Image description

২৫ বছরের নারী। সব সময় নিজেকে পর্দার মধ্যে রাখতে পছন্দ করতেন। হঠাৎ করে এক কালো অন্ধকার নেমে আসে তার জীবনে। পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকে আসা কয়েকজন তুলে নেয় একটি মাইক্রোবাসে। গাড়িতে তুলেই বেঁধে ফেলা হয় চোখ মুখ হাত। চলতে শুরু করে গাড়িটি। এর মধ্যে গাড়ির ভেতর চলতে থাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল। এরপর কোনো ভবনের সামনে গিয়ে থামানো হয় গাড়িটি। চোখ বাঁধা অবস্থাতেই নামানো হয় তাকে। ওই ভবনেরই একটি কক্ষে নিয়ে প্রথমেই খোলা হয় তার বোরকাটি। এরপর কেড়ে নেয়া হয় ওড়না। তারপর শুরু হয় অসংখ্য পুরুষের অট্ট হাসি। বলতে থাকে ‘এমন পর্দাই করছে, এখন সব পর্দা ছুটে গেছে...।

শুধু তাই নয়, ওই নারীকে যে রুমে রাখা হয়েছিল সেটি ছিল রাস্তার (বাহিনীর লোকদের চলাচলের রাস্তা) পাশের একটি রুম। খোলা রাখা হয়েছিল জানালাটি। যাতে করে ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচলরত পুরুষরা তাকে দেখতে পারে। তিনি কখন কি করছেন, কিভাবে থাকছেন সব কিছু। এমনকি নারীদের অতিগোপনীয় বিষয়গুলোকেও আর গোপন রাখেনি।

সরকারের জাতীয় গুমসংক্রান্ত কমিশনে দেয়া এক নারীর অভিযোগ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া কমিশনের দ্বিতীয় প্রতিবেদনে ওই নারীর বক্তব্য এভাবে তুলে ধরা হয় ‘হাত দুই দিকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখছে, ওরা আমাদের ওড়না নিছিল। আমার গায়ে ওড়না ছিল না। আর যেহেতু জানালার দিকে মুখ করা ছিল, অহরহ পুরুষ মানুষ যে কতজন আসছে দেখার জন্য এটা বলার বাইরে। মানে তারা মজা পাচ্ছে। বলাবলি করতেছিল যে এমন পর্দা করছে, এখন সব পর্দা ছুটে গেছে’।

জানা গেছে, ২৪ দিনের সেই বন্দী জীবন ছিল ওই নারীর জন্য মৃত্যু যন্ত্রণার মতো। বাইরে নিজেকে যতটা পর্দার মধ্যে রেখে জীবনযাপন করেছেন, সেখানে ছিল তার সম্পূর্ণ উল্টো। বোরকা তো দূরের কথা প্রকাশ্যে পুরুষের সামনে তাকে ওড়না ছাড়া রাখা হয়েছিল। হাত-পা বাঁধা বা খোলার সময় তাদের স্পর্শ করা হয়েছে। চালানো হয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্মম নির্যাতন। লজ্জায় মনে হচ্ছিল তিনি মাটির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা সেখানে একটি গ্রুপ ছিল যারা নারীদের পর্দার ঘোর বিরোধী। পর্দা নিয়েই তাদের যত কটূক্তি।

জানা যায়, বন্দী থাকা অবস্থায় যখন তার পিরিয়ড শুরু হয় তখন ছিল আরো ভয়াবহ লজ্জা ও কষ্টের। যন্ত্রণায় সব লজ্জার কথা ভুলে গিয়ে যখন তাদের কাছে প্যাড চাওয়া হয়েছিল তখনো হাসির রোল পড়ে গিয়েছিল। চার দিক থেকে অসংখ্য পুরুষ অট্ট হাসিতে ফেটে পড়তে থাকে। তখন নিজেকে কি অসহায় মনে হচ্ছিল তা কাউকে বোঝানোর মতো না। শুধু কান্নায় দু’চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু বের হচ্ছিল।

কমিশনের রিপোর্টে আরো বলা হয় ‘আমার পিরিয়ড হওয়ার ডেট ছিল অনেক লেটে। কিন্তু যে টর্চার করে তাতে আমি এত অসুস্থ হয়ে যাই যে সাথে সাথে আমার পিরিয়ড আরম্ভ হয়ে যায়। তারপর উনাদের বলি যে আমার তো প্যাড লাগবে। এটা নিয়ে অনেক হাসা-হাসি করে ওরা’।

তবে ঘটনার তদন্ত এবং ভুক্তভোগীর নিরাপত্তার কারণে তার নাম পরিচয় উল্লেখ করেনি কমিশন। শুধু জানিয়েছে ২০১৮ সালে পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য ২৫ বছর বয়সী এই নারীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর ২৪ দিন নিখোঁজ ছিলেন ওই নারী। তার বর্ণনায় নারীত্বকে কেন্দ্র করে নারী বন্দীদের জন্য বিশেষ অপমান ও সহিংসতার বর্ণনা বেরিয়ে এসেছে।