাঁকা। সকালে বাজার করতে গিয়ে দেখি রাস্তা প্রায় ফাঁকা। অনেকদিন পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া হয় না, তাই আজ দুপুর থেকেই সবাই মিলে ঘুরতে বের হয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যে মোহাম্মদপুর থেকে হাতিরঝিলে চলে আসলাম। কিন্তু হাতিরঝিলে এসে দেখি, এখানেও প্রায় ফাঁকা। মানুষের আনাগোনা কম।

তিনি বলেন, সবসময় অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকি। পরিবার নিয়ে খুব একটা ঘুরতে বের হওয়ার সুযোগ হয় না। আজ সুযোগ হয়েছে, ইচ্ছা আছে রাত পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে ঘোরাঘুরি করব। এখান থেকে (হাতিরঝিল) রমনা পার্ক, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। রাতে পুরান ঢাকায় গিয়ে খাওয়ার পরিকল্পনা করেছি।

বাড্ডার বাসিন্দা শবনম হক বললেন, সকালে ধানমন্ডিতে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। সাধারণত বাড্ডা থেকে ধানমন্ডি যেতে এক-দেড়ঘণ্টার ওপরে লাগে। আজ ২০ মিনিটেরও কম সময় লেগেছে। প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় যদি এতটা প্রশান্তি থাকতো, তবে হয়তো এই শহরটা সত্যিই বাসযোগ্য হয়ে উঠতো। কিন্তু আমরা এমন নগরে বাস করি যেখানে সবসময় গাড়ির তীব্র হর্ন আর যানজট আমাদের নিত্যসঙ্গী। তাই একদিনের এমন স্বস্তির রাস্তা আমাদের আফসোসই বাড়ায়।

আকাশ পরিবহনের চালক মো. মান্নান বলেন, গত শুক্রবার থেকে আজ ৩ দিন ধরে রাস্তায় যানজট নেই। যাত্রীদের সঙ্গেও কোনো ক্যাচাল করতে হচ্ছে না। যাত্রীরা খুব সহজে গাড়িতে উঠতে পারছেন এবং নির্ধারিত স্থানে খুব সহজে নামতে পারছেন। এমন রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে আমরাও মজা পাচ্ছি। রাস্তায় যনজট না থাকলে গাড়ি চালিয়ে খুব শান্তি পাওয়া যায়। আর দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকলে মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।

তুরাগ পরিবহনের চালক আবুল কালাম বলেন, আমাদের গাড়ি যে রুটে চলে, এই রুটের পুরোটাতেই সবসময় যানজট থাকে। কিন্তু আজ কোথাও কোনো যানজট নেই। সিগন্যালে গাড়ি আটকে থাকছে না। গতকালও রাস্তা এমন ফাঁকা ছিল। সাধারণত বসুন্ধরা গেট থেকে রামপুরা আসতে এক ঘণ্টা লেগে যায়, আজ ১৫-২০ মিনিটও লাগছে না।