Image description

Foridi Numan (ফরিদি নুমান)


 
কাদের সিদ্দিকী ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর (নিউইয়র্ক টাইমসের মতে ১৯ ডিসেম্বর) একটি নি.র্ম.ম কাজ করেছিলেন। কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী ও তার বাহিনীর কয়েকজন মুক্তিযো.দ্ধারা মিলে সেই দিন কয়েকজন মানুষকে নি.র্ম.মভাবে হ.ত্যা করেন। তিনি সম্ভবত অতিমাত্রায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে চারজন লোককে হ.ত্যা করেছিলেন। পাকিস্তানের দালালির অভিযোগে চারজন যুবককে বন্দি করে ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে আনা হয়। তখন সেখানে একটা সমাবেশ চলছিল।
 
কাদের সিদ্দিকী বিদেশি মিডিয়ার সামনে ওই চার যুবককে পে.টা.ন। তারপর তিনি বে.য়.নে.ট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চারজন বন্দিকে হ.ত্যা করেন। তাদের দালালি প্রমাণিত ছিল না, তারা পাকিস্তানের দালাল ছিল কিনা সেটার বিচার করা যেতো কিন্তু তা না করে তাদের হ.ত্যা করা হয়।[১]
 
১৯ শে ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে, প্রায় ৫ হাজার মানুষ চারজন বন্দির নির্মম হ.ত্যা.কান্ডের সাক্ষী হয়েছেন ঢাকায়। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডারদের কেউই ওই চারজন বন্দির বিরুদ্ধে আনা পাকিস্তানের দা.লা.লির অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি, এমনকি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও ছিল না কাউকে হ.ত্যা করার মতো। ওই চারজন বন্দিকে রাজাকার বলেছিলেন উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা। ওই চারজনকে হ.ত্যা.র আগে ১৯শে ডিসেম্বর সকালে অনেক বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের এবং ছাত্রদের লা.শ ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। এটা যে আসলেই রাজাকার বা পাকিস্তানীরা করেছে এটার প্রমাণ না পেলেও, এটা তাদের কাজ বলে ধরে নেয়া হয়েছিল।
ওই দিন একটা শোভাযাত্রার পর মুক্তিবাহিনীর সৈনিকরা একটি সমাবেশ করেছিল। ওই শোভাযাত্রায় প্রায় সাত হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। সমাবেশ হয়েছিল ঢাকা আউটার স্টেডিয়ামে।
 
একটা জিপ থেকে টেনে হিঁচড়ে চারজন বন্দিকে খোলা মাঠে নিয়ে আসে মুক্তিযো.দ্ধারা। কাদের সিদ্দিকী সবাইকে নিজ হাতে আইন তুলে না নিতে অনুরোধ করেন। তারপর সবাই মিলে মোনাজাত করেন। কিন্তু এরপরের ঘটনা টা নি.র্ম.ম ।
 
কয়েকজন মুক্তিযো.দ্ধা বন্দিদের চুল টেনে ধরে, রাইফেলের বাট দিয়ে তাদের মাথায় আ.ঘা.ত করেন। কালো কাপড় পরিহিত একজন লম্বা মানুষ একজন বন্দীকে বাছাই করেন। তারপর সেই বন্দীর মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আ.ঘা.ত করতে থাকেন কারাতের নানা কৌশল অবলম্বন করে। শরীরে জ্ব.ল.ন্ত সিগারেটের স্যাঁকাও দেয়া হয়। আধঘন্টা ধরে নি.র্যা.তন চলতে থাকে। বন্দীরা তখনও তাদের জীবন ভিক্ষা চাচ্ছিল, তারা তাদের হাতে পায়ে ধরছিল যেন তাদের ছেড়ে দেয়া হয়, তারা নির্দোষ।
 
কিন্তু কাদের সিদ্দিকী একটি স্ববিরোধী কাজ করে বসলেন। কাদের সিদ্দিকী নির্দেশ দেন দুইজন সৈনিককে তাদের বে.য়.নেট প্রস্তুত রাখতে। প্রথমে সেই সৈনিকেরা ওই বন্দীদের মধ্যে একজনকে বে.য়.নেট দিয়ে আ.ঘা.ত করতে থাকে। তারপর একইভাবে তারা অন্য তিনজন বন্দীকে আঘাত করতে থাকে। তারা বুকে আ.ঘা.ত করছিল কিন্তু হৃৎপিণ্ডে আঘাত না লাগে মতো কারণ সেখানে আ.ঘা.ত করবেন অন্য কেউ। কাদের সিদ্দিকী নিজে একজন সৈনিক থেকে বে.য়.নেট চেয়ে নেন। তারপর তিনি সরাসরি বুকে আ.ঘা.ত করতে থাকেন বন্দীদের। সাব মেশিনগান থেকে একজন সৈনিক একজন বন্দীর পেটে গু.লি চালায়।
১০ মিনিট ধরে বে.য়.নেট দিয়ে আঘাত করা চলতে থাকে, তারপর ওই সৈনিকেরা এবং কাদের সিদ্দিকী নিজের বে.য়.নেট পরিস্কার করেন। কাদের সিদ্দিকী তারপর স্থানটি ত্যাগ করেন।
 
বন্দিরা তখনো বেঁচে ছিল কিন্তু অল্প কিছু ক্ষণে মা.রা যায়। বন্দীদের পরিবারের একজন ছোট ছেলে বন্দীদের কাছে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু ছেলেটাকে একজন মুক্তিযো.দ্ধা (সৈনিক) বেশ জোরে লাথি মারে এবং রাইফেলের বাট দিয়ে মারতে মারতে তাড়িয়ে দেয়। [২]
মুজিব সাহেব অস্ত্রসমর্পন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, "কাদের তুই চারজনকে মে.রে.ছিস, চারশত লোক মা.র.লেও আমি তোকে কিছুই বলতাম না।" [৩]
 
তথ্যসূত্র:
[১] মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর : একটি নির্দলীয় ইতিহাস, গোলাম মুরশিদ, ১৭৬-১৭৭ পৃ:, প্রথমা প্রকাশন, ১০ম মুদ্রণ ২০১৬
[২] '4 Tortured, Slain at Dacca Rally', Page 1, 20th December 1971, The New York Times
[৩] রাজনীতির তিন কাল, মিজানুর রহমান চৌধুরী, পৃ:১৩৯, অনন্যা প্রকাশনী, ২০০৩
 
 
May be an image of 1 person and textMay be an image of 7 people and text