Image description

বন্ধ হচ্ছে না মবের ঘটনা। সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মব বন্ধে নানা উদ্যোগ নিলেও এখনো বিভিন্ন স্থানে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। সর্বশেষ মবের শিকার হয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তাকে আটকের পর লাঞ্ছিত করার ঘটনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। 

ঘটেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই উনার ওপর হামলা হয়েছে। এজন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত করে দেখা হবে কারা এর সঙ্গে জড়িত। যদি কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কোনো অপরাধী থাকে, তাহলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবেন। বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কোনো অবস্থাতেই হাতে আইন তুলে নেয়া যাবে না।

মানবাধিকারকর্মী নুর খান লিটন মানবজমিনকে বলেন, যত বড়ই অপরাধীই হোক তার বিচার আইনের মাধ্যমে হওয়া উচিত। কিন্তু কোনোভাবে মব সন্ত্রাসের মধ্যদিয়ে কোনো ব্যক্তিকে নির্যাতন, নিগৃহীত করা এবং অপদস্ত করা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এ দায় সরকার এড়াতে পারে না। দেশে একটা অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য একটি গ্রুপ এ ধরনের মব সন্ত্রাস করে যাচ্ছে। যারা ফায়দা লুটতে চায়, নতুন রাজনীতি চিন্তা করে তাদের মধ্য থেকে হটকারী অংশ এটা করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, মব ছোঁয়াচে অসুখের মতো। এটা বন্ধ করতে না পারলে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সংঘাত সহিংসতার ঘটনা তৈরি হয় এবং এসব ঘটনায় যারা সংখ্যার বিচারে শক্তিশালী হয়, তারা দুর্বলদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখন যে মব হচ্ছে সেগুলো একেবারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ও প্রমাণও থাকতে পারে। সেটি আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে। এখন মানুষ যদি নিজেই আইন তুলে নেয়, তাহলে দুই পক্ষের মধ্যে নৈতিক কোনো ব্যবধান থাকবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসলে রাজনৈতিক মামলায় বিচার হয় না। হয় মীমাংসা। আর মীমাংসা হয় বলে কেউ আস্থা রাখতে পারে না। তাই অনেকে চিন্তা করে মামলা হয়েছে কয়েকদিন জেল খেটে বের হয়ে যাবে- এটাই কি তার কৃতকর্মের বিচার। এর থেকে বেশি শাস্তি তার প্রাপ্য। তখন আইনের শাসনের প্রতি মানুষের অনাস্থা চলে আসে। নিজেই শাস্তি দিতে গিয়ে অপরাধ করে। তাই মবের বিরুদ্ধে আওয়াজটা হতে হবে জোরালো আওয়াজ।

সিনিয়র আইনজীবী শাহদিন মালিক মানবজমিনকে বলেন, একটা মব জাস্টিসের ঘটনায় অনেকগুলো অপরাধ সংঘটিত হয়। কারও বাসা-বাড়িতে অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ, ভাঙচুর, মারধর করা, জোর করে নিয়ে যাওয়া সবই বিভিন্ন ধারার অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে তারা এসব অপরাধমূলক কাজ বেশি বেশি করছে। কারও বিরুদ্ধে যদি ফৌজদারি অভিযোগ থাকে, তবে থানায় গিয়ে এজাহার করবে। এজাহারের প্রেক্ষিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করবে। সাবেক সিইসি’র ঘটনায় বিএনপি মামলা করেছে। পুলিশ হয়তো তাকে গ্রেপ্তার করতো। কিন্তু তার আগেই মব জাস্টিস করা হয়েছে তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় পুলিশের তৎপরতা না থাকায় মানুষ এটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে না। আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পরে কয়েক মাস হয়তো দেশ পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা ছিল। পুলিশ বাহিনীও সঠিক অবস্থায় ছিল না। কিন্তু ১০ মাস পরেও এসব ঘটনা ঘটছে। এটা সরকারের একটা অন্যতম ব্যর্থতা। এ রকম হলে যে কারও বাসায় যে কেউ সংগঠিত হয়ে বিনা কারণে ঢুকে যেতে পারে। একজন একটা কথা বললো কিন্তু সেটা কারও পছন্দ হলো না। কিন্তু এর জন্য জোর করে কারও বাসায় প্রবেশ ভাঙচুর ও কাউকে তুলে নেয়া যাবে না।