Image description

ঢাকার হাতিরঝিলে যৌথবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহভাজনদের গাড়ি-মোটরসাইকেল থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছিল, জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী দুই তরুণী সেখানে এলে হেলমেট না থাকায় তাদেরও থামান দায়িত্বরতরা।

ট্রাফিক আইন ভাঙার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাম্প্রতিক এই ঘটনাটির পুরো প্রক্রিয়া ভিডিও করতে থাকেন উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক।

দুই তরুণী বার বার হাতজোড় করে ভিডিও করতে বারণ করলেও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সেই সব ফুটেজের বদৌলতে এটিও জানা যায়, তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না।

তাদের একজন দুই হাতে বার বার মুখ আড়াল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এবং মোটরসাইকেল থেকে নেমে কিছুটা দূরে সরার চেষ্টা করেন।

তাতেও ক্ষান্ত হননি উপস্থিত ক্যামেরাধারীরা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এড়িয়ে পিছু নেন। ‘এত রাতে কেন বাইরে’, এ ধরনের প্রশ্নও করছিলেন কেউ কেউ।

‘আপত্তিকর’ নানা শিরোনামে প্রকাশিত সেসব ভিডিও সংবাদমাধ্যম ছাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

প্রশ্ন উঠেছে, শুধুমাত্র ট্রাফিক আইন ভাঙার দায়ে কারো ‘জোর পূর্বক’ করা ভিডিও সংবাদমাধ্যম চাইলেই প্রকাশ করতে পারে কি না?

একইভাবে বিভিন্ন এলাকায় রাতের তল্লাশি চৌকিগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কারও ব্যক্তিগত গাড়ি বা ব্যাগ তল্লাশি করছেন, সেসব দেখা যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে।

বিশেষ করে, সংবাদমাধ্যমগুলোর ফেইসবুক পেইজে প্রকাশিত ভিডিওতে তল্লাশি কার্যক্রমে কারও ব্যাগে বা গাড়িতে থাকা ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের করা প্রশ্নের ‘ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর’ উত্তরও আর অপ্রকাশিত থাকছে না।

ট্রাফিক আইন ভাঙার দায়ে ক্যামেরা তাক করে সাংবাদিকদের এমন ‘হেনস্তায়’ ক্ষোভ ঝেড়েছেন সংবাদমাধ্যম সংশ্লিষ্টরাই।

তারা মনে করছেন, ক্যামেরা হাতে নিয়ে সাংবাদিকতার নামে এ ধরনের ‘মোরাল পুলিশিংয়ের’ মাধ্যমে ‘ভিউ বাণিজ্যের’ প্রতিযোগিতায় সংবাদমাধ্যম তার মূল জায়গা থেকে ‘সরে যাচ্ছে’।

তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ক্যামেরার সামনে ডেকে কাউকে তল্লাশি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কি আসলেই ‘আস্থা’ অর্জন করতে পারছেন?

১৩ জুন রাতে হাতিরঝিলের ওই ঘটনায় একটি সংবাদমাধ্যমের ফেইসবুকে প্রকাশ করা ভিডিওর শিরোনামে লেখা হয়, ‘গভীর রাতে হেলমেটবিহীন দুই নারী, চড়াও হলেন সাংবাদিকদের উপর’। যেখানে ওই দুই তরুণীকে ক্যামেরা তাক করে বার বার প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ‘গালি কেন দিলেন?’

