Image description

খুলনা মেট্রোপলিপটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবিতে চলমান আন্দোলন ঘিরে অস্থিরতায় ভুগছে খুলনা শহর। পুলিশের উপপরিদর্শক সুকান্ত দাশকে ছেড়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া আন্দোলন এখন পুলিশ কমিশনারের অপসারণের দাবিতে ঠেকেছে। ছাত্র-জনতার শুরু করা এই আন্দোলনে নিয়েছে নতুন মোড়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ আন্দোলন থেকে সরে এলেও অন্য অংশ জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবি নিয়ে আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছেন। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী, ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মীরাও অংশগ্রহণ করছেন।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) মারধর করে এসআই সুকান্তকে খানজাহান আলী থানা পুলিশের কাছে তুলে দেন ফুলবাড়ি গেট এলাকার স্থানীয়রা। কিন্তু রাতেই তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। সুকান্ত দাশকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বুধবার (২৫ জুন) দুপুর থেকে কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। এক পর্যায়ে তারা কেএমপির সদর দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের যৌথ চেষ্টায় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে সুকান্ত দাশকে গ্রেফতার করা হয়। তবে আন্দোলনকারীরা পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চলমান রাখেন।

‘খুলনার আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই খারাপ। নগরীতে ৫ আগস্টের পর একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ কমিশনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন নগরবাসীর দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’

এরপর শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় খুলনা প্রেসক্লাবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি পুলিশ কমিশনারের অপসারণের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবগত করবেন বলে আশ্বাস দেন আন্দোলনকারীদের। কিন্তু পুলিশ কমিশনারের অপসারণ না হলে আন্দোলনকারীরা রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দেন। যার ধারাবাহিকতায় সোমবার (৩০ জুন) বিকেল ৪টায় কেএমপির সামনের সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপেই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়া হয়। খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পেছনে কেএমপির কমিশনার দায়ী। কেএমপির আওতাধীন বিভিন্ন থানায় এখনো দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে, যাদের শেল্টারে অনেক অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। বিষয়গুলো ওপেন সিক্রেট হলেও কারও মুখ খোলার সাহস নেই। অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে হুমকি পর্যন্ত খেতে হয়। পুলিশ সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও খুলনায় আওয়ামী লীগের মিছিল হয়েছে। খুলনায় প্রতিনিয়ত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এগুলোর দায় পুলিশ কমিশনার এড়াতে পারেন না।

 

‘কোনো ব্যক্তিকে টিকিয়ে রাখার জন্য বা নামানোর জন্য আমরা আন্দোলন শুরু করিনি। এসআই সুকান্তকে গ্রেফতারের পর আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য সফল হওয়ায় আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা বলেন, খুলনার আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই খারাপ। নগরীতে ৫ আগস্টের পর একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ কমিশনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন নগরবাসীর দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু একটা মহল পুলিশ কমিশনারকে টিকিয়ে রাখতে আন্দোলনকে ভিন্নদিকে প্রভাবিত করতেই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলছে। যা মোটেই কাম্য না।

এদিকে জুলাই মাস উপলক্ষে ৩৬ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার লিখিত বক্তব্যে বলেন, কোনো ব্যক্তিকে টিকিয়ে রাখার জন্য বা নামানোর জন্য আমরা আন্দোলন শুরু করিনি। এসআই সুকান্তকে গ্রেফতারের পর আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য সফল হওয়ায় আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসি। তবে উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, এখনো আমাদের গুটি কয়েক সহযোদ্ধাকে ব্যবহার করে একটি বিশেষ মহল উক্ত আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে যার দায়ভার কোনোভাবেই জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীরা গ্রহণ করবেন না।

‘এই আন্দোলন সাধারণ ছাত্র জনতার আন্দোলন। এটা কোনো দলীয় আন্দোলন না। দলীয় আন্দোলনের প্রয়োজন হলে আমরা দল থেকেই দাবি তুলবো।’

অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলা শাখার মুখ্য সংগঠক আজিম ইসলাম জিম বলেন, আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। এ আন্দোলনে সাধারণ ছাত্র-জনতা অংশ নিয়েছেন। খুলনা নগরীতে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে নগরবাসী আজ আতঙ্কিত। সেইসঙ্গে সুকান্ত দাশের মতো চিহ্নিত একজন আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে জনতা পুলিশের কাছে সোপর্দ করলেও তাকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় নগরবাসী এই কমিশনারের ওপর আস্থা হারিয়েছে।

 

উত্তাল খুলনায় কোন পথে যাচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলন?

তিনি আরও বলেন, একটি মহল ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করে পুলিশ কমিশনারকে টিকিয়ে রেখে নিজেদের ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তবে আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও খুলনা জেলার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদধারী একজনকে দেখতে পেয়েছি। বিষয়টি আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা আশা করছি কেন্দ্রীয় কমিটি অনতিবিলম্বে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।

তিনি আরও বলেন, অযোগ্য, অথর্ব পুলিশ কমিশনারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। এছাড়া আমাদের আন্দোলনে সর্বশ্রেণির মানুষ দলমত নির্বিশেষে অংশ নিয়েছেন। যা নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার।

খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাজহারুল ইসলাম রাসেল বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও ছাত্র। তারা সাধারণ ছাত্র হিসেবেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। এখানে ছাত্রদলের ব্যানারে কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে আন্দোলন হচ্ছে না।

তিনি বলেন, সুকান্ত দাশ একজন চিহ্নিত নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্য। তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে সাধারণ জনতা। পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপ তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একদিকে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, অন্যদিকে পুলিশ কমিশনারের এমন আচরণে নগরবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নগরবাসীর পালস বুঝতে পেরেই আন্দোলন চলমান রেখেছেন।

 

খুলনা মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম বলেন, এই আন্দোলন সাধারণ ছাত্র জনতার আন্দোলন। এটা কোনো দলীয় আন্দোলন না। দলীয় আন্দোলনের প্রয়োজন হলে আমরা দল থেকেই দাবি তুলবো।