
বর্তমানে দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য রয়েছে ৬৯টি প্রতীক, এ সংখ্যা শতাধিক ছাড়াবে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী প্রতীক তালিকা নিয়ে শিগগির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। সেজন্য ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় সংশোধন আনা হবে।
তার ফলে নিবন্ধন ফিরে পাওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক যেমন তালিকায় যুক্ত হবে; তেমনি দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য অন্তত ৩১টি নতুন প্রতীক সংরক্ষণ করা হতে পারে।
রোববার শেষ হয়েছে দল নিবন্ধনের আবেদন। এবার অন্তত ১৪৭টি দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে।
সংসদ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ৬৯টি প্রতীক রয়েছে বিধিমালায়।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংসদ নির্বাচনের জন্য সব মিলিয়ে শতাধিক প্রতীক রাখা হতে পারে। শিগগির বাকি প্রতীকগুলো চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব আমরা।”
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পর তাদের প্রতীক নিয়ে ফুলকোর্ট সভার সিদ্ধান্তে ২০১৭ সালে সংরক্ষিত তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি বাদ দেওয়া হয়েছিল।

গত ১ জুন আদালতের আদেশে জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পর ৪ জুন কমিশন সভায় দলটিকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকও ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক এবার সংশোধিত বিধিমালায় যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ।
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হলেও সংক্ষিত তালিকায় ‘নৌকা’ প্রতীক থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “দলটির নিবন্ধন স্থগিত হয়েছে, প্রতীক সংরক্ষিত তালিকায় থাকতে তো অসুবিধা নেই।”
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫০টি। বিদ্যমান নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় এখন ৪৪টি দলের প্রতীক রয়েছে।
৫ অগাস্টের পরে নিবন্ধন পাওয়া দলের জন্য রকেট, ফুলকপি, মাথাল, কেটলি, ট্রাক ও ঈগল প্রতীক দেওয়া হলেও সেগুলো এখনো সংরক্ষিত তালিকায় যুক্ত হয়নি; তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত প্রতীকে সেগুলো রয়েছে।

শাপলা নিয়ে সিদ্ধান্ত ‘শিগগিরই’
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক কমিটি-এনসিপি নিবন্ধনের আবেদন করেছে। দলটির পক্ষ থেকে শাপলা, কলম ও মোবাইল প্রতীক হিসেবে চাওয়া হলেও অগ্রাধিকারে রয়েছে ‘শাপলা’।
তবে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকে শাপলা থাকায় সেটি দলীয় প্রতীক হিসেবে সংরক্ষণ করা যাবে কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক রোববার বলেছেন, ‘ফ্ল্যাগ অ্যান্ড এমব্লেম অর্ডার’ নামে একটি আইন আছে। সেখানে বলা আছে, জাতীয় প্রতীক হবে শাপলা। অতএব, যেহেতু জাতীয় প্রতীক আইন করে বলা হয়েছে শাপলা, এটা অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এটা শুধু দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা যাবে।
আর ইসির সংরক্ষিত তালিকায় এ প্রতীকটি বরাদ্দও নেই।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বলেন, জাতীয় প্রতীক কেবল শাপলা নয়। শাপলা, ধানের শীষ, তারকা-এগুলো মিলিয়ে জাতীয় প্রতীক। শাপলা প্রতীক পেতে আইনগত কোনো বাধা নেই। ইসি তাদের প্রতি বৈষম্য করবে না বলেই তাদের প্রত্যাশা।
বিধিমালায় শাপলা প্রতীক যুক্ত হচ্ছে কি হচ্ছে না-তা কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে চলতি সপ্তাহে।
কোনো দল নিবন্ধন পেলে তার বিপরীতে প্রতীকও সংরক্ষণ করতে হয়। দল আবেদন করার সময় নিজেদের অনুকূলে পছন্দের প্রতীক চায়।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “শাপলা প্রতীকের বিষয়টি বিবেচনায় ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিগগির সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।”
এবার সংশোধিত বিধিমালায় দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য নতুন নতুন আরও প্রতীক যুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
যেভাবে প্রতীক বরাদ্দ হয়
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী জানান, স্বাধীনতার পর থেকে অনেক দল তাদের নির্ধারিত প্রতীকে নির্বাচন করে আসছে। ২০০৮ সালে দলের নিবন্ধন প্রথা চালু হওয়ার পর সেসব দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সময় সংরক্ষিত তালিকা থেকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু নতুন দল যখন আবেদন করেছে, তারা ইসির সংক্ষিত তালিকা থেকে পছন্দের প্রতীক চেয়েই আবেদন করে থাকে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক এ সদস্য বলেন, “নতুন দলগুলো ইসির সংরক্ষিত তালিকা থেকেই প্রতীক বরাদ্দ চাইবে। যদি না থাকে তাহলে দলের পছন্দসই প্রতীক দেওয়ার সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে ইসিকে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে নতুন প্রতীক যুক্ত করতে হয়। সংশোধিত তালিকা থেকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে থাকে।”
এবার ১৪৭টি দল নিবন্ধন আবেদন করেছে, যাচাই বাছাই শেষে যারা নিবন্ধন শর্ত পূরণ করবে তাদের নিবন্ধন দেবে ইসি।
সাধারণত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে একই প্রতীক কয়েকজন দাবি করলে লটারি করা হয়। দলের ক্ষেত্রে এমনটি করার সুযোগ নেই।
এনসিপির শাপলা প্রতীক চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেসমিন টুলী বলেন, “এটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে; প্রতীকটি তালিকাভূক্ত হলে দিতে তো আর বাধা থাকবে না। জাতীয় ফল কাঁঠাল, জাতীয় পশু বাঘ, দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল; সেক্ষেত্রে জাতীয় ফুলকে কোনো দলের জন্য বরাদ্দ দেবে কিনা তা কমিশনের বিবেচনায় থাকবে। এর আগে অবশ্যই প্রতীকগুলো বিধিমালায় যুক্ত করতে হবে।”
নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, জাতীয় প্রতীকে শুধু শাপলা নয়, আরও অনেক বিষয় রয়েছে।
“এখন দলের জন্য প্রতীক বরাদ্দ চেয়েছে শাপলা। অনেকগুলো দল নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন করেছে, সব কিছু যাচাই-বাছাই শেষে সব শর্ত পূরণের পর দল নিবন্ধন পেলেই প্রতীক পাবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচন কমিশন।”