জবাবে এক তরুণীকে মুখ ঢেকে বার বার বলতে শোনা যায়, “গালি দেই নাই ভাইয়া, আমি বলছি বাসায় প্রবলেম হবে, আপনারা এইগুলা দিয়া ভিডিও করতেছেন, দ্যাটস অল।

“আপনারা বার বার ফোকাস করতেছেন, আমরা মেয়ে মানুষ আমাদের বাসায় সমস্যা হবে।”

সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কোন আইন ভঙ্গ হচ্ছে কি-না কিংবা কোনোভাবে অপমান-অপদস্থ করার বিষয় তৈরি হচ্ছে কি-না বিষয়টি ‘গুরুত্ব দিয়ে’ দেখার কথা বলছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “উনারা যদি বাইক চলানোর সময় হেলমেট না পরেন, সেটা আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। সেটার জন্য ট্রাফিক আইন ভঙ্গ হলে ট্রাফিক আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি হওয়ার আছে, হবে। উনারা ট্রাফিক আইন অমান্যের জন্য অভিযুক্ত। কিন্তু উনাদের ব্যক্তিগত সম্মান যখন নষ্ট হচ্ছে তখন উনারা ভুক্তভোগী।”

এজন্য ভুক্তভোগীর ছবি-ভিডিও যারা প্রচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা চাইলে আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে মত এই আইনজীবীর।

‘গজিয়ে ওঠা’ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমের পাশাপাশি প্রধান সারির সংবাদমাধ্যমের এমন আচরণকে ‘অপেশাদারত্ব’ ও ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান।

 

হাতিরঝিলে তল্লাশি চৌকিতে সাংবাদিকদের সামনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরে যান দুই তরুণী। তারপরও তাদের পিছু নেন সাংবাদিকরা। ছবিটি ফেইসবুকে ছড়িয়েছে।

হাতিরঝিলে তল্লাশি চৌকিতে সাংবাদিকদের সামনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরে যান দুই তরুণী। তারপরও তাদের পিছু নেন সাংবাদিকরা। ছবিটি ফেইসবুকে ছড়িয়েছে।

 

তিনি বলেন, “সাংবাদিকতো সাংবাদিক, উনি তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য নন। উনার কাজের একটা পরিধি আছে, কাজ করার একটা পদ্ধতি আছে। আইন তো উনিও নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না।

“এগুলো খুবই অবান্তর। এগুলো সাংবাদিকতা পেশাকে অমর্যাদাকর অবস্থায় ফেলে দেয়। এ ধরনের নেতিবাচক চর্চা সঠিক সাংবাদিকতার ভাবমূর্তি নিয়ে টান দেয়। মোটাদাগে সাংবাদিকতার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়।”

তল্লাশিতে যেভাবে যোগ হয় ক্যামেরা

বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সাংবাদিকদের যোগাযোগের কিছু অভ্যন্তরীণ গ্রুপ রয়েছে। যেখানে সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন পেশাগত তথ্য আদান-প্রদান করেন। সেই গ্রুপগুলোর মাধ্যমেই এসব তল্লাশি চৌকি পরিচালনার খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে। যেগুলো বিভিন্ন সময় বাহিনীগুলো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে পাঠানো হয়।

তবে বেশিরভাগ আমন্ত্রণ আসে ব্যক্তিপর্যায়ে বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার কাছ থেকে। যাদের নেতৃত্বে তল্লাশি চৌকিগুলো পরিচালিত হয়, সাধারণত তারাই সংবাদমাধ্যমে প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন।

গত ১২ জুন এক সেনাকর্মকর্তার ফোন নম্বরসহ সংবাদমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, “রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন (বিটিভির অপজিটে) মন্দিরের সামনে হাতিরঝিলের প্রবেশ পথে আজ রাত সাড়ে ১১টায় বিশেষ চেকপোস্টের মাধ্যমে তল্লাশি করবে সেনাবাহিনী।”

একইভাবে আরেক এলাকার দায়িত্বরত কর্মকর্তার পাঠানো বার্তায় লেখা হয়, “আজ রাত ০০০১ ঘটিকায় মিরপুর আর্মি ক্যাম্প ও মিরপুর মডেল থানা কর্তৃক মিরপুর ১-এ (প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এর সামনে) একটি যৌথ চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। মিডিয়া কভারেজের জন্য আপনাদের উপস্থিতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হলো।”

এরপর সেসব বার্তা সাংবাদিকদের গ্রুপগুলো ঘুরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম কর্মীদের পাশাপাশি ‘ডিজিটাল মাধ্যম’ ও ‘ইউটিউবাররা’ বুম, মোবাইল নিয়ে হাজির হয়ে যান ঘটনাস্থলে।

সাধারণত তারাই টানা সেসব তল্লাশি কার্যক্রমগুলো ভিডিও করে নিজেদের মাধ্যমগুলোতে প্রচার করেন, আবার কাউকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করতেও দেখা যায়।

এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিপোর ডটকম পায়নি। তবে এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কখনো কখনো মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এ ধরনের কার্যক্রমকে প্রচারের আহ্বান জানিয়ে থাকি।

“কিন্তু সাংবাদিকরা তাদের মাধ্যমে কতটা-কীভাবে প্রচার করবেন, সেটির ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই তাদের নিয়ম-নীতি রয়েছে। তারা সেটি এড়িয়ে গেলে আমাদের কী করার থাকে?”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনে ‘হেনস্তার’ এমন ঘটনার ক্ষেত্রে বাহিনী দায় এড়াতে পারেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আইন মেনেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। তল্লাশি চৌকির মত বিভিন্ন সময় অভিযানে আমাদের কার্যক্রম নিয়েই আমরা ব্যস্ত থাকি। এর মধ্যে কোন সাংবাদিক কতটা প্রচার করবেন সেটি নিশ্চয়ই আমরা নির্ধারণ করে দিতে পারি না।”

 

ঢাকার মিরপুরে তাক করা ক্যামেরার সামনে তল্লাশি। 

ঢাকার মিরপুরে তাক করা ক্যামেরার সামনে তল্লাশি। 

 

আইনে কী বলা আছে?

২০১৯ সালের ২৯ অগাস্ট বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে ‘শর্তসাপেক্ষে’ জামিন দিয়ে হাই কোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের সংবাদমাধ্যমে হাজিরের বিষয়ে নিয়মনীতি না মানার কথা বলা হয়েছিল।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিল, “ইদানিং প্রায়শ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সংগঠিত আলোচিত ঘটনার তদন্তকালে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের বিষয়ে এবং তদন্ত সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করা হয়ে থাকে। গ্রেপ্তারকৃত সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তদের কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়, যা অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে। যদিওবা এ বিষয়ে অত্র আদালতে একটি রায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।”

“অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত বিষয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এ কথা আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ বলা যাবে না সে অপরাধী বা অপরাধ করেছে।”

২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর হাই কোর্ট গ্রেপ্তার বা সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হওয়া কোনো ব্যক্তিকে সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির না করার নির্দেশ দেয়৷ সে সময় আদালত একটি রুলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চায়৷

যেখানে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারদের প্রচারণার বিষয়ে আদালত এমন নির্দেশনা রয়েছে, সেখানে সড়কে ট্রাফিক আইন ভাঙাসহ সন্দেহভাজনদের তল্লাশি সংবাদমাধ্যমে প্রচার কতটা যুক্তিসংগত?

অধ্যাপক মফিজুর রহমান বলেন, “আইনগতভাবে অপরাধী হলে কেউ শাস্তি পেতেই পারে। সংবাদমাধ্যমে এভাবে প্রদর্শন করে যদি কাউকে হেনস্তা করা হয়, এটাও অন্যায়।”

যেভাবে আইন ‘ভাঙছেন’ সাংবাদিকরা

সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে, “রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের প্রবেশ, তল্লাশি ও আটক হইতে স্বীয় গৃহে নিরাপত্তালাভের অধিকার থাকিবে এবং চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতারক্ষার অধিকার থাকিবে।”

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৯ ধারাটি মানহানির সংজ্ঞা প্রদান করে। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কেউ অন্য কোনো ব্যক্তির মান-সম্মান বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে লিখিত বা মৌখিক কোনো মন্তব্য করে বা কোনো চিহ্ন বা দৃশ্যমান বস্তু দ্বারা এমন কিছু বোঝায়, যা ওই ব্যক্তির জন্য অপমানজনক বা তার মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করে, তবে তা মানহানি হিসেবে গণ্য হবে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫০৫ ধারা মূলত জনমনে আতঙ্ক, বিভ্রান্তি বা বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী কোনো বিবৃতি বা সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে আলোকপাত করে।

এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বিবৃতি বা সংবাদ এমনভাবে প্রচার করে যা জনমনে আতঙ্ক, বিভ্রান্তি বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো বিবৃতি বা সংবাদ প্রচার করে যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে, তবে সেটি এই ধারার অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

চলছে সমালোচনা

এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ফেইসবুক পেইজে প্রকাশের পর থেকে বিষয়গুলো নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

সাংবাদিক রাফসান জানি নিজের ফেইসবুকে লিখেছেন, “কয়েকদিন ধরেই চলছে চেকপোস্ট সাংবাদিকতার জোয়ার, এর শেষ কোথায়?”

জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি একে বলি ‘চেকপোস্ট সাংবাদিকতা’। এই ধরনের সাংবাদিকতায় ‘সচেতনতা’ তৈরির চেয়ে বরং ‘সেনসেশন’ তৈরির প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

“কেউ আইন অমান্য করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত—তবে ব্যক্তিগত মর্যাদাহানি করে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে তাকে সামাজিকভাবে ‘শাস্তি’ দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

“এ বিষয়ে সাংবাদিকদের যেমন নৈতিকভাবে সচেতন হওয়া জরুরি, তেমনি তল্লাশিতে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও উচিত-মিডিয়ার উপস্থিতিতে ব্যক্তির গোপনীয়তা ও মর্যাদা রক্ষায় সতর্ক থাকা।”

 

ঢাকার আজিমপুর এলাকায় ২১ মার্চ যৌথবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে মোটরসাইকেল চালকদের কাগজপত্র যাছাই করা হয়। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

ঢাকার আজিমপুর এলাকায় ২১ মার্চ যৌথবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে মোটরসাইকেল চালকদের কাগজপত্র যাছাই করা হয়। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায় কতটা?

তল্লাশি চৌকিতে এ ধরনের হেনস্তা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও ‘দায়’ দেখছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

হাতিরঝিলের ওই দুই তরুণীর ঘটনার বিষয়ে তার ভাষ্য, “তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব দুই দিক থেকেই, সাংবাদিকের যেমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদেরও তেমনটাই। সেদিন পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা ছিলেন, তারা উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। নারীকে যেন হেনস্তার শিকার হতে না হয়।

“তারা হেলমেট না পরার কারণে যে অপরাধটা হয়েছে সে কারণে তাদের শাস্তি, অর্থদণ্ড, যা যা করার আছে, করে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া ছিল ওনাদের কাজ। সেখানে ওনাদের ব্যর্থতা তো রয়েছেই।”

আর তল্লাশি চৌকিতে সাংবাদিকদের উপস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “সবাই সংবাদমাধ্যমে নায়ক হতে চায়। মিডিয়া ট্রায়াল এখন কী বন্ধ হয়েছে? এখনও সে অর্থে হয়নি। সংবাদমাধ্যমে যে সমস্ত ঘটনা আমরা দেখি মাঝে মধ্যে, তাতে তো আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি রয়ে গেছে অনেক ক্ষেত্রে।”

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি ভেবে দেখবার বিষয় যে, কেন এরকমটা হচ্ছে? একেবারেই গোপনীয়তা যদি প্রকাশ্য হয়ে চলে আসে সামনে, সেটা ঠিক হবে না। কারোর গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হোক, এটি আমরা সমর্থন করি না। এটা হওয়ার কথা না, বিষয়টির যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, অবশ্যই আমরা দেখব।